হিল ভয়েস, ২৪ মে ২০২৩, রাঙামাটি: রাঙামাটি জেলার জুরাছড়িতে তুলনামূলকভাবে শান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করলেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্যোগে ব্যাপক সেনা অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে এলাকার সাধারণ জুম্ম জনগণের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ইতোপূর্বেও সেনাবাহিনীর বেপরোয়া অভিযানের সময়ে সেনাবাহিনী কর্তৃক স্থানীয় নিরীহ জুম্মদের বাড়িঘর তল্লাসি, জিজ্ঞাসাবাদ, মারধর, আটক, হয়রানি এবং বিনামূল্যে গ্রামবাসীর গবাদি পশুপাখি ও খাদ্যশস্য খাওয়ার ব্যাপক অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ ২৪ মে ২০২৩ সকাল আনুমানিক ৯ টার দিকে জুরাছড়ি উপজেলার ৭ বীর বনযোগীছড়া সেনা জোনের অধীন যক্ষাবাজার সেনা ক্যাম্প থেকে ৪০ জনের একটি সেনাদল সেনা অভিযানের প্রস্তুতি নিয়ে ১নং জুরাছড়ি ইউনিয়নের বারিসগোলা নামক এলাকার দিকে রওনা দেয়।
এই সেনাদলের অফিসার ও সৈনিক সবাই মাথায় হেলমেট পরিহিত রয়েছে এবং তাদের পরিহিত ইউনিফর্ম থেকে সকলের নামফলক সরিয়ে রাখা হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীর সূত্রে জানা গেছে।
অপরদিকে, আজ সকালে পার্শ্ববর্তী উপজেলা বিলাইছড়ির ৩২ বেঙ্গল দীঘলছড়ি সেনা জোন হতে অপর একটি সেনাদল উক্ত অভিযানে যোগ দিতে জুরাছড়ির দিকে রওনা দিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বিলাইছড়ির সেনাদলটি সকাল ১০ টা নাগাদ জুরাছড়ির দুমদুম্যা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বরকলক সরকারি প্রাথমিক অবস্থান করছিল বলে জানা গেছে।
একটি সূত্র জানায়, আজ হতে আগামী ১০ জুন ২০২৩ পর্যন্ত এই সেনা অভিযান চলতে পারে এবং এত কয়েকশ সেনা সদস্য অংশগ্রহণ করতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জুরাছড়ি এলাকার এক মুরুব্বি বলেন, তুলনামূলকভাবে জুরাছড়িতে এখন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করলেও এখানে সেনাবাহিনীর এত বড় সেনা অভিযানের আয়োজন কেন তা বোধগম্য ও গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, বান্দরবানে সেনাবাহিনী কর্তৃক সৃষ্ট কেএনএফের হামলা ও পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে সেনা সদস্যসহ একের পর এক নিরীহ মানুষ নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটলেও সেনাবাহিনী ইসলামী জঙ্গী আশ্রয়প্রদানকারী কেএনএফের বিরুদ্ধে তেমন কোনো সফল অভিযান পরিচালনা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। উপরন্তু সেনাবাহিনী সেখানে সেনা অভিযানে নিরস্ত্র সাধারণ জনগণকে যেতে বাধ্য করছে এবং মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠছে।
তিনি আরো বলেন, জুরাছড়িতে সেনা অভিযান মানে জনগণকে নিপীড়ন ও হয়রানি। এতে সাধারণ জনগণের মধ্যে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং সাধারণ জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যহত ও বিপদগ্রস্ত হয়।
উল্লেখ্য, সেনাবাহিনী গত ২২ ডিসেম্বর ২০২২ হতে গত ৬ জানুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত প্রায় ১৬ দিনব্যাপী জুরাছড়ি উপজেলাধীন বারোদগোলা, বেলতলা, চালকা পাড়া, আমতলা, শালবাগান, থাচি পাড়া, ক্যারানি পাড়া, পানছড়িমুখ, জামুরাছড়ি, ভুয়াতলী ছড়া, মোনঅ আদাম, রাজাতল, বাদলহাট ছড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক সেনা অভিযান পরিচালনা করে।
উক্ত অভিযানে সেনা সদস্যরা স্থানীয় জুম্মদের ব্যাপক হয়রানি, বাড়িতে তল্লাশিসহ, বিনামূল্যে ইচ্ছেমত জুম্মদের গৃহপালিত গরু, ছাগল, মোরগ-মুরগী ও চাল ভোজন করে। ষাটোর্ধ এক বৃদ্ধকে শীতের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ আটক রাখে এবং স্থানীয় জুম্ম গাছ বাগানের মালিক ও ব্যবসায়ীর ৬৬১৬টি সেগুন গাছের গুড়ি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জব্দ করে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৩ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা বলে জানা গেছে। সেনা নির্যাতনের ভয়ে গ্রামবাসী অনেকেই তীব্র শীতের মধ্যে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায় বলে খবর পাওয়া যায়।
পরে সেনাবাহিনী তাদের এই নিপীড়ন ও হয়রানিমূলক কার্যক্রম ও সংবাদ ধামাচাপা দিতে জুরাছড়িতে জেএসএসের আস্তানায় সেনাবাহিনীর অভিযান ও বিভিন্ন সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়েছে বলে প্রেস বিবৃতি দিয়ে জেএসএসকে নিয়ে মিথ্যা প্রচার করার অভিযোগ পাওয়া যায়।