হিল ভয়েস, ৩১ মার্চ ২০২৩, বান্দরবান: বান্দরবান জেলার লামা উপজেলায় লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ কর্তৃক দায়েরকৃত মিথ্যা মামলায় বান্দরবান জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন চাইতে গিয়ে লাংকম ম্রো পাড়ার কার্বারি ও লামা সরই ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব লাংকম ম্রো’কে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল (৩০ মার্চ ২০২৩) লাংকম ম্রো, রংধজন ত্রিপুরা, রেংয়েন ম্রো, রিংরং ম্রো, দুইথং ম্রোসহ ৮ জন জামিনের জন্য বান্দরবান জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিনের আবেদন জানান। মামলার শুনানী শেষে এক পর্যায়ে আদালতের হাকিম নাজমুল হোসেন রংধজন ত্রিপুরাসহ ৭ জনের জামিন মঞ্জুর করলেও লাংকম ম্রোর জামিন নাকচ করে দেন এবং লাংকম ম্রো’কে কারাগারে পাঠানোর আদেশ প্রদান করেন।
ভূমিদস্যু রাবার কোম্পানির হাত থেকে নিজের ভূমি রক্ষা করতে গিয়ে মিথ্যা মামলার শিকার হওয়া লাংকম ম্রো’কে জামিন না দিয়ে উল্টো কারাগারে প্রেরণ করায় আদালতের ভূমিকা নিয়ে ভুক্তভোগী ম্রো ও ত্রিপুরা গ্রামবাসী উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে।
এর পূর্বে গত ১ মার্চ ২০২৩ উক্ত মামলায় ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির অন্যতম সংগঠক মথি ত্রিপুরাকে আটক করেছিল পুলিশ। ২৬ দিন কারাভোগের পর গত ২৭ মার্চ ২০২৩ জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পান মথি ত্রিপুরা।
উল্লেখ্য, গত ১ মার্চ ২০২৩ লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ’র সহকারী ম্যানেজার আব্দুল মালেক বাদী হয়ে ১২ জনের নামে লামা থানায় একটি মিথ্যা ও ষড়ন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলায় গতকাল লাংকম ম্রোসহ ৮ জন জামিন চাইতে আদালতে গিয়েছিলেন।
আরো উল্লেখ্য যে, এর আগে লামা রাবার কোম্পানী ১৪ আগষ্ট ২০২২ তারিখে ১১ জন আদিবাসী গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে এবং ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৪ জন আদিবাসী গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে সাজানো ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করে।
গত ১ জানুয়ারি ২০২৩ লামা রাবার কোম্পানী কর্তৃক লাংকম ম্রো কার্বারী পাড়ায় হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় লাংকম ম্রো কার্বারী ৭ জানুয়ারি ২০২৩ লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ’র সহকারী ম্যানেজার আব্দুল মালেকসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে ও ১৫০-১৭০ জন অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে লামা থানায় মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে উল্টো লামা রাবার কোম্পানীর দায়েরকৃত মিথ্যা মামলায় ৩০ মার্চ ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত লাংকম ম্রোকে জেলে প্রেরণ করেন।
২০২২ সালের এপ্রিলে লামার সরই ইউনিয়নের তিনটি ম্রো ও ত্রিপুরা গ্রামের ৪০০ একর জুম ভূমি, বাগান-বাগিচা ও গ্রামীন বন জ¦ালিয়ে দেয়ার পর লামা রাবার কোম্পানী এযাবৎ এক ডজনের অধিক বার হামলা, ঘরবাড়ি ভাঙচুর, ঝর্নার উৎসে বিষ ঢেলে দিয়ে গ্রামবাসীদের হত্যা, মিথ্যা মামলা দায়ের, ভূমি বেদখল ইত্যাদি ঘটনা সংঘটিত করেছে।