হিল ভয়েস, ১ জুন ২০২৩, বিশেষ প্রতিবেদক: আজ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) কর্তৃক প্রকাশিত ও প্রচারিত পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর ২০২৩ সালের (জানুয়ারি-জুন) অর্ধ-বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিগত ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন ২০২৩) পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা বাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, সেনা-মদদপুষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ, সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠী, মুসলিম বাঙালি সেটেলার ও ভূমিদস্যুদের দ্বারা সংঘটিত ১১৩টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় ১,৩৯২ জন জুম্ম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে, ৮০টি বাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের শিকার হয়েছে এবং এলজিইডি কর্তৃক ৩০ পরিবারের ফসলি জমি নষ্ট করা হয়েছে।
পিসিজেএসএস এর সহ তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা স্বাক্ষরিত এই মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক প্রতিবেদনে পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক ও ভঙ্গুর অবস্থায় উপনীত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, বিশেষ করে দীর্ঘ ২৫ বছরেও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়া, চুক্তি স্বাক্ষরকারী আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন সরকার একনাগাড়ে প্রায় ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকেও সরকার কর্তৃক ২০১৪ সাল থেকে চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা, উপরন্তু একের পর এক চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রম বাস্তবায়নের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে অত্যন্ত শ্বাসরুদ্ধকর ও বিস্ফোরন্মুখ।
জনসংহতি সমিতির পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর প্রতিবেদনটির সংক্ষিপ্ত রূপ তুলে ধরা হলঃ
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি
পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর ২০২৩ সালের (জানুয়ারি-জুন) অর্ধ-বার্ষিক প্রতিবেদন
পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক ও ভঙ্গুর অবস্থায় উপনীত হয়েছে। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি দীর্ঘ ২৫ বছরেও যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হওয়া এবং চুক্তি স্বাক্ষরকারী আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন সরকার একনাগাড়ে সাড়ে ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকেও সরকার কর্তৃক ২০১৪ সাল থেকে চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা, উপরন্তু একের পর এক চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রম বাস্তবায়নের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে অত্যন্ত শ্বাসরুদ্ধকর ও বিস্ফোরন্মুখ। বলতে গেলে, চুক্তির পূর্ববর্তী সময়ের মতই বর্তমানেও জুম্মদের উপর একপ্রকার অবাধে চলছে আগ্রাসন, ভূমি বেদখল, স্বভূমি থেকে উচ্ছেদ, সামরিক দমন-পীড়ন-অভিযান, হত্যা, গুম, মিথ্যা মামলা ও জেল-জুলুম, সরকারি পৃষ্টপোষকতায় সেটেলারদের গুচ্ছগ্রাম সম্প্রসারণ, অনুপ্রবেশ, জুম্মদের সংখ্যালঘুকরণ, সাম্প্রদায়িক হামলা, নারীর উপর সহিংসতা ইত্যাদি মানবতাবিরোধী ও জুম্মদের জাতিগতভাবে বিলুপ্তকরণের প্রক্রিয়া।
পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে যেখানে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশেষ শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও জুম্ম অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করে জুম্মসহ স্থায়ী অধিবাসীদের ভূমি অধিকার নিশ্চিতকরণ, সকল অস্থায়ী সামরিক ক্যাম্প প্রত্যাহারসহ ‘অপারেশন উত্তরণ’ নামক সেনাশাসনের অবসান, ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থী ও আভ্যন্তরীণ জুম্ম উদ্বাস্তুদের স্ব স্ব ভূমিতে পুনর্বাসন, স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠান, বিশেষ শাসনব্যবস্থার মাধ্যমে পার্বত্য এলাকার সাধারণ প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা ও সকল উন্নয়ন সমন্বয়, তত্ত্বাবধান ও পরিচালনা করার কথা থাকলেও সেখানে এর কোনো কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি।
