হিল ভয়েস, ২০ জুন ২০২৩, ঢাকা: অর্থমন্ত্রী কর্তৃক সম্প্রতি জাতীয় সংসদে পেশকৃত বাজেটে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বাজেটে ধর্মীয় বৈষম্যের কোনোরূপ পরিবর্তন না আসায় বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর প্রতি বাজেট বরাদ্দ সীমাহীন অবজ্ঞা, অবহেলা ও বৈষম্যের এক সুস্পষ্ট প্রমাণ।
আজ ২০ জুন ২০২৩ সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত বলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পরিচালন ব্যয় বরাদ্দ এবং উন্নয়ন খাতে মোট বরাদ্দ রয়েছে ২১৭৬.১৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে উন্নয়ন খাতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর জন্যে বরাদ্দ মাত্র ৬.৪%, জনসংখ্যার আনুপাতিক হারের সাথে যা একেবারেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এদেশের ধর্মীয় সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের উন্নয়ন ও কল্যাণে গঠিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন চলে প্রতি বছরের বাজেট বরাদ্দ থেকে। আর হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টসমূহ চলে আমানতের সুদের টাকায়। হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের উদাহরণ টেনে বলা হয়, এ প্রতিষ্ঠানের জন্যে মোট স্থায়ী আমানতের ১০০ কোটি টাকা থেকে প্রতি বছরে ব্যাংকে জমাকৃত অর্থ থেকে ৫.০০ কোটি থেকে ৫.৫০ কোটি টাকা সুদ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি পেয়ে থাকে। উক্ত টাকা থেকে বছরে প্রায় ১.৫ কোটি অফিস খরচ ও বাদবাকি ৪.০০ কোটি টাকা দুঃস্থদের, মন্দিরে অনুদান ও ক্ষুদ্র পরিসরে বিভিন্ন তীর্থ স্থানে তীর্থ পরিক্রমার জন্য প্রতিষ্ঠানটি ব্যয় করে থাকে। হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টে বর্তমানে জনবল রয়েছে ৯ জন, তার মধ্যে ২ জন মুসলিম সম্প্রদায়ের। মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমে জেলাসমূহে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীর প্রায় ৪০ শতাংশ ধর্মীয় সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের। ধর্মীয় ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে পুরোহিত ও সেবায়েত দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পটি হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় রয়েছে। এই প্রকল্পের জনবলের মধ্যেও ১০% এর বেশি ইসলাম ধর্মাবলম্বী।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশে হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মীয় শিক্ষাব্যবস্থার একমাত্র সরকার কর্তৃক স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড। এই বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানসমূহ আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। যার ফলশ্রুতিতে হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মীয় শিক্ষা থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে। এদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ জনগোষ্ঠী হিন্দু সম্প্রদায় প্রায় সম্পূর্ণরূপে ধর্মীয় চেতনাহীন ও নৈতিক শিক্ষাহীন হয়ে গড়ে উঠছে। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে একজন শিক্ষক মাসিক সর্বসাকুল্যে ১৭৯.০০ টাকা এবং একজন কর্মচারী মাসিক ৭৮.০০ টাকা বেতন ভাতা পেয়ে থাকেন। বাংলাদেশ সংস্কৃত ও পালি শিক্ষকদের জাতীয় পে-স্কেলভুক্তকরণ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সংস্কৃত ও পালি শিক্ষক সমিতির মহাসচিব ২০১৯ সালের মার্চ মাসে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর কাছে বিস্তারিত উল্লেখ করে এক আবেদন করেন। এ আবেদনপত্রে মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী ‘বিহিত ব্যবস্থার জন্য’ সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু অদ্যাবধি এ আবেদন সরকারের বিবেচনায় আসেনি।
সংবাদ সম্মেলনে চারটি দাবি উত্থাপিত হয়, যার মধ্যে রয়েছেÑ ১. ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন ও কল্যাণে জাতীয় রাজস্ব বাজেট থেকে বার্ষিক বরাদ্দ প্রদান করে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টসমূহকে ফাউন্ডেশনে রূপান্তরকরণ, ২. ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্যে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, ৩. ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঠিক শুমারীর উদ্যোগ গ্রহণ, ৪. প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মডেল মন্দির/প্যাগোডা/গীর্জা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন, ৫. বিগত পাঁচ দশক ধরে বাজেটে ধর্মীয় বৈষম্যের কারণে ৫ হাজার কোটি টাকা সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন ও কল্যাণে থোক বরাদ্দ প্রদান, ৬. বাংলাদেশ সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে কর্মরত শিক্ষক ও কর্মচারীদের জাতীয় পে-স্কেলভুক্তকরণ।
সংবাদ সম্মেলনে অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত বলেন, সম্পদের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে দেশের সকল সম্প্রদায়ের নৈতিক ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন আজ সময়ের দাবী।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের অন্যতম সভাপতি ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য মিলন কান্তি দত্ত, ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বাপ্পাদিত্য বসু।