হিল ভয়েস, ১৯ জুলাই ২০২৩, রাঙ্গামাটি: আজ ১৯ জুলাই সকাল ১০ টায় রাঙ্গামাটির সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেনস ফেডারেশন, রাঙ্গামাটি কলেজ শাখার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত নবীন বরণ ও কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা-২০২৩ অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ শাখার সভাপতি সুমন চাকমার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ঊষাতন তালুকদার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অরুণ ত্রিপুরা,পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক থোয়াক্য জাই চাক, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি জিকো চাকমা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে হিল উইমেন্স ফেডারেশন রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ শাখার সভাপতি সোনারিতা চাকমা বলেন, সরকারি কলেজে শিক্ষার্থীদের পরিবহন সমস্যা, শিক্ষক সংকট, ছাত্র ও ছাত্রী হোস্টেলের দাবি উত্থাপন করেন এবং সকল শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ঊষাতন তালুকদার বলেন, যে দেশে বীরের সম্মান থাকে না সেই দেশে বীর জন্মগ্রহণ করে না। উপস্থিত সকল শিক্ষার্থীকে ভবিষ্যতে রাঙ্গামটি সরকারি কলেজ তথা দেশের গর্ব হয়ে উঠার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, সরকারি কলেজ একটি মুক্ত অঙ্গন। এই অঙ্গন থেকেই আমাদের নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা অর্জন করতে হবে। শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে নয় সামজিক পরিবেশ থেকেও আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। দূর্নীতি, অনিয়ম বর্তমান সমাজের বড় চ্যালেঞ্জ।। বর্তমান যুব সমাজের মধ্যে মাদক সর্বগ্রাসী অবস্থায় বিরাজ করছে। দূর্নীতির চ্যালেঞ্জ, মাদকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা সহ যারা সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ায় তাদের থেকেও সচেতন থাকতে হবে।
জনসংহতি সমিতি কোনো জাতি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নয় বরং সকল সম্প্রদায় বা জাতি মিলে একসাথে সুন্দর সমাজ গড়ার সংগঠন। আমরা কেউই রাজনীতির বাইরে নয়। তাই আধিবাসীদের ভূমি এবং অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
জিকো চাকমা তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের সামগ্রিক বাস্তবতার জন্যই আমরা রাজনীতির কথা বলতে বাধ্য হই। বাংলাদেশের ইতিহাসের দিকে তাকালে জাতির প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জনে তিনি রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন।
তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতার ৫৩টি বছর পেরিয়ে গেলেও নাগরিক জীবনের সুবিধা থেকে আমরা এখনো বঞ্চিত আছি । একটি দেশের শিক্ষা খাতে UNESCO মোট জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ করার ঘোষণা দিলেও চলমান বাজেটে বর্তমান সরকার মাত্র ১.৭৬ শতাংশ ব্যয় করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এছাড়াও তিন পার্বত্য জেলার অন্যতম বিদ্যাপীঠ রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজের বেহাল অবস্থা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। আমাদের সামগ্রিক জীবনের জন্য রাজনৈতিকভাবে সচেতন হওয়া জরুরি বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা বক্তব্যের শুরুতে বলেন, শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের মূল্যবোধ অর্জন করা দরকার। জাতির অস্তিত্বের কথা চিন্তা করে অর্জিত জ্ঞান সমাজ, জাতি এবং দেশের জন্য কাজে লাগানো প্রয়োজন।
এছাড়াও তিনি বলেন, পিসিপি ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন জন্মলগ্ন থেকেই ছাত্র-যুব সমাজকে সাথে নিয়ে কাজ করে আসছে। জুম্ম জনগণের অধিকারের জন্য পার্বত্য চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। কিন্তু কিছু আংশিক বিষয় ছাড়া মৌলিক বিষয়গুলো অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন । পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা চলমান রয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, জুম্ম জনগণের বাক-স্বাধীনতা, অর্থনীতি এবং সংস্কৃতি চর্চার কোনো অধিকার এখানে নেই । তাই গতানুগতিক পড়াশুনার পাশাপাশি সমাজের কল্যাণের জন্য রাজনৈতিকভাবে সচেতন হওয়া জরুরি বলে তিনি মত দেন । পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা নিরসনের জন্য ছাত্র-যুব সমাজকে সচেতন হওয়া জরুরি এবং এক্ষেত্রে তরুণ ছাত্র-সমাজকে তিনি এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
থোয়াইক্য জাই চাক তার বক্তব্যে বলেন, ছাত্রজীবন মানে শুধুমাত্র একটি চাকরি বা পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা নয়। বরং সামগ্রিক ভাবে শিক্ষা অর্জন করার মাধ্যমে দেশ ও জাতির স্বার্থে কাজ করা।
অরুন ত্রিপুরা উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ছাত্রসমাজ যেন দেশের স্বার্থে, জাতির স্বার্থে নিজেকে নিয়োজিত করে সেই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ছাত্রজীবনে মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরে বলেন, ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে মাদকের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে ।
আলোচনা সভা শেষে জিপিএ ৫ ধারী শিক্ষার্থীদের ক্রেস্ট দিয়ে সংবর্ধিত করা হয়। অনুষ্ঠানে নবীনদের উদ্দেশ্যে অভিনন্দন পত্র পাঠ করেন সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কুর্নিকভা চাকমা। নবীনদের পক্ষে অভিনন্দন পত্র গ্রহণ ও বক্তব্য রাখেন একই কলেজের মানবিক বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মিথিকা চাকমা। ফুল গ্রহণ করেন বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান (শিমু)। অভিভাবকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন শামসুন নাহার ।