হিল ভয়েস, ২৪ জুন ২০২৩, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘনের সাথে জড়িত নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যাতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে যোগ দিতে না পারে জাতিসংঘকে তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের ভর্তি জাতিসংঘকে অবশ্যই পর্যালোচনা করতে হবে।
গতকাল ২৩ জুন ২০২৩ নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রচারিত অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক গণবিবৃতিতে (পাবলিক স্টেটমেন্ট) সংস্থাটি এই আহ্বান জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ভ্রমণের সময় জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যাঁ পিয়েরে ল্যাক্রইক্সকে অবশ্যই বাংলাদেশে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো কর্তৃক মানবাধিকার লংঘনের পর্যালোচনাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং দেশে মানবাধিকার লংঘনের সাথে জড়িতদের যাতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনগুলোতে মোতায়েন করা না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের জন্য বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো সরবরাহের তিন দশকের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এবং বাংলাদেশ হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম সরবরাহকারী। এটা উদ্বেগজনক, অতীতে বাংলাদেশে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো, বিশেষ করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) কর্তৃক মানবাধিকার লংঘন সংঘটিত হয়েছিল।
বাংলাদেশি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, সীমান্ত রক্ষী, ও পুলিশ বাহিনী নিয়ে গঠিত র্যাব কর্মকর্তারা জোরপূর্বক অন্তর্ধান, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, নির্যাতন ও অন্যান্য অসদাচরণ পরিচালনা, বিরোধী দলের রাজনীতিক, মানবাধিকার সুরক্ষাকর্মী, ভিন্নমতাবলম্বী ও অধিকারকর্মীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণতকরণ এর বিষয়ে অভিযুক্ত। যুক্তরাষ্ট্র যখন র্যাব এর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল তখন তারা জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবার, মানবাধিকার সুরক্ষাকারী ও সুশীল সমাজের বিরুদ্ধে হুমকি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানির অভিযান শুরু করেছিল বলে জানা যায়। র্যাব এর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘনের এসব অভিযোগসমূহ বিবেচনা করে, জাতিসংঘের উচিত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে র্যাব সদস্যদের ব্যবহার বাতিল করা, যতক্ষণ না এটা নিশ্চিত হচ্ছে যে, তারা মানবাধিকার লংঘনকারী নয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, শান্তিরক্ষী সৈন্যদের তালিকা করার সময় জাতিসংঘ নিশ্চয়ই মানবাধিকার লংঘনের বিষয়ে যথাযথ যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া পরিচালনা করে। এই যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শুধু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে সীমিত রাখা উচিত হবে না। দীর্ঘ বছর ধরে, অধিকার গ্রুপগুলো সর্বোচ্চ অবদান রাখা দেশগুলো থেকে শান্তিরক্ষীদের নির্বাচনের বিষয়ে অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা চালু করার জন্য জাতিসংঘকে অনুরোধ করে আসছিল, যা ব্যাপকভাবে উপেক্ষিত হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘনের সাথে যুক্তদের পদোন্নতি দেওয়ার সময়, নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধের জন্য অপরাধ থেকে দায়মুক্তির রেকর্ডও রয়েছে। বাংলাদেশের উচিত এসব মানবাধিকার লংঘন আমলে নিয়ে অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনা এবং দায়মুক্তির সংস্কৃতির অবসান ঘটানো। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের যেন নিজ দেশে মানবাধিকার লংঘনের ইতিহাস না থাকে, তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সফরে ল্যাক্রইস্ককে বাংলাদেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের মানবাধিকার রেকর্ডের বিষয়ে মূল নজর দিতে হবে।