হিল ভয়েস, ৭ জুন ২০২৩, বিশেষ প্রতিবেদক: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু ও খাগড়াছড়ি জেলা থেকে সেনামদদপুষ্ট ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসীদের ৫০ জনের একটি সশস্ত্র দল বান্দরবান পার্বত্য জেলায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার (৬ জুন ২০২৩) রাতে বা আজ বৃহস্পতিবার সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এসব সন্ত্রাসীদের বান্দরবানে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। তবে বান্দরবানের কোথায় বা ঠিক কী উদ্দেশ্যে এসব সন্ত্রাসীদের সেখানে মোতায়েন করা হচ্ছে তা সূত্রটি নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, গত পরশু (৫ জুন ২০২৩) বিকাল আনুমানিক ৪ টার দিকে লংগদু উপজেলার ১নং আটরকছড়া ইউনিয়নের করল্যাছড়ি এলাকা থেকে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসীদের ২০-২২ জনের একটি সশস্ত্র দল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২টি জীপ গাড়িতে করে খাগড়াছড়ির উদ্দেশে রওনা দেয়। খাগড়াছড়ি থেকে আরও ২৫-৩০ জন ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসী সদস্য নিয়ে অন্তত ৫০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী বান্দরবানে নিয়ে যাওয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান যে, সেনাবাহিনীর গাড়িতে থাকা এক সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলের সদস্য তার এক বন্ধুকে মোবাইলে বলতে শুনতে পাওয়া যায় যে, ‘দোস্ত আমরা খাগড়াছড়ি যাচ্ছি, আজ রাতে বান্দরবান যেতে হবে। আমার জন্য দোয়া করিস।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিশিষ্ট অধিকার কর্মী বলেন, বান্দরবানে ইসলামী জঙ্গীদের আশ্রয়দাতা কেএনএফ এর সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রক্সি যুদ্ধ পরিচালনাসহ ওই এলাকায় সেনামদদপুষ্ট সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের অবস্থান আরও দৃঢ় করার লক্ষেই সেনাবাহিনী এইসব সন্ত্রাসীদের সেখানে নিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে কেএনএফ এর বিরুদ্ধে প্রক্সি যুদ্ধ পরিচালনার জন্য সেনাবাহিনী কর্তৃক ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসীদের ৪০ জন সদস্য বান্দরবানের রুমা এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং কেএনএফ তথা বম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এসব সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল ২০২৩ সেনাবাহিনীর মদদে রোয়াংছড়ির খামতাং পাড়ায় সংস্কারপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসীদের কর্তৃক একজন বমপার্টির সদস্যসহ ৮ জন নিরীহ গ্রামবাসীদেরকে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য যে, জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বাধীন জুম্ম জনগণের পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে নস্যাৎ এবং চুক্তির পক্ষের জনগণকে দমন-পীড়ন করার জন্য সেনাবাহিনীই প্রসিতপন্থী ইউপিডিএফ, ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক), সংস্কারপন্থী, মগ পার্টি, বম পার্টি খ্যাত কেএনএফ ইত্যাদি সশস্ত্র গোষ্ঠী সৃষ্টি করেছে এবং তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মদদ দিয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এক পর্যায়ে কেএনএফ কর্তৃক অর্থের বিনিময়ে ইসলামী জঙ্গী গোষ্ঠীকে আশ্রয় ও সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার খবর উন্মোচিত হলে র্যাব ও সেনাবাহিনী কেএনএফ এর বিরুদ্ধে সেনা অভিযান চালাতে বাধ্য হয়।
আরও উল্লেখ্য যে, ২০১৮ সালের অক্টোবরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে সেনাবাহিনী ও ক্ষমতাসীন মহলের প্রত্যক্ষ সহায়তায় ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও সংস্কারপন্থী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদেরকে বাঘাইছড়ি, লংগদু, নান্যাচর, রাঙ্গামাটি সদর এলাকা ও কাপ্তাই উপজেলার কতিপয় স্থানে নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে এই সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজী, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, মালবাহী ও যাত্রীবাহী যানবাহন তল্লাসী, জনসংহতি সমিতির সদস্য ও সমর্থকদের উপর হামলা ইত্যাদি অবাধে চালিয়ে এসব এলাকায় এক সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করে। বিশেষ করে গত ১৪ মে ২০১৯ প্রকাশ্য দিবালোকে দীঘিনালা থেকে সেনাবাহিনীর প্রহরায় লংগদু হয়ে সুবলঙে অস্ত্র-শস্ত্রসহ ১৪ জন ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও সংস্কারপন্থী সদস্যদের নিয়ে আসা হয়। সুবলং আর্মি ক্যাম্পের প্রত্যক্ষ সহায়তায় নিকটস্থ সুবলং বাজারে অবস্থান নিয়ে সংস্কারপন্থী সদস্যরা অবাধে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে যেতে থাকে।