হিল ভয়েস, ১৪ জুন ২০২৩, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগের ক্ষেত্রে মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয় যাচাইবাছাই প্রক্রিয়া জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। এইচআরডব্লিউ বলেছে, আসন্ন বাংলাদেশ সফরের সময় জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যাঁ পিয়েরে ল্যাক্রোইক্স এর উচিত বাংলাদেশ সরকারের নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক ক্ষমতার অপব্যবহারের উপর প্রকাশ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করা। গত ১২ জুন ২০২৩ এক বিবৃতির মাধ্যমে এইচআরডব্লিউ কর্তৃক এই আহ্বান ও বক্তব্যের কথা জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘের পিস অপারেশন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উক্ত কর্মকর্তার অচিরেই বাংলাদেশ সফরে আসার কথা রয়েছে। সফরে তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আয়োজিত এক সম্মেলনে যোগ দেবেন বলে জানা গেছে।
এইচআরডব্লিউর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ল্যাক্রোইক্স এমন সময়ে বাংলাদেশ সফর করছেন, যখন সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো দেশটির রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে, বিভিন্ন অধিকারকর্মী, গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের হয়রানি করছে। বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী- বিশেষ করে সহযোগী সামরিক ও পুলিশ সদস্যদের নিয়ে গঠিত একটি বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যটালিয়ন (র্যাব) দীর্ঘদিন ধরে গুরুতর মানবাধিকার লংঘনের সাথে জড়িত রয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটি জানিয়েছিল, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের এমন অনেক সদস্যকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যারা র্যাবের হয়ে কাজ করেছেন। বিষয়টি উদ্বেগের। এমন পরিস্থিতিতে একটি স্বাধীন যাচাই-বাছাই ব্যবস্থার সুপারিশ করেছিল জাতিসংঘের ওই কমিটি। ওই যাচাই-বাছাইয়ের উদ্দেশ্য ছিল, নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমসহ অন্যান্য গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত কোনো ব্যক্তি বা ইউনিটকে যেন শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োগ না দেওয়া হয়, তা নিশ্চিত করা।
এইচআরডব্লিউ আরও বলছে, জাতিসংঘের উচিত কোনো বাংলাদেশি কর্মকর্তা র্যাবের সঙ্গে জড়িত থাকলে, তা প্রকাশ করা এবং বাহিনীটি সংশ্লিষ্ট কাউকে শান্তিরক্ষা মিশনে যোগদানে বিরত রাখা। শুধু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নয়, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সব সদস্যের মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট বিষয় যাচাই-বাছাই করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন বিভাগকে।
জ্যাঁ পিয়েরে ল্যাক্রোইক্স এর প্রতি আহ্বান জানিয়ে এইচআরডব্লিউ বলেছে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার, মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে সরকারের ব্যর্থতা এবং বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষার জন্য তারা যে হুমকি সৃষ্টি করেছে, তা চিহ্নিত করতে মানবাধিকার যাচাইবাছাইয়ের বিষয়ে জাতিসংঘকে প্রকাশ্যে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অবদান সবচেয়ে বেশি। এ অবস্থান ধরে রাখতে বাংলাদেশকে জাতিসংঘের মানবাধিকারসংক্রান্ত যাচাই-বাছাই নীতিমালা যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে, জাতিসংঘের হয়ে কাজ করা তাদের কোনো নাগরিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত নয়।
উল্লেখ্য, এর পূর্বে গত ২৫ মে ২০২৩ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছয় কংগ্রেসম্যান জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী মোতায়েন প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চিঠি দেয়, যাতে আসন্ন নির্বাচনে বাংলাদেশের সাধারণ জনগনকে সুষ্ঠু নির্বাচনের সুযোগ দেওয়া যায়। উক্ত ছয় কংগ্রেসম্যান হলেন, স্কট পেরি, ব্যারি মুর, ওয়ারেন ডেভিডসন, বব গুড, টিম বোরসেট এবং কিথ সেলফ।
জো বাইডেনের কাছে পাঠানো উক্ত চিঠি প্রসঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রীতি বিন্দু চাকমা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে পাঠানো চিঠিতে ছয়জন কংগ্রেসম্যান যথার্থই উল্লেখ করেছেন যে- সামরিক বাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জুম্ম জনগণের মতো জাতিগত সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার করছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল বিশ্বের সবচেয়ে সামরিকায়িত অঞ্চল। আদিবাসী জুম্ম জনগণ বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর দ্বারা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত জুম্ম জনগণ নিষ্ঠুর সামরিক শাসনের অধীনে রয়েছে।