হিল ভয়েস, ১৪ জুন ২০২৩, বান্দরবান: বান্দরবান জেলার লামা উপজেলাধীন সাংগু মৌজাবাসীর উদ্যোগে লামায় জুম্মদের ৫,৭৬০ একর জমিতে সাংগু বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণার আদেশ বাতিল ও পাড়াবাসীদের উচ্ছেদ থেকে রক্ষার দাবিতে বান্দরবান প্রেস ক্লাব চত্বরে মানববন্ধন আয়োজন ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর এক স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
এই সময় মানববন্ধনে সভাপত্বি করেন সাংগু মৌজার হেডম্যান চ্যংপাত ম্রো এবং সঞ্চালনা করেন থোয়াই অং মারমা। এই সময় মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সচেতন ছাত্র সমাজের প্রতিনিধি তনয়া ম্রো ও উক্যমং মারমা এবং বান্দরবান হেডম্যান ও কার্বারী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি হ্ণাথোয়াইহ্রি মারমাসহ মৌজার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীরা।
উক্ত মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের গেজেট বিজ্ঞপ্তি নং পবম (শা-৩) ১১/৯৩/১৯০ তারিখ ৭/৩/১৯৯৬ মূলে প্রথম দফায় ৫,৭৬০ একর জমিতে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ২০১০ সাল পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালযয়ের বন অধিশাখা-২ স্মারক নং পবম/বন শা-২/০২ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ১৩/২০১০/২১২ তারিখ ৪/৬/২০১০ বাস্তবায়নে পুন:রায় প্রজ্ঞাপন জারি করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরির্বতন মন্ত্রণালয় ঘোষণা করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন জুম্ম এলাকাবাসী।
প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে প্রদত্ত স্মারকলিপিতে এলাকাবাসীরা উল্লেখ করেন, “এক সময় সাংগু মৌজা ভূমিদস্যুদের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিতি ছিল। সাধারণ মানুষকে প্রতি মূহূর্তে ভূমি হারানোর আতঙ্কে থাকতে হতো। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি হওয়ার ভূমিদস্যুদের দাপট কমে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ এখন নিরাপদে বসবাস করে আসছে। কিন্তু এই নিরাপদে ও শান্তিতে থাকার সময়ে এখন আবার বন বিভাগের বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য তৎপরতায় মানুষের মধ্যে উচ্ছেদ আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে এই ঘোষণা বাস্তবায়নে অভয়ারণ্য এলাকায় বসবাসরত শত শত পরিবারকে উচ্ছেদ হয়ে চলে যেতে হবে।”
স্মারকলিপিতে আরো বলা হয় যে, “আমরা পাড়াবাসীরা শত শত বছর ধরে প্রকৃতি সাথে যুদ্ধ করে বসবাস করে আসছি। বন এবং প্রকৃতি আমাদের জীবন জীবিকার অংশ। পাহাড়ে চাষাবাদের উপর আমাদের জীবিকা নির্ভরশীল। যেমন জুম চাষের মাধ্যমে সারা বছরের খাবারের মজুদ করা হয়, পাহাড়ে মৌসুমি ফলন চাষের মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের পড়া লেখার ভরণপোষণ করা হয়। বিশ্বস্থসূত্রে অবগত হয়েছি, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় কর্তৃক বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে লামা বন বিভাগ আগামী ১৫ জুন কক্সবাজারের চকোরিয়ারর একটি বেসরকারী হোটেলে উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠকের আহ্বান করেছে।”
এলাকাবাসীরা জোর দিয়ে বলেন, “গৃহিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পুরো সাঙ্গু মৌজার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে। সহজ সরল পাহাড়ী জুমিয়া পরিবারগুলো যাতে দু’বেলা দু’মুটো খেয়ে বাঁচতে পারে সে লক্ষ্যে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণার আদেশ বাতিল করা হবে মানবিক।”
পরিশেষে স্মারকলিপিতে বলা হয় যে, “শান্তিচুক্তির আগে ভূমিদস্যুদের উৎপাতে সাংগু মৌজায় তিনটি পাড়া উচ্ছেদ হয়েছে। অভয়ারণ্যের জন্য আবারও উচ্ছেদ আতঙ্কে মৌজাবাসী অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন যাপন করতে হচ্ছে। তাই সাংগু অভয়ারণ্য ঘোষণা ও প্রজ্ঞাপন বাতিল করে সরাসরি ১৩টি পাড়াসহ পরোক্ষভাবে মৌজাবাসী সবাইকে উচ্ছেদ থেকে রক্ষার জন্য আপনার কাছে আমরা করজোরে প্রার্থনা করছি।”
স্মারকলিপিটি পরিবেশ ও বন মন্ত্রী, পার্বত্য মন্ত্রী, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব, পরিবেশ ও বন সচিব, পার্বত্য সচিব, বন বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, বান্দরবানের ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের ব্রিগেড কম্যান্ডার, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, বান্দরবানের জেলা প্রশাসক, বান্দরবানের পুলিশ সুপার, বান্দরবান বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, লামা বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, লামা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রমুখ ব্যক্তিদের নিকট অনুলিপি দেয়া হয়।