সম্প্রতি ১৭-২৮ এপ্রিল ২০২৩, নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘের সদরদপ্তরে জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক পার্মানেন্ট ফোরামের ২২তম অধিবেশনে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব মোসাম্মৎ হামিদা বেগম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা “চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৬৫টি ধারা সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হয়েছে” বলে জাতিসংঘের মতো বিশ্ব ফোরামে অসত্য তথ্য তুলে ধরেছিলেন। অথচ চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে মাত্র ২৫টি ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে, যা বিভিন্ন স্বাধীন ও নিরপেক্ষ গবেষক ও প্রতিষ্ঠানের গবেষণা ফলাফলেও উঠে এসেছে। ফলে চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহসহ এখনো চুক্তির দুই-তৃতীয়াংশ ধারা হয় আংশিক বাস্তবায়িত নয়তো সম্পূর্ণ অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকার ও জনসংহতি সমিতি এই ব্যবধান পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির মাধ্যমে নিরসন করা যেতে পারে বলে বিবেচনা করা যায়। উল্লেখ্য যে, জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক পার্মানেন্ট ফোরামের উক্ত অধিবেশনের গৃহীত রিপোর্টে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য অধিকতর প্রচেষ্টা চালানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে, পার্মানেন্ট ফোরামের উক্ত আহ্বানে চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার এখনো কোনো সাড়া প্রদান করেনি। অথচ জাতিসংঘের এধরনের আহ্বানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা সরকারের আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
গত ৯ মার্চ ২০২৩ কুয়াকাটায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির ৭ম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু পূর্ববর্তী সভাগুলির মতো ৭ম সভায় দেখা গেছে, চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির গৃহীত সিদ্ধান্তবলী বাস্তবায়নের কোন অগ্রগতি নেই। ফলে সরকারের অসহযোগিতা ও গড়িমসির কারণে বর্তমানে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটিও অথর্ব সংস্থায় পরিণত হতে বসেছে।
সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনী পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ও চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে নস্যাৎ করার লক্ষ্যে জনসংহতি সমিতির সকল স্তরের নেতাকর্মীসহ পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনরত জুম্ম জনগণকে ‘সন্ত্রাসী’, ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’, ‘অস্ত্রধারী দুর্বৃত্ত’, ‘চাঁদাবাজ’ ইত্যাদি তকমা দিয়ে অপরাধীকরণ করছে। তারই অংশ হিসেবে জনসংহতি সমিতিসহ পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে আন্দোলনরত অধিকারকর্মী ও জনগণকে সুপরিকল্পিতভাবে অবৈধ গ্রেফতার, বিচার-বহির্ভুত হত্যা, অস্ত্র গুঁজে দিয়ে আটক, মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে প্রেরণ, ওয়ারেন্ট ছাড়া ঘরবাড়ি তল্লাসী ও ঘরবাড়ির জিনিষপত্র তছনছ, মারধর, হয়রানি ইত্যাদি ফ্যাসীবাদী ও মানবাধিকার বিরোধী কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
অপরদিকে সরকার, বিশেষ করে সেনাবাহিনী ও ডিজিএফআইসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক জুম্মদের মধ্য থেকে সুবিধাবাদী, তাঁবেদার ও উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তিদের দিয়ে একের পর এক সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সৃষ্টি করে তাদেরকে চুক্তির পক্ষের জনগণ ও চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া হচ্ছে। সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনী একদিকে এসব সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে লালন-পালন করে ও মদদ দিয়ে এলাকায় ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে চলেছে, অপরদিকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সন্ত্রাসী দমনের নামে জনসংহতি সমিতিসহ জুম্ম জনগণের উপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে ও সন্ত্রাসী তৎপরতার দায়ভার জনসংহতি সমিতির উপর চাপিয়ে দিচ্ছে।
শুধু তাই নয়, সরকার ও রাষ্ট্রীয় বাহিনী নিজেরাই উন্নয়ন ও নিরাপত্তার নামে সীমান্ত সড়ক ও সংযোগ সড়ক নির্মাণ, বিলাসবহুল পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন, নতুন নতুন সেনা, বিজিবি ও এপিবিএন ক্যাম্প স্থাপন ও ক্যাম্প সম্প্রসারণ, রিজার্ভ ফরেষ্ট ঘোষণা, অস্থানীয়দের নিকট জুম্মদের প্রথাগত জুম ভূমি ও মৌজা ভূমি ইজারা প্রদান ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে জুম্মদের প্রথাগত ভূমি বেদখল করে তাদের চিরায়ত জায়গা-জমি থেকে উচ্ছেদ করছে ও অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিচ্ছে এবং এলাকার জীব-বৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ব্যাপক ধ্বংসসাধন করছে। চুক্তি অনুযায়ী যেখানে জুম্মদের চিরায়ত ভূমি ও ভূখন্ডের অধিকার নিশ্চিত হওয়ার কথা সেখানে তারা প্রতিনিয়ত চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী এসব উন্নয়ন আগ্রাসনের শিকারে পরিণত হচ্ছে।
