হিল ভয়েস, ১০ মার্চ ২০২৩, ঢাকা: মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ঝিমাই খাসিয়া পুঞ্জিতে প্রাকৃতিক গাছ কাটার পাঁয়তারা বন্ধের দাবিতে বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আজ ১০ মার্চ ২০২৩, শুক্রবার সকালে ঢাকার শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করে।
মানববন্ধনের আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ এবং এতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামান, ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, মৌলভীবাজার জেলার পাহাড়ি বনাঞ্চলে প্রায় ৮০টি খাসিয় পুঞ্জি রয়েছে, যেখানে প্রধানত খাসিয়া ও গারো আদিবাসীরা স্মরণাতীত কাল থেকে প্রাণ-প্রকৃতি, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে বিশেষ কৃষি পদ্ধতিতে পানচাষ করে নিজেদের জীবন জীবিকা ও অস্তিত্ব রক্ষা করে আসছেন। এর পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি পুঞ্জিতে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর (বাঙালি) সহস্রাধিক সদস্য পান চাষ, সংগ্রহ, পরিবহন ও বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থেকে স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। দুর্গম এসব পাহাড়ি অঞ্চলে এই আদিবাসীরা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বিশুদ্ধ খাবার পানি, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সংযোগবিহীন অবস্থায় যুগ যুগ ধরে কঠিন সংগ্রাম করে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করে আসছেন। এই আদিবাসীরা বংশ পরম্পরায় মৌলভীবাজারের এই বিস্তীর্ণ বনভূমিতে বসবাস করে আসলেও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রায় ৫২ বছর পার হয়ে গেলেও প্রথাগত এ ঐতিহ্যগত ভূমিতে তাদের মালিকানা স্বীকৃত হয়নি।
বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে আইএলও কনভেনশন ১০৭ অনুস্বাক্ষর করেন, যেখানে আন্তর্জাতিকভাবে আদিবাসীদের প্রথাগত ও ঐতিহ্যগত ভূমি অধিকার স্বীকৃত এবং অনুস্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র তা বাস্তবায়নে দায়বদ্ধ। তা সত্ত্বেও বিগত ৫০ বছরেও এতদাঞ্চলের আদিবাসীদের প্রথাগত ভূমির মালিকানা স্বীকৃত না হওয়ায় যুগ যুগ ধরে আদিবাসীরা নানাভাবে বনবিভাগ ও প্রভাবশালীদের মাধ্যমে উচ্ছেদ, হামলা, মামলা ও হয়রানির স্বীকার হয়ে আসছেন। খাসিয়াদের ভোগদখলীয় প্রাকৃতিক বনে সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের নামে স্থানীয় প্রভাবশালী ভূমিদস্যুদের সম্পৃক্ত করে একদিকে প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে, অপরদিকে আদিবাসীদের সঙ্গে তাদের সংঘাতময় পরিস্থিতি দাঁড় করানো হয়েছে।
এসময় বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে ঝিমাই খাসিয়াপুঞ্জিতে প্রাকৃতিক গাছ কাটা বন্ধসহ পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়। তাদের উত্থাপিত দাবিগুলো হচ্ছে-
১. ঝিমাই খাসিয়া পুঞ্জির প্রাকৃতিক গাছ কাটার পাঁয়তারা বন্ধ করতে হবে।
২. ঝিমাই পুঞ্জির যাতায়াতের রাস্তায় চা বাগান কর্তৃপক্ষের সব বাধা অপসারণ করতে হবে।
৩. সমতল আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে।
৪. খাসিয়া আদিবাসীদের জীবন জীবিকার নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও ভূমি অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. আদিবাসী অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সব সনদসহ আইএলও কনভেনশন ১০৭ বাস্তবায়ন করতে হবে।