হিল ভয়েস, ২৪ জুন ২০২৩, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলাধীন কাপ্তাই উপজেলার কাপ্তাই জেটিঘাট বাজারে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেতন তঞ্চঙ্গ্যা (১৭), পীং-মৃত শুসেন মুনি তঞ্চঙ্গ্যা নামে স্থানীয় এক জুম্ম আম বিক্রেতা বাজারের একদল মুসলিম বাঙালির সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঘটনাটি ঘটে গতকাল ২৩ জুন ২০২৩ বিকাল ৪:৩০ টায় কাপ্তাই জেটিঘাট বাজারে।
হামলায় মারধরের শিকার কেতন তঞ্চঙ্গ্যার মাথায় ও পায়ে জখমের সৃষ্টি হয়েছে এবং তার বাড়ি কাপ্তাই ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের কিলাছড়ি গ্রামে বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীর সূত্রে জানা যায়, গতকাল ৪:০০ টার দিকে কেতন তঞ্চঙ্গ্যা নিজেদের বাগানের কিছু আম বিক্রির জন্য জেটিঘাট বাজারে নিয়ে যায়। একই সময় তার এক পিসিও কিছু আম বিক্রির জন্য সেখানে নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর তার পিসি বিক্রি করে দিতে বলে কেতন তঞ্চঙ্গ্যাকে তার আমগুলো দিয়ে অন্যত্র যান।
এর কিছুক্ষণ পর আনুমানিক ৪:৩০ টার দিকে দুইজন বাঙালি এসে কেতন তঞ্চঙ্গ্যাকে তার পিসির আমগুলো দেখিয়ে কেজি প্রতি কত টাকা এবং আমগুলো মিষ্টি কিনা জিজ্ঞাসা করে। এরপর কেতন তঞ্চঙ্গ্যা একটি আম কেটে ওই দুই ব্যক্তিকে খাওয়ায়। আমের স্বাদে সন্তুষ্ট হয়ে ওই দুই বাঙালি পিসির আমগুলো (৫ কেজি) কেজি প্রতি ৪০ টাকা দরে কিনবে নির্ধারিত হয়। এরপর আমগুলো কিনে ওই দুই বাঙালি চলে যায়।
এর দুই ঘন্টা পর আমের ক্রেতা ওই দুই বাঙালি আবার সেখানে আসে এবং কেতন তঞ্চঙ্গ্যাকে বলে যে, আমগুলো তো সব পঁচা। কেতন বলে যে, দাদা, আমি তো নিশ্চয়তা দিইনি যে আমগুলো পঁচা নয় বা পঁচা হলে ফেরত নেবো। এরপর দুই বাঙালি বলে যে, তোমার পিসিকে ডাকো। কেতন বলে, পিসি কোথায় গেছে, এখন কিভাবে তাকে পাব।
এরপর ওই দুই বাঙালি জোর করে কেতন তঞ্চঙ্গ্যার তার নিজের আমগুলো ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এতে কেতন চাকমা বলে, ব্যাপারটা ঠিক হচ্ছে না এবং সে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় ওই দুই বাঙালি কেতন তঞ্চঙ্গ্যাকে লাঠি ও ঘুষি দিয়ে মারতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, বাজারের আশেপাশে থেকে আরও ২০-২৫ জন মুসলিম বাঙালি এসে কেতনকে মারধর করতে থাকে। এসময় কেতনের এক বড় ভাই হামলাকারীদের থামানো চেষ্টা করলে হামলাকারীরা তাকেও মারধর করে।
এরপর হামলাকারীরা কেতন তঞ্চঙ্গ্যাকে ধরে কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কার্যালয়ে নিয়ে যায়। সেখানেও হামলাকারীরা কাঠের চেয়ার দিয়ে আঘাত করে কেতন তঞ্চঙ্গ্যার মাথায় ও পায়ে ব্যাপক জখমের সৃষ্টি করে। কিছুক্ষণ পর উপজেলা চেয়ারম্যান, বাজার কমিটির সভাপতিসহ কয়েকজন মুরুব্বি আসেন। উপজেলা চেয়ারম্যান আহত কেতন চাকমাকে চিকিৎসার জন্য হামলাকারীদেরকে মাত্র ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে সমাধান বলে ঘোষণা করেন এবং সবাইকে যার যার জায়গায় চলে যেতে বলেন।
এদিকে, বিনা দোষে বা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এবং বিচার বিবেচনা না করে একদল মুসলিম বাঙালি কর্তৃক কেতন তঞ্চঙ্গ্যাকে এভাবে সাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে অমানবিকভাবে মারধরের ঘটনায় স্থানীয় জুম্মদের মধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।