হিল ভয়েস, ৬ এপ্রিল ২০২৩, রাঙামাটি: রাঙামাটি জেলাধীন জুরাছড়ি উপজেলার দুমদুম্যা ইউনিয়নে সীমান্ত সড়ক নির্মাণকারী বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক জোরপূর্বক ও বেআইনীভাবে স্থানীয় হেডম্যানদের কাছ থেকে স্বাক্ষর গ্রহণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সেনাবাহিনী সীমান্ত সড়ক ও সীমান্ত সড়ক সংলগ্ন আশেপাশের সকল ভূমি খাসজমির অন্তর্ভুক্ত বলে স্বীকারোক্তি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মৌজার হেডম্যানের কাছ থেকে এই স্বাক্ষর গ্রহণ করছে।
উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি, পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ১৯৮৯ (১৯৯৮ সালে সংশোধিত), পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১ (২০১৬ সংশোধিত) এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি ১৯০০-এ স্বীকৃত পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের প্রথাগত ভূমি অধিকার অনুসারে সংশ্লিষ্ট মৌজার সকল ভূমি মৌজাবাসীর প্রথাগত ভূমি হিসেবে স্বীকৃত। এসব ভূমি হেডম্যানের পরিচালনায় জুম চাষ, বন সংরক্ষণ, চারণ ভূমি, বসতভিটা, শ্মশান ভূমি হিসেবে বন্টন ও ব্যবহার হয়ে থাকে।
ফলে জুম্মদের প্রথাগত ভূমি অধিকার মোতাবেক হেডম্যানের অধীন এসব মৌজা ভূমি খাস বলে বিবেচিত নয় এবং খাস ভূমি হিসেবে কোনো হেডম্যান কোনো প্রত্যয়নপত্রও প্রদান করতে পারে না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি দুমদুম্যা ইউনিয়নে সীমান্ত সড়ক নির্মাণকারী সেনাবাহিনীর সদস্যরা স্থানীয় গন্ডাছড়া মৌজার হেডম্যান সুংঙুর পাংখোয়াকে সীমান্ত সড়কের জায়গা ও এর আশেপাশের ভূমি সরকারি খাস জমি হিসেবে উল্লেখ করে সেনাবাহিনীর তৈরিকৃত একটি সনদপত্রে স্বাক্ষর দিতে নির্দেশ পাঠায় বলে জানা যায়। সেনাবাহিনীর তৈরিকৃত ঐ সনদপত্রে ‘নির্মিতব্য সীমান্ত সড়কটি সরকারি খাস জমির উপর দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। উক্ত সড়কটির এলাইনমেন্ট এবং এলাইনমেন্ট সংলগ্ন সকল জমি সরকারী খাস জমির অন্তর্ভুক্ত।’ বলে উল্লেখ করে মনগড়া বক্তব্য প্রদান করা হয়।
ইতোমধ্যে দুমদুম্যা ইউনিয়নে অবস্থিত গাছবাগান সেনা ক্যাম্পের ওয়ারেন্ট অফিসার সাইফুল উক্ত বক্তব্য সম্বলিত সনদপত্র শীর্ষক একটি কাগজ ১৫০নং দুমদুম্যা মৌজার হেডম্যান ও কার্বারিদের পাঠিয়েছেন এবং তাদের এতে স্বাক্ষর দিতে হবে বলে নির্দেশ পাঠিয়েছেন। তবে ওয়ারেন্ট অফিসার সাইফুল হেডম্যান ও কার্বারিদের উদ্দেশ্য করে এটাও বলেছেন যে, ‘আপনারা স্বাক্ষর না করলেও তাতে কোনো কিছু আসে যায় না।’
অপরদিকে পার্শ্ববর্তী রেংখ্যং চংড়াছড়ি মৌজার হেডম্যান বলভদ্র চাকমার কাছ থেকেও এ ধরনের স্বাক্ষর আদায় করা হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ ও স্থানীয় জুম্ম জনগণের মতামত এবং স্বাধীন ও পূর্বাবহিত সম্মতি ব্যতিরেকে সরকার সেনাবাহিনীর মাধ্যমে তিন পার্বত্য জেলায় সীমান্ত সড়ক ও সংযোগ সড়ক নির্মাণ করছে। জুম্মদের বাগান-বাগিচা, বসতভিটা, ঘরবাড়ি, মন্দির, স্কুল ও বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংস করে এবং জায়গা-জমি জবরদখল করে এই সড়ক নির্মাণ ও এ সড়কের সাথে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে।
কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত জুম্মদেরকে কোন ধরনের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হচ্ছে না। উপরন্তু এসব সীমান্ত ও সংযোগ সড়ক সংলগ্ন জুম্মদের নিজস্ব জায়গা-জমিতে জুম্ম গ্রামবাসীদেরকে ঘরবাড়ি নির্মাণে ও জুম চাষে বাধা প্রদান করা হচ্ছে।
স্থানীয় অনেকে অভিযোগ করেছেন যে, মূলত ক্ষতিগ্রস্ত জুম্মদেরকে ক্ষতিপূরণ প্রদান না করা এবং সীমান্ত সংলগ্ন জায়গা-জমিতে জুম্মদেরকে বসতবাড়ি নির্মাণে বাধা প্রদানের হীনউদ্দেশ্যেই সেনাবাহিনী হেডম্যানদের কাছ থেকে এসব ভূমিকে খাস ভূমি হিসেবে প্রত্যয়ন প্রদানের জন্য জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সীমান্ত সড়ক সংলগ্ন ব্যাপক এলাকা থেকে জুম্মদের তাড়িয়ে দেয়ার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে সেনাবাহিনী এধরনের হীনতৎপরতা চালাচ্ছে বলে স্থানীয় অনেক মুরুব্বী অভিমত ব্যক্ত করেন।