হিল ভয়েস, ৩ মার্চ ২০২৩, ঢাকা: বান্দরবান জেলার লামার ফাঁসিয়াখালিতে এক আদিবাসী মারমা নারীকে ধর্ষণকারী ও নির্যাতনকারী মোঃ কায়সারকে দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আদিবাসী যুব ও ছাত্র সংগঠনসমূহের উদ্যোগে ঢাকায় এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ ৩ মার্চ ২০২৩ সকাল ১০ টায় ঢাকার শাহবাগে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ এবং সঞ্চালনা করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক জগদীশ চাকমা। সমাবেশে সংহতি বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল, বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক টনি ম্যাথিউ চিরান, বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সমন্বয়ক ফাল্গুনী ত্রিপুরা, বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস) এর ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি ডন জেত্রা, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস, ঢাকা মহানগর শাখার সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অংশৈসিং মারমা এবং অন্যান্য যুব সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ বলেন, “পাহাড়ে নিরাপত্তার নামে কত নাটক দেখলাম। কত কত নিরাপত্তাবাহিনী আছে। কিন্তু এক সপ্তাহের বেশী হয়ে গেল আপনারা কিছুই করতে পারেন নাই। এরকম নিরাপত্তার দরকার নাই আমাদের। কদিন আগেও ম্রো এবং ত্রিপুরা আদিবাসীদের উচ্ছেদ করতে জুম পোড়ানো, ঝিরিতে বিষ প্রয়োগ থেকে শুরু করে কত ষড়যন্ত্র করতে দেখেছি। আমরা এটাকে কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে করি না। এটি একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।”
তিনি আরো বলেন, “আপনি পাহাড়ে আগুন জ্বালান, ধর্ষণ করেন, আপনার কোনো সমস্যা হবে না। কারণ নিরাপত্তা বাহিনী আপনাকে নিরাপত্তা দিবে। এটা একটি অলিখিত সমর্থন নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে।”
তিনি বলেন, “একটা চেয়ারম্যান কিভাবে ধর্ষণ মামলাকে ধামাচাপা দিতে ষড়যন্ত্র করতে পারে? আমরা তার পদত্যাগের দাবি জানাই।”
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি রেং ইয়ং ম্রো বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর আস্থা এমনি এমনি উঠে যায় নাই। ৮ দিন পরও যখন বিচার পাই না, তখনই উঠে যায়। যেদিন থেকে ধর্ষক কায়সারকে সেখানকার মহিলা মেম্বার জোসনা আক্তার তার নিজ হেফাজতে নিয়ে যায়, সেদিন থেকে সে লাপাত্তা। নারীদের ধর্ষণ, উন্নয়নের নামে জঘন্য পর্যটন করে পাহাড়িদের নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে প্রশাসন।”
সমাবেশে সংহতি বক্তব্য রাখেন গানের দল সমগীতের ভোকাল বিথী ঘোষ। তিনি বলেন, “ধর্ষণের বিচার পাওয়ার সাথে ক্ষমতার একটি গভীর সম্পর্ক আছে। সেটেলাররা পাহাড়ে সবসময় শক্তিশালী। কেননা নিরাপত্তাবাহিনী সবসময় তাদের শক্তির যোগান দিয়ে আসছে।”
উল্লেখ্য যে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, শুক্রবার দুপুরের দিকে ওই মারমা নারী (২৪) বাড়ির পাশের ক্ষেতে শাক সংগ্রহ করতে গেলে এসময় মোঃ কায়সার (৩৬), পীং-আবদুল্লাহ নামে এক সেটেলার বাঙালি ওই নারীর মুখ চেপে ধরে জোরপূর্বক পাশের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। জানা গেছে, ধর্ষক মোঃ কায়সারের বাড়ি ফাঁসিয়াখালি ইউনিয়নের হারগাজা ফুটের ঝিরি এলাকায়।
আরও জানা গেছে, ঘটনার পরপরই এলাকার লোকজন ধর্ষক মোঃ কায়সারকে হাতেনাতে আটক করে এবং গণধোলাই দেয়। কিন্তু এলাকার চেয়ারম্যান চিকিৎসার নামে ধর্ষক মোঃ কায়সারকে কক্সবাজারের চকরিয়ায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। পরে ধর্ষণকারী মোঃ কায়সার হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায় বলে খবর পাওয়া যায়।
এদিকে সর্বশেষ খবরে, আজ লামা থানা পুলিশ ধর্ষণকারী মোঃ কায়সারকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানা গেছে।