হিল ভয়েস, ৩০ মার্চ ২০২৩, রাঙামাটি: রাঙামাটি জেলাধীন লংগদু উপজেলার মাইনীমুখ ইউনিয়নের সেটেলার এলাকার বাসিন্দা মোঃ সাকিব হোসেন মান্না (২১) নামে এক মুসলিম বাঙালি সেটেলার ও তার সহযোগীদের কর্তৃক ১০ম শ্রেণিতে পড়–য়া এক চাকমা কিশোরী (১৫) অপহরণের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত ২৩ মার্চ ২০২৩ রাতের বেলায় লংগদু ইউনিয়নের মহাজনপাড়ার নিজ বাড়ি থেকে এই কিশোরী অপহরণের ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয় এলাকাবাসী ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। অপহরণের শিকার কিশোরীর মা রিতাসী চাকমা নিজেই বাদী হয়ে এই অপহরণের বিষয়ে গত ২৬ মার্চ ২০২৩ লংগদু থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
রিতাসী চাকমা তার অভিযোগপত্রে মোঃ সাকিব হোসেন মান্নাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে এই অপহরণের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন- (১) মোঃ সাকিব হোসেন মান্না (২১), পীং-মোঃ জামাল উদ্দিন, ঠিকানা- সোনাই (ইসলামাবাদ), ৬নং মাইনীমুখ ইউনিয়ন, লংগদু; (২) মোঃ জামাল উদ্দিন (৫০), পীং-মৃত তায়েব আলী, ঠিকানা-ঐ; (৩) মোছাঃ সালমা বেগম (৪৫), স্বামী-মোঃ জালাল উদ্দিন, ঠিকানা-ঐ; (৪) মোছাঃ কাজলী বেগম (৩০), পীং-মোঃ জামাল উদ্দিন, বর্তমান ঠিকানা- ঢাকা; (৫) মোঃ শামীম হোসেন (২৮), পীং-মোঃ জামাল উদ্দিন, ঠিকানা- সোনাই (ইসলামাবাদ), ৬নং মাইনীমুখ ইউনিয়ন, লংগদু; (৬) মোঃ শাকিল হোসেন (২৫), পীং-মোঃ জামাল উদ্দিন, ঠিকানা-ঐ; (৭) মোঃ শাহ আলী (২৮), পীং-আকুবর আলী, ঠিকানা- ঐ; (৮) মোঃ ছরোয়ার (৩৮), পীং-মৃত মুক্তার আলী, ঠিকানা-ঐ; (৯) মোঃ আজিজুল (৩২), পীং-আব্দুল মালেক, ঠিকানা-ঐ; (১০) মোঃ রেজাউল (৩৫), পীং-আব্দুল বারেক, ঠিকানা-ঐ; (১১) মোঃ আলতাব খাঁ (৬০), পীং-অজ্ঞাত, ঠিকানা-ঐ; (১২) মোঃ জামাল উদ্দিন (৩৯), পীং-অজ্ঞাত, ঠিকানা- ঐ; (১৩) মোঃ কামাল (৩৬), পীং-অজ্ঞাত, ঠিকানা-ঐ।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ মার্চ ২০২৩ ভোর রাতের দিকে মোঃ সাকিব হোসেন মান্না তার কয়েকজন সহযোগী নিয়ে উক্ত কিশোরীর বাড়িতে এসে কিশোরীকে তুলে নিয়ে যায়। কিশোরী মা রিতাসী চাকমা মোঃ সাকিব হোসেন মান্না তার নাবালক মেয়েকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ফুসলিয়ে অপহরণ করেছে বলে অভিযোগ করেন।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্র আরও জানায়, বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করার পর উক্ত সেটেলার বাঙালি মোঃ সাকিব হোসেন মান্না ও তার সহযোগীরা কিশোরীকে আটকে রেখেছে বলে নিশ্চিত হলে অপহৃতের পরিবার ও স্থানীয় মুরুব্বিরা অভিযুক্তের অভিভাবক ও আত্মীয়-স্বজনকে চাপ সৃষ্টি করে। অভিযুক্তের অভিভাবক ও আত্মীয়-স্বজনরা এক পর্যায়ে অপহরণের বিষয়টি স্বীকার করে এবং মামলা না করার শর্তে কিশোরীকে ৪৮ঘন্টার মধ্যে কিশোরীর অভিভাবকের হাতে বুঝিয়ে দিবে বলে অঙ্গীকার প্রদান করে। কিন্তু নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরও কিশোরীকে হস্তান্তর না করে মোঃ সাকিব হোসেন মান্নার অভিভাবকরা উল্টো অপহরণকারীকে কিশোরীকে নিয়ে অন্যত্র পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করে এবং কিশোরীকে মোঃ সাকিব হোসেন মান্নার সাথে বিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব পাঠায়।
এদিকে অভিযুক্ত অপহরণকারী ও তার আত্মীয়-স্বজনরা অপহৃত কিশোরীর মাকে যেকোনো সময় বড় ধরনের ক্ষতি করার হুমকি দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন কিশোরীর মা রিতাসী চাকমা।
অপরদিকে রিতাসী চাকমা অভিযোগ দাখিল করলেও থানা কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগকে মামলা হিসেবে তালিকাভুক্ত করেনি বলে জানা গেছে।
এ নিয়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে এপর্যন্ত ৮ জন জুম্ম নারী সহিংসতার শিকার হয়। অত্যন্ত উদ্বেগজনক যে, এই ৮টি ঘটনার শুধুমাত্র একটি ঘটনার একজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও বাকী ৭টি ঘটনার ২২ জন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেনি। এভাবে বিচারহীনতা ও দায়মুক্তির ফলে একের পর এক জুম্ম নারী সহিংসতার শিকার হচ্ছে।