হিল ভয়েস, ১০ জুলাই ২০২৩ নওগাঁ: গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ঢাকা—রংপুর মহাসড়কের থানা চৌরাস্তা মোড়ে এবং নওগাঁর মহাদেবপুর চৌমাসিয়া (নওহাটা) মোড়ে আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, সমতল আদিবাসীদের জন্য পৃথক ও স্বাধীন ভূমি কমিশন এবং মন্ত্রণালয় গঠণ, বাদপড়া আদিবাসীদের গেজেটে অন্তর্ভুক্তকরণ, চাকুরিসহ সকল ক্ষেত্রে ৫% কোটা চালু, সাহেবগঞ্জ—বাগদার্ফামে তিন সাঁওতাল হত্যার বিচার, বিষপানে আত্মহত্যাকারী সাঁওতাল দুই কৃষকের প্ররোচনাকারীদের বিচার এবং সারাদেশে আদিবাসীদের ওপর হত্যা, নির্যাতন, হয়রানি বন্ধ করা ও আদিবাসীদের নামে বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাৎ ও ভূমি অফিসের দুর্নীতি বন্ধের দাবিতে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
গতকাল ৯ জুলাই ২০২৩, উক্ত অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়।
এই সময় কর্মসূচিতে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের উপদেষ্টা আরিফ খান ইউসুফজাই, বাসদ নওগাঁ জেলা কমিটির আহ্বায়ক জয়নাল আবেদিন মুকুল, ওয়ার্কার্স পার্টির নওগাঁ জেলার প্রতিনিধি শহীদ হাসান সিদ্দিকী স্বপন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের মুখপাত্র ও দপ্তর সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হেমব্রম, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নরেন পাহান, মার্টিন মুর্মু প্রমুখ।
এসময় বক্তারা বলেন, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চৌদ্দ দলীয় জোটের অন্যান্য নেতারা প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন এ দেশের সমতল ও পাহাড়ে বসবাসরত আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেবেন। কিন্তু তাঁরা সেই প্রতিশ্রম্নতি ভুলে গেছেন। উল্টো প্রজ্ঞাপন জারি করে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী হিসেবে উল্লেখ করে আদিবাসীদের ছোট করা হয়েছে। স্বাধীনতার এত বছর তাঁরা আর নিজেদের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে চান না। আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দাবিসহ আদিবাসীদের অন্যান্য প্রাণের দাবি মানছে না সরকার।
অন্যদিকে গোবিন্দগঞ্জের কাটামোড় থেকে আদিবাসীরা পদযাত্রা করে চারমাথা থানা মোড়ে অবস্থান নিয়ে ঘন্টাব্যাপি অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। অবরোধ চলাকালীন সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সাহেবগঞ্জ—বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ও জাতীয় আদিবাসী পরিষদ গাইবান্ধা জেলা কমিটির সভাপতি ডাঃ ফিলিমন বাস্কে। এসময় আদিবাসীদের সংগ্রামের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মানিক সরেন, আদিবাসী নেতা প্রিসিলা মুর্মু, মাথিয়াস মার্ডি, যোসেফ সরেন, দিনাজপুর বাসদের আহবায়ক কিবরিয়া হোসেন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি রিনা মুর্মু প্রমুখ।
উক্ত স্থানে বক্তারা বলেন, ভূমির অধিকার চাওয়ায় গোবিন্দগঞ্জে তিন সাঁওতালকে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকান্ডের সাত বছর পেরিয়ে গেলেও বিচারকার্য শুরু হয়নি। যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ রয়েছে। তারপরও বিচারের নামে তালবাহানা চলছে। দিনে—দুপুরে রাস্তায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে গোবিন্দগঞ্জের তৎকালীন এসিল্যান্ড অবিদীয় মার্ডিকে। সে মামলারও একই অবস্থা। বছরের পর বছর তদন্তের নামে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে বিচারর মুখোমুখি করার দাবি জানান।
উক্ত কর্মসূচিকে সংহতি জানিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক থোয়াইক্যজাই চাক হিল ভয়েসকে বলেন, বাংলাদেশের বসবাসরত সকল আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা প্রয়োজন। এছাড়াও তিনি সমতল আদিবাসীদের জন্য পৃথক ও স্বাধীন ভূমি কমিশন এবং মন্ত্রণালয় গঠণ সহ অতি দ্রুত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূণার্ঙ্গ বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন বলে অভিমত প্রকাশ করেন।