হিল ভয়েস, ২০ মার্চ ২০২৩, রংপুর: পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে সম্মিলিত বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে রংপুরে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠানে বক্তাগণ বলেছেন, সরকার চুক্তি করে ঠিকই, কিন্তু সেই চুক্তির বাস্তবায়ন আলোর মুখ দেখে না। ২৫ বছর পরেও পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়ন হয়নি। তাই আমাদের লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সরকারকে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে বাধ্য করতে হবে। সেই সঙ্গে পাহাড় এবং সমতলের আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি আদায় করতে হবে। এটি আমাদের অধিকার আদায়ের লড়াই।
আজ (২০ মার্চ ২০২৩) বিকাল ৪ টায় রংপুর নগরের টাউন হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন’ এর উদ্যোগে উক্ত সংহতি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশ শেষে টাউন হল সংলগ্ন শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে একটি বিরাট সম্মিলিত গণমিছিল বের করা হয় এবং মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এছাড়া সমাবেশ শুরুর আগে বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করা হয় এবং মিছিলসমূহ রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে সমবেত হয়।
বিকেল ৪ টায় সংহতি সমাবেশের উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোজাহার আলী। তাঁরই সভাপতিত্বে এবং জাসদ রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি গৌতম রায়ের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুল রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশ জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরিন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাহীন রহমান, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য নজরুল ইসলাম হাক্কানী, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা প্রমুখ।
পাহাড়ের অশান্তি এখন সারাদেশের অশান্তি, পাহাড়ি–বাঙালি মিলে চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারকে বাধ্য করব”- চট্টগ্রামে মেনন
এছাড়া সমাবেশে রংপুরের প্রগতিশীল ব্যক্তিত্ব, শিক্ষক, আইনজীবী, রাজনৈতিক কর্মী, মানবাধিকার কর্মী, নাগরিক সমাজসহ বিভিন্ন ছাত্র ও যুব সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, পার্বত্য চুক্তির ২৫ বছর পেরিয়ে গেলেও চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। এখনও ঔপনিবেশিক কায়দায় পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর উপর শাসন-শোষণ অব্যাহত রয়েছে।
সমাবেশে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নসহ ৫ দফা ও সমতলের আদিবাসীদের জন্য ২ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য দাবিসমূহ নিম্নরূপ:
১.পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সময়সূচী ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে চুক্তির দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।
২. পাহাড়ে সামরিক কর্তৃত্ব ও পরোক্ষ সামরিক শাসনের স্থায়ী অবসান করতে হবে।
৩. আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক করা এবং স্থানীয় শাসন নিশ্চিত করতে পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক এসব পরিষদের যথাযথ ক্ষমতায়ন করতে হবে।
৪. পার্বত্য ভূমি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনকে কার্যকরের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু ও ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থীদের পুনর্বাসন করে তাদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
৫. দেশের মূল স্রোতধারার অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও স্থায়িত্বশীল উন্নয়নে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের অংশীদারত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
সমতলের আদিবাসীদের জন্য দাবিসমূহ:
১. ইউনিয়ন পরিষদসহ সকল স্তরের স্থানীয় সরকারে সমতলের আদিবাসীদের জন্য বিশেষ আসন সংরক্ষণ এবং আদিবাসী জনগণের জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
২. সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে।
উল্লেখ্য, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন’ এর উদ্যোগে পার্বত্য চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবিতে গড়ে ওঠা এটি দ্বিতীয় বিভাগীয় সমাবেশ। এর আগে গত ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ এই প্ল্যাটফর্মটির উদ্যোগে চট্টগ্রামে প্রথম বিভাগীয় সমাবেশ সম্পন্ন হয়েছে।