বিলাইছড়ির গঙ্গাছড়া থেকে তঞ্চঙ্গ্যা গ্রামবাসীদেরকে পাড়া ছেড়ে চলে যেতে বমপার্টির হুমকি

হিল ভয়েস, ১৫ মার্চ ২০২৩, রাঙ্গামাটি: সম্প্রতি রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নের গঙ্গাছড়া থেকে তঞ্চঙ্গ্যা গ্রামবাসীদেরকে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে নির্দেশ দিয়েছে বমপার্টি সশস্ত্র সন্ত্রাসী। অন্যথায় যে কোন অঘটনের জন্য গ্রামবাসীরা দায়ী থাকবে বলে তারা হুমকি প্রদান করে।

রেইংখ্যং ভ্যালীর অন্তর্গত গঙ্গাছড়া তঞ্চঙ্গ্যা পাড়াবাসীকে কেএনএফ নামক বমপার্টির চলমান হুমকির মধ্যে গত ৬ মার্চ ২০২৩ সেনাবাহিনীর একটি দল গঙ্গাছড়ায় টহল দিতে যায়। সেখানে গিয়ে তারা পাড়াবাসীকে বলেছিল যে, তারা গ্রামবাসীদেরকে নিরাপত্তা দিতে পারছে না এবং পারবে বলেও তারা মনে করে না। অতএব নিরাপদ জায়গায় গিয়ে আশ্রয় নিতে গ্রামবাসীদেরকে পরামর্শ দিয়েছে সেনা সদস্যরা।

সেনাবাহিনীর এহেন পরামর্শে তঞ্চঙ্গ্যা গ্রামবাসীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ মার্চ ২০২৩ গঙ্গাছড়া পাড়া থেকে ৬টি পরিবারের ৫১ জন গ্রামবাসী নিজেদের উদ্যোগে নিরাপদ এলাকায় সরে গেছে বলে জানা গেছে। উক্ত পরিবারগুলো হচ্ছে-

১. লাম্বাহুলো তঞ্চঙ্গ্যা (২৮), পীং: বুজমনি তঞ্চঙ্গ্যা ও তার পরিবার (৩ জন)।

২. নতুন জয় তঞ্চঙ্গ্যা (৩৬), পীং:বিঞ্চু তঞ্চঙ্গ্যা ও তার পরিবার (৯ জন)।

৩. বিপন তঞ্চঙ্গ্যা (২৬), পীং: রনিকুমার তঞ্চঙ্গ্যা ও তার পরিবার (১৫ জন)।

৪. অর্জুন তঞ্চঙ্গ্যা (৩৭), পীং: রসেয়ে তঞ্চঙ্গ্যা ও তার পরিবার (১০ জন)।

৫. যুদ্ধমনি তঞ্চঙ্গ্যা (৪৫), পীং: রুসেন তঞ্চঙ্গ্যা ও তার পরিবার (১০ জন)।

৬. জয়াকো তঞ্চঙ্গ্যা (৪০) ও তার পরিবার (৪ জন)।

উল্লেখ্য যে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ বড়থলি ইউনিয়নের গঙ্গাছড়া (টাইগার পাড়া) থেকে পাড়ার কার্বারী (গ্রাম প্রধান) সহ ৪ জন তঞ্চঙ্গ্যা গ্রামবাসীদেরকে রুমার পাইন্দু ইউনিয়নের আর্থাহ পাড়ায় ডেকে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হুমকি দিয়েছিল বমপার্টি সন্ত্রাসীরা।

আরো উল্লেখ্য যে, এসময় রুমার পাইন্দু ইউনিয়নের মুয়ালপি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পাকনিয়ার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দখল করে বমপার্টির সন্ত্রাসীরা নিজেদের ক্যাম্প স্থাপন করেছিল। ফলে বমপার্টির ভয়ে এসময় পাইন্দু ইউনিয়নের ৩টি প্রাইমারী স্কুল এবং রেমাক্রিপ্রাংসা ইউনিয়নের ৩টি প্রাইমারী স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। ফলে এই ৬টি স্কুল প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

এছাড়া গত ৫ মার্চ ২০২৩ পাইন্দু ইউনিয়নের মুয়ালপি পাড়ার আশেপাশের ৭টি মারমা পাড়ার মুরব্বী ও কার্বারীদের নিয়ে মিটিং ডেকে বমপার্টি সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হুমকি দিয়েছিল।

আরো উল্লেখ্য যে, ২০২২ সালের জুন মাসে বড়থলি ইউনিয়নের সাইজাম ত্রিপুরা পাড়ায় গুলি বর্ষণ এবং তিনজন নিরীহ ত্রিপুরা গ্রামবাসীকে হত্যা ও দুই শিশুকে গুলিবিদ্ধ করার পর বমপার্টি সন্ত্রাসীরা বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়ন এবং বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলাধীন বিভিন্ন তঞ্চঙ্গ্যা ও ত্রিপুরা পাড়া উচ্ছেদে করেছিল। এতে প্রায় ১০০-এর অধিক তঞ্চঙ্গ্যা ও ত্রিপুরা পরিবার উচ্ছেদ করেছিল বমপার্টি সন্ত্রাসীরা। সেই সময়ও সেনাবাহিনী ভুক্তভোগী তঞ্চঙ্গ্যা ও ত্রিপুরা পরিবারের নিরাপত্তা বিধানে কোন ব্যবস্থা না করে প্রকারান্তরে বমপার্টির সন্ত্রাসী তৎপরতাকে অবাধে চলতে দিয়েছিল।

গত বছর থেকে এ যাবৎ কেএনএফ বম জনগোষ্ঠীর ১১ জনসহ ২৬ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে অপহরণ, বম জনগোষ্ঠীর ৩ জনসহ কমপক্ষে ৭ জনকে হত্যা, প্রায় দুই ডজন গ্রামের এক হাজারের বম, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা ও মারমা অধিবাসী উচ্ছেদ করেছে। বমপার্টির উচ্ছেদের শিকার হয়ে বম জনগোষ্ঠীর প্রায় ছয় শত গ্রামবাসী শরণার্থী হিসেবে মিজোরামে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে।

More From Author