এমতাবস্থায় জুম্ম জনগণের মানবাধিকারসহ রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ভূমি অধিকার আজ ক্রমাগত পদদলিত করা হচ্ছে এবং তাদের জাতীয় অস্তিত্ব ও জন্মভূমির অস্তিত্ব চরম হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। জুম্মদের স্বাভাবিক জীবনধারা আজ প্রায় স্তব্ধ হয়ে পড়েছে।
২০২৩ সালের জানুয়ারি হতে জুন মাস পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা বাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, সেনা-মদদপুষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ, সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠী, মুসলিম বাঙালি সেটেলার ও ভূমিদস্যুদের দ্বারা ১১৩টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে এবং এসব ঘটনায় ১,৩৯২ জন জুম্ম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়, ৮০টি বাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের শিকার হয় এবং এলজিইডি কর্তৃক ৩০ পরিবারের ফসলি জমি নষ্ট করা হয়।
(ক) প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর নিপীড়ন-নির্যাতন
২০২৩ সালের জানুয়ারি হতে জুন মাস পর্যন্ত ১১৩টি ঘটনার মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ৬০টি ঘটনা সংঘটিত হয়েছে এবং এতে ৩১১ জন মানবাধিকার শিকার হয়েছে। তার মধ্যে ১৮ জনকে গ্রেফতার, ১৫ জনকে সাময়িক আটক, ১২২ জনকে মারধর ও আহত, মিথ্যা মামলার শিকার ৪০ জন, ২৭টি গ্রামে সামরিক অভিযান পরিচালনা, ১০০ জনের অধিক নিরস্ত্র ও নিরীহ জুম্ম গ্রামবাসীকে কেএনএফের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের সময় মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার, ১৭ পরিবারকে উচ্ছেদ ও ৯ পরিবারকে উচ্ছেদের হুমকি, ২টি নতুন ক্যাম্প স্থাপনের উদ্যোগ ইত্যাদি ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।
(খ) সেনা-মদদপুষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তৎপরতা
২০২৩ সালের জানুয়ারি হতে জুন মাস পর্যন্ত ১১৩টি ঘটনার মধ্যে সেনা-মদদপুষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ কর্তৃক ২৯টি ঘটনা সংঘটিত হয়েছে এবং এতে ১,০৩০ জন ও ২৩টি গ্রামের অধিবাসীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে। তার মধ্যে ১৫ জনকে হত্যা, ৬ জনকে মারধর, ১১ জনকে অপহরণ, ২২ জনকে আটক, ২ জনকে আটক করার পর পুলিশের কাছে সোপর্দ, ১৯৫ বম ও মারমা পরিবারের প্রায় এক হাজার গ্রামবাসীদের গ্রাম থেকে উচ্ছেদ এবং ১৭টি গ্রামের অধিবাসীদের নানা ধরনের হয়রানি ও উচ্ছেদের হুমকি প্রদান ইত্যাদি ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।
(গ) সেটেলার কর্তৃক হামলা ও ভূমি বেদখল
২০২৩ সালের জানুয়ারি হতে জুন মাস পর্যন্ত ১১৩টি ঘটনার মধ্যে সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠী, মুসলিম বাঙালি সেটেলার ও ভূমিদস্যু কর্তৃক ১২টি ঘটনা সংঘটিত হয়েছে এবং এতে ১৮টি পরিবার ও ১৩০ জন জুম্ম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে। তার মধ্যে ২ জনকে হত্যা, একজনকে মারধর, ২ জন জুম্ম গ্রামবাসীর ভূমি জবরদখল এবং ১৮টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করার ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।
(ঘ) যৌন হয়রানি, সহিংসতা, ধর্ষণ ও হত্যা
২০২৩ সালের জানুয়ারি হতে জুন মাস পর্যন্ত ১১৩টি ঘটনার মধ্যে রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় পক্ষ কর্তৃক জুম্ম নারী ও শিশুর উপর ১২টি সহিংস ঘটনা সংঘটিত হয়েছে এবং এতে ১১ জন নারী মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছে। তার মধ্যে একজনকে হত্যা, ৬ জন নারী ও শিশুকে ধর্ষণ, ৩ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা এবং ২ জন নারী ও শিশুকে অপহরণ ও পাচারের চেষ্টার ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।
বিগত ছয় মাসে ১১ জন আদিবাসী জুম্ম নারী ও শিশু হত্যা, অপহরণ ও যৌন সহিংসতার শিকার হলেও ১২টি ঘটনার মধ্যে মাত্র ২টি ঘটনার অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাকি ১০টি ঘটনার কমপক্ষে ২৪ জন অভিযুক্ত ব্যক্তি পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। উল্লেখ্য, এ যাবত জুম্ম নারী ও শিশুর ওপর যত সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তার কোনটিরই সুষ্ঠু বিচার হয়নি। এই বিচারহীনতার কারণে অপরাধীরা পার পেয়ে বার বার এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। ফলে জুম্ম নারীরা আজ চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে চলাফেরা করতে বাধ্য হচ্ছে।