হিল ভয়েস, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বিশেষ প্রতিবেদক: বান্দরবান জেলাধীন লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের এক আদিবাসী মারমা নারীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং অভিযুক্ত ধর্ষণকারীকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে লামা উপজেলা প্রশাসন চত্বরে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অপরদিকে হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডাব্লিউএফ), কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকেও ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ধর্ষককে দ্রুত গ্রেপ্তার পূর্বক কঠোর শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।
মানববন্ধন
আজ ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সকাল ১১ টায় লামা উপজেলা পরিষদ প্রশাসন চত্বরে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয় ‘লামা উপজেলা সচেতন ছাত্র সমাজ’এর উদ্যোগে।
মানববন্ধনের আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন মংসেটিং মারমা এবং সঞ্চালনা করেন মংএনু মারমা। এতে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হ্লাসিংকাই মারমা এবং ভিকটিমের ছোট ভাই মংক্যহ্লা মারমা।
হ্লাসিংকাই মারমা বলেন, লামা উপজেলায় প্রতিনিয়ত পাহাড়ি নারীদের উপর ধর্ষণের মতো জঘন্য কাজ পরিচালিত হচ্ছে। তিনি তার বক্তব্যে ধর্ষক মোঃ কায়সারকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে শাস্তির জোর দাবি জানান।
ভিক্টিমের ছোট ভাই মংক্যহ্লা মারমা বলেন, লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের হারগাজা এলাকায় আমার আপন দিদি গত ২৪/২/২০২৩ খ্রিঃ তারিখে গ্রামের পাশে একাশিয়া গাছের বাগানে শাক খুঁজতে যাওয়ার সময় আনুমানিক দুপুর ১.৩০ ঘটিকায় মোঃ কায়সার পিছন থেকে গিয়ে আমার দিদির ওপর জোরপূর্বক মারধর করে দুই হাত গামছা দিয়ে বেঁধে ধর্ষণ করে। এটি অত্যন্ত জঘন্য অপরাধ এবং ঘৃণ্য।
তিনি তার দিদির উপর হওয়া এই জঘন্য অপরাধের জন্য ফাঁসিয়াখালি ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ফুটে ঝিড়ি (উলা ঝিড়ি) গ্রামের মোঃ আব্দুল্লাহ’র ছেলে মো: কায়সারকে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের আওতায় এনে দ্রুত গ্রেপ্তার করে সুষ্ঠুবিচারে মাধ্যমে উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের জোর দাবি জানান।
সভাপতির বক্তব্যে মংসেটিং মারমা বলেন, একজন মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ এই ধর্ষণের ঘটনার পক্ষে কথা বলতে পারে না। তিনি আরো বলেন, ধর্ষক মোঃ কায়সারের দুলাভাই ভিক্টিম কিসের জন্য ধর্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে তা বলে ভিক্টিমের পরিবারের উপর পাল্টা মামলা করার হুমকি প্রদান করেছে।
এই মানববন্ধনের আগে লামা মাতামুহুরী কলেজ গেইট হতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে লামা উপজেলা প্রশাসন চত্বরে সমাপ্ত হয়।
এইচডাব্লিউএফ’র বিবৃতি
উক্ত ধর্ষণ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং ধর্ষককে দ্রুত গ্রেপ্তারপূর্বক কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়ে হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডাব্লিউএফ), কেন্দ্রীয় কমিটির এর পক্ষ থেকে একটি প্রেস বিবৃতি প্রদান করা হয়।
হিল উইমেন্স ফেডারেশন এর তথ্য ও প্রচার সম্পাদক মিমি মারমা স্বাক্ষরিত ও প্রেরিত এক প্রেস বিবৃতিতে এই নিন্দা, প্রতিবাদ ও শাস্তির দাবির কথা জানানো হয়।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, গত শুক্রবার আনুমানিক দুপুর ১২ টার দিকে বাড়ির পাশের জমিতে ভুক্তভোগী শাক তুলতে গেলে উৎপেতে থাকা ধর্ষক সেটেলার মোঃ কায়সার মুখ চেপে ধরে পাশের জঙ্গলের ভিতরে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ন্যাক্কারজনক ঘটনায় থানায় মামলা হলেও পুলিশ এখনো ধর্ষককে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কর্তৃক অপরাধী মোঃ কায়সারকে পালাতে সাহায্য করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য ধর্ষণকারীর পক্ষ হয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান অর্থের বিনিময়ে মীমাংসায় আসার জন্য ভুক্তভোগীর পরিবারের উপর চাপ সৃষ্টি করছে এবং ভুক্তভোগীর পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিচ্ছে।
বিবৃতিতে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের পক্ষ থেকে নিন্মোক্ত তিনটি দাবি জানানো হয়-
(১) অবিলম্বে ধর্ষক মোঃ কায়সারকে গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
(২) পার্বত্য চট্টগ্রামে সংগঠিত নারী নির্যাতনের ঘটনার বিচার নিশ্চিতকরণে ’দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল’ গঠন করতে হবে।
(৩) দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণাপূর্বক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, শুক্রবার দুপুরের দিকে ওই নারী (২৪) বাড়ির পাশের ক্ষেতে শাক সংগ্রহ করতে যান। এসময় সেখানে উৎপেতে থাকা মোঃ কায়সার ওই নারীর মুখ চেপে ধরে জোরপূর্বক পাশের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। ভুক্তভোগী নারীর বাড়ি ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের হারগাজা লাথুই মারমা পাড়ায় বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, অভিযুক্ত ধর্ষণকারীর নাম মোঃ কায়সার (৩৬), পীং-আবদুল্লাহ, গ্রাম-হারগাজা ফুটের ঝিরি এলাকা, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন।
জানা গেছে, গতকাল ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ দুপুরে গুরুতরভাবে জখম ভুক্তভোগী নারীকে চিকিৎসার জন্য লামা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এরপর সেখান থেকে ভুক্তভোগী নারীকে বান্দরবান সদর হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়।
অপরদিকে, আরও জানা গেছে, ঘটনার পরপরই এলাকার লোকজন ধর্ষক মোঃ কায়সারকে হাতেনাতে আটক করে এবং গণধোলাই দেয়। কিন্তু এলাকার চেয়ারম্যান চিকিৎসার নামে ধর্ষক মোঃ কায়সারকে কক্সবাজারের চকরিয়ায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠায় বলে জানা যায়।
গতকালই ধর্ষণকারী মোঃ কায়সার হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।