হিল ভয়েস, ৩ মার্চ ২০২৩, খাগড়াছড়ি: সম্প্রতি খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়িতে ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক জুম্ম স্কুলছাত্রীকে (১৪) তুলে নিয়ে গিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ এবং এক পর্যায়ে অন্যত্র পাচারের চেষ্টা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, গত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ দুপুরের দিকে ওই স্কুল ছাত্রীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে এবং এর পরপরই দুর্বৃত্তদের কর্তৃক আটক রেখে পালাক্রমে ধর্ষণের ঘটনা ও পাচারের চেষ্টার ঘটনা ঘটে। কিন্তু ভুক্তভোগী ছাত্রী ও তার পরিবার দুর্বৃত্তদের হুমকির ভয়ে ঘটনাটি এতদিনে প্রকাশ করার সাহস পায়নি।
ভুক্তভোগীর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ দুপুরের দিকে পানছড়ি উপজেলা সদরের রাঙাপানিছড়া গ্রামের ওই ছাত্রী তাদের বাড়ির পার্শ্ববর্তী মালটা বাগানে যায়। এসময় ওই ছাত্রী বাগানে একসঙ্গে এক ত্রিপুরা ছেলে ও এক চাকমা মেয়ের মুখোমুখি হয়। এমন সময় ওই ত্রিপুরা ছেলে ও চাকমা মেয়ে স্কুল ছাত্রীটির নাকে-মুখে চেতনানাশক স্প্রে প্রয়োগ করে এবং সাথে সাথে মাস্ক পরিয়ে দিয়ে ছাত্রীটিকে পানছড়ি বাজারের তালুকদার পাড়া এলাকায় এক বড়ুয়ার বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে ত্রিপুরা ছেলে ও চাকমা মেয়েটি স্কুল ছাত্রীটিকে জনি বড়ুয়া নামে এক মোটর সাইকেল ব্যবসায়ী ও কাজল বড়ুয়া নামে স্থানীয় এক দোকানদারের হাতে তুলে দেয়। এরপর জনি বড়ুয়া ও কাজল বড়ুয়া ওই বাড়িতে দরজা-জানালা বন্ধ করে ওই ছাত্রীকে আটক করে রাখে।
পরে বিকাল আনুমানিক ৫ টার দিকে জনি বড়ুয়া ও কাজল বড়ুয়া ছাত্রীটিকে চিৎকার করলে মেরে ফেলার হুমকি দেয় এবং উপজেলা সদরের কলাবাগান এলাকার পাশে মোঃ মোমিন নামের এক ব্যক্তির স’মিলের পেছনে নিয়ে যায়। এসময় জোরপূর্বক ছাত্রীটির চুল বয়কাট স্টাইলে কেটে দেয়া হয়। এরপর সেখান থেকে আবার ছাত্রীটিতে পূর্বের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে আটক করে রাখা হয়।
রাতে ছাত্রীটির জন্য একজোড়া জুতা ও টিশার্ট নিয়ে এনে ছাত্রীটিতে সেগুলো পরতে বলা হয়। এরপর জনি বড়ুয়া ও কাজল বড়ুয়া মোবাইলে এক ব্যক্তির সাথে কথা বলে এবং ছাত্রীটিতে ঢাকায় পাঠাবে বলে জানায়।
ঐ রাতেই এক পর্যায়ে জনি বড়ুয়া ও কাজল বড়ুয়া ছাত্রীটির কক্ষে প্রবেশ করে জোরপূর্বক ছাত্রীটিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।
পরের দিন ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সন্ধ্যার দিকে জনি বড়ুয়া ও কাজল বড়ুয়া মোটর সাইকেলে করে ছাত্রীটিকে উল্টাছড়ির একটি খালি গুদাম ঘরে নিয়ে গিয়ে সেখানে মোঃ সাকিব ও তার এক সহযোগীর হাতে তুলে দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পর মোঃ সাকিব ও তার সহযোগী মিলে পালাক্রমে ছাত্রীটিকে ধর্ষণ করার পর সেখান থেকে ছাত্রীটিকে নিয়ে গিয়ে একটি বাসায় রাত্রী যাপন করে।
এদিকে চেতনানাশক ঔষধ প্রয়োগ ও উপর্যুপরি ধর্ষণের ফলে ছাত্রীটির শারীরিক ও মানসিক অবস্থা ভেঙে পড়ে। এমতাবস্থায় ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সকাল ৮ টার দিকে মোঃ সাকিব ও তার সহযোগী ছাত্রীটিকে জখম অবস্থায় উল্টাছড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে পানছড়ি বাজারে একটি দোকানের পাশে ফেলে রেখে চলে যায়। পরে ওই ছাত্রী প্রায় অচল অবস্থায় পার্শ্ববর্তী মুক্তা লাইব্রেরীতে চলে যায়।
পরে ওই ছাত্রীর দাদু প্রায় অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় মুক্তা লাইব্রেরী থেকে ছাত্রীটিকে উদ্ধার করে ছাত্রীটির বাড়িতে নিয়ে যায়। ছাত্রীটির গুরুতর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা দেখে পরিবারের লোকজন ছাত্রীটিকে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে ভর্তি করান। চার দিন চিকিৎসার পর ছাত্রীটি কিছুটা সুস্থ হলে ছাত্রীটিতে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
জানা গেছে, ধর্ষণকারীরা ছাত্রীটিকে বারবার মেরে ফেলার হুমকি দিলে ছাত্রী ও তার পরিবার ঘটনাটির বিষয়ে থানায় অভিযোগ করতে ভয় পায়। তবে পরিবারের লোকজনের মধ্যে বিষয়টি জানাজানি হলে সেখান থেকে জঘন্য এই ঘটনাটির বিস্তারিত বিবরণ জানা যায়।
উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ আনুমানিক দুপুর ১২ টার দিকে বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের হারগাজা এলাকায়ও মোঃ কায়সার, পীং-আবদুল্লাহ নামে এক সেটেলার কর্তৃক এক মারমা নারীকে (২৪) ধর্ষণ করার অভিযোগ পাওয়া। এই ঘটনায় থানায় মামলা হলেও পুলিশ ধর্ষককে গ্রেপ্তার করতে পারেনি বলে জানা যায়। ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কর্তৃক অপরাধী মোঃ কায়সারকে পালাতে সাহায্য করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অপরদিকে, একই দিন (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩) রাত ৭:৩০ টায় খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার সদর ইউনিয়ন এলাকায় মোঃ সাদ্দাম (২৮) নামে এক সেটেলার বাঙালি কর্তৃক এক জুম্ম গৃহবধুকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া যায়। অভিযুক্ত সাদ্দাম হোসেন মহালছড়ি উপজেলায় সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজের এক শ্রমিক বলে জানা যায়।