হিল ভয়েস, ৫ মার্চ ২০২৩, বান্দরবান: বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নের মুয়ালপি পাড়ার আশেপাশের ৭টি মারমা পাড়ার মুরব্বী ও কার্বারীদের নিয়ে মিটিং ডেকে বমপার্টি সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রে আজ রবিবার (৫ মার্চ) দুপুর ১২.০০ টার দিকে পাইন্দু ইউনিয়নের মুয়ালপি পাড়ার আশেপাশের মারমা পাড়ার মুরব্বী ও কার্বারীদের নিয়ে মুয়ালপি পাড়ার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই মিটিংটি আয়োজন ডাকে বমপার্টি খ্যাত কেএনএফ।
এই মিটিঙে মুয়ালপি পাড়ার পার্শ্ববর্তী চাইনাগ্র পাড়া, উজানী পাড়া (নিউ), উজানী পাড়া (ওল্ড), নিয়ংখিয়ং পাড়া, সেগুন পাড়া এবং সেগুন পাড়া (নীচে) সহ প্রায় ৭টি মারমা পাড়ার মুরব্বীদেরকে ডাকা হয়।
কিন্তু মিটিঙে কেবলমাত্র উজানি পাড়া (নিউ)-এর কার্বারী, চাইনাগ্র পাড়ার কার্বারী, নিয়ংখিয়ং পাড়ার কার্বারী ও মুয়ালপি পাড়ার মারমা জনগোষ্ঠীর কয়েকজন লোক অংশগ্রহণ করেন।
উক্ত মিটিঙে বমপার্টি সন্ত্রাসীরা মারমা গ্রামবাসীদেরকে নির্দেশ দেয় যে, গ্রামের কোন ব্যক্তি অন্য কোন প্রতিপক্ষ সশস্ত্র গ্রুপে যোগ দিয়ে থাকলে তাদের তালিকা দিতে হবে এবং প্রতিপক্ষ সশস্ত্র গ্রুপ গ্রামে আসলে তাদেরকে খবর দিতে হবে। অন্যথায় চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে মারমা গ্রামের মুরুব্বীদের হুমকি প্রদান করে বমপার্টি সন্ত্রাসীরা।
উল্লেখ্য যে, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ বমপাটি সন্ত্রাসীরা রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নের গঙ্গাছড়া (টাইগার পাড়া) থেকে চারজন তঞ্চঙ্গ্যা গ্রামবাসীকে অপহরণ করে ও দুই দিন হয়রানির পর ছেড়ে দেয়। এসময় রুমা ও বিলাইছড়িতে তারা তঞ্চঙ্গ্যা ও মারমা গ্রামবাসীদেরকে স্ব স্ব গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হুমকি দেয়। এছাড়া রুমার পাইন্দু ইউনিয়নে অন্তত দুইটি স্কুল দখল করে বমপার্টি সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ক্যাম্প স্থাপন করে। এর ফলে ভয়ে ইউনিয়নের আরো অন্তত ৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ হয়ে পড়ে।
আরো উল্লেখ্য যে, ২০২০ সাল থেকে কেএনএফ অর্থের বিনিময়ে রুমার প্রত্যন্ত অঞ্চলে তাদের আস্তানায় ‘জামায়াতুল আনসার হিল ফিন্দাল শারক্বীয়া’ নামে আন্তর্জাতিক ইসলামী সন্ত্রাসী সংগঠনকে আশ্রয় ও সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে চলেছে এবং নিরীহ মানুষজনের উপর খুন-খারাবী, অপহরণ, মারধর, হুমকি-ধামকিসহ নিপীড়ন-নির্যাতন করে চলেছে।
কেএনএফের নির্যাতন থেকে বম জনগোষ্ঠীর খ্রীষ্টান পাদ্রীরাও রেহাই পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। গত বছর থেকে যাবৎ কেএনএফ বম জনগোষ্ঠীর ১১ জনসহ ২২ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে অপহরণ, বম জনগোষ্ঠীর ৩ জনসহ কমপক্ষে ৭ জনকে হত্যা, প্রায় দুই ডজন গ্রামের এক হাজারের বম, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা ও মারমা অধিবাসী উচ্ছেদ করেছে। বস্তুত বমপার্টি সন্ত্রাসীদের মুখে গুলি করে হত্যা, অপহরণ, মারধর, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার হুমকি ইত্যাদি শব্দ ছাড়া অন্য কোন শব্দ শোনা যায় না বলে স্থানীয় গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেছে।