হিল ভয়েস, ১৯ এপ্রিল ২০২৩, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) প্রতিনিধি প্রীতিবিন্দু চাকমা জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের ২২তম অধিবেশনে বলেছেন যে, তথাকথিত উন্নয়ন আমাদের জীবিকা, বন, পরিবেশকে ধ্বংস করছে যা আমাদের স্বাস্থ্যের উপর এবং সবার জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের উপর প্রভাব ফেলছে।
তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের টেকসই আঞ্চলিক (টেরিটোরিয়েল) স্বাস্থ্যের স্বার্থে ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুযায়ী এ অঞ্চলে উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
গতকাল (১৮ এপ্রিল ২০২৩) সকালের অধিবেশনে, শ্রী প্রীতি বিন্দু চাকমা নিউইয়র্কে ১৭ এপ্রিল থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত চলতে থাকা জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের ২২তম অধিবেশনে ‘আইটেম ৩: অধিবেশনের বিশেষ থিম: আদিবাসী জাতি, মানব স্বাস্থ্য, গ্রহ (প্লানেটারী) ও আঞ্চলিক (টেরিটোরিয়েল) স্বাস্থ্য এবং জলবায়ু পরিবর্তন: একটি অধিকার-ভিত্তিক পদ্ধতি’ এর উপর তার বক্তব্য প্রদান করেন।
বক্তব্যে তিনি আরও বলেন যে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং জীববৈচিত্র্য ও বনের অবক্ষয় বিশ্বজুড়ে আদিবাসীদের আঞ্চলিক স্বাস্থ্য ও মঙ্গলের জন্য একটি গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করেছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে অনন্য সম্পর্ক, আর্থ-সামাজিক বঞ্চনা, রোগের একটি বৃহত্তর বিদ্যমান বোঝা, স্বাস্থ্যসেবার শোচনীয় সুযোগ ও গুণমান, এবং রাজনৈতিক প্রান্তিকতা সহ বিভিন্ন কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের অসামঞ্জস্যপূর্ণ হুমকি বিদ্যমান।
তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের ব্যাপক উজার, জীববৈচিত্র্য এবং জলাশয়ের উৎসের ধ্বংসের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জুম্ম জনগণও আজ আঞ্চলিক স্বাস্থ্যের মারাত্মক হুমকির মধ্যে রয়েছে।
আদিবাসী জুম্ম জনগণকে প্রভাবিত করছে এমন উন্নয়ন প্রকৌশল পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে: ঐতিহ্যবাহী জুম চাষের ভূমি এবং মৌজা ভূমি অস্থানীয়দের নিকট লিজে দেওয়া, বিলাসবহুল পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন, প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে সীমান্ত সড়ক ও সংযোগ সড়ক নির্মাণ, নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন ও সম্প্রসারণ ইত্যাদি।’
তিনি বলেন, ‘উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ, ঐতিহ্যবাহী নেতৃত্ব তথা স্থানীয় আদিবাসী জুম্ম জনগণের সাথে কোনো পরামর্শ ও সম্মতি ছাড়াই সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ঐ এলাকায় আদিবাসীদের বাড়িঘর, গাছপালা, স্কুল ও মন্দির ধ্বংস করে, আদিবাসী গ্রাম উচ্ছেদ করে এবং প্রাকৃতিক বন ও পাহাড় ধ্বংস করে মায়ানমার ও ভারত সীমান্ত বরাবর সীমান্ত সড়ক এবং এর সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে চলেছে। এই তথাকথিত উন্নয়ন আমাদের জীবিকা, বন, পরিবেশ ধ্বংস করছে যার প্রভাব আমাদের স্বাস্থ্য এবং সকলের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর পড়ছে।’
তার বক্তব্যের উপসংহারে তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুযায়ী, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা এবং কার্যাবলী হস্তান্তর করে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সকল অস্থায়ী ক্যাম্প ও সামরিক শাসন প্রত্যাহার করে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষ শাসনব্যবস্থা যথাযথভাবে প্রবর্তন করা অপরিহার্য।
একবার চুক্তিটি সম্পূণরূপে বাস্তবায়িত হলে, আমাদের আদিবাসী জুম্ম জনগণ এটিকে আঞ্চলিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হিসাবে বিবেচনা করবে এবং সকলের জন্য গ্রহস্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য বন, পাহাড় এবং জলাশয়ের উৎসগুলিকে ধরে রাখবে।’
২২তম অধিবেশনে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিনিধি হিসেবে প্রীতিবিন্দু চাকমার নেতৃত্বে অগাষ্টিনা চাকমা ও চঞ্চনা চাকমা অংশগ্রহণ করছেন। এছাড়া কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা, জাতিসংঘের এমরিপের সদস্য বিনতাময় ধামাই, এআইপিপি’র প্রতিনিধি হিসেবে সোহেল চন্দ্র হাজং ও চন্দ্রা ত্রিপুরা স্থায়ী ফোরামের ২২তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ করছেন। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোসাম্মৎ হামিদা বেগম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই, এনএসআই ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করছেন।
ইউএনপিএফআইআই-এর ২২তম অধিবেশন গত ১৭ এপ্রিল শুরু হয় এবং তা আগামী ২৮ এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে চলবে।