হিল ভয়েস, ১৬ জুন ২০২৩, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন বিলাইছড়ি ও জুরাছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ও বিশেষ এক সেনা অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এলক্ষে ইতিমধ্যে একাধিক স্থানে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এজন্য দুই উপজেলার সাধারণ গ্রামবাসীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানা গেছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, উক্ত সেনা অভিযানে অংশগ্রহণের লক্ষে ইতিমধ্যে গতকাল ১৫ জুন ২০২৩ বিলাইছড়ি সদরের ৩২ বীর দীঘলছড়ি সেনা জোন থেকে ২০-২৫ জনের একটি সেনাদল বিলাইছড়ি উপজেলার ২নং কেংড়াছড়ি ইউনিয়নের তাগলকছড়া মোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং ১৫-২০ জনের অপর একটি সেনাদল একই ইউনিয়নের বাঙালকাবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থান গ্রহণ করেছে।
অপরদিকে, একই লক্ষ্য নিয়ে জুরাছড়ি উপজেলার মৈদুং ইউনিয়নের ফকিরাছড়া সেনা ক্যাম্পেও আনুমানিক ২০০ জনের একটি সেনাদল অবস্থান গ্রহণ করেছে বলে স্থানীয় একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। এই সেনাদলটি সেখান থেকে বিভক্ত হয়ে জুরাছড়ি-বিলাইছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী ফকিরাছড়া হিজিং (সংকীর্ণ পথ) এবং বিলাইছড়ি উপজেলার ২নং কেংড়াছড়ি ইউনিয়নের ন-কাবাছড়া মারমা পাড়া পর্যন্ত টহল ও তল্লাসী অভিযান চালাবে বলে সূত্রটি জানিয়েছে।
এদিকে, বিলাইছড়ি উপজেলার শিলছড়ি সেনা ক্যাম্প থেকে ৫০-৬০ জনের একটি সেনাদল বিলাইছড়ি-রাঙামাটি সদরের কাইন্দা এলাকা ও জুরাছড়ি সীমান্তের বড় মোন অর্থৎ কালো পাহাড়ে অবস্থান নিয়েছে বলে অপর একটি সূত্র জানায়।
এছাড়া ১নং বিলাইছড়ি ইউনিয়নের ধুপশীল সেনা ক্যাম্প থেকে অর্ধশতাধিক সেনা সদস্য দীঘলছড়ি মোনে অবস্থান করতে পারে বলেও একটি বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে সেনাবাহিনীর এই মহড়া ও সেনা অভিযানের প্রস্তুতি দেখে স্থানীয় জনগণের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গ্রামবাসী জানান, সেনা অভিযানে বরাবরই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকির সম্মুখীন হয় নিরীহ ও সাধারণ জুম্ম জনগণ। এসময় সাধারণ জুম্মরা প্রায়ই নানা হয়রানি, নিপীড়ন, আটক, জিজ্ঞাসাবাদ ইত্যাদির সম্মুখীন হয়। গ্রামে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিলাইছড়ির পার্শ্ববর্তী জুরাছড়ি উপজেলায় প্রায় ১৬ দিনব্যাপী (২১ ডিসেম্বর ২০২২-৬ জানুয়ারি ২০২৩) এক সামরিক অভিযান পরিচালনা করে। এই অভিযানে সেনা সদস্যরা স্থানীয় জুম্মদের ব্যাপক হয়রানি, বাড়িতে তল্লাশিসহ, বিনামূল্যে ইচ্ছেমত জুম্মদের গৃহপালিত গরু, ছাগল, মোরগ-মুরগী ও চাল ভোজন করে। ষাটোর্ধ এক বৃদ্ধকে শীতের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ আটক রাখে এবং স্থানীয় জুম্ম গাছ বাগানের মালিক ও ব্যবসায়ীর ৬৬১৬টি সেগুন গাছের গুড়ি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জব্দ করে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৩ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা বলে জানা গেছে। সেনা নির্যাতনের ভয়ে গ্রামবাসী অনেকেই তীব্র শীতের মধ্যে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।