হিল ভয়েস, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ঢাকা: বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ উপজেলার জিউধরা ইউনিয়নের ডুমুরিয়া গ্রামে জ্যোতিন অধিকারীর বাড়িতে তালা ভেঙ্গে পুলিশী তান্ডব চালানোর ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষে দপ্তর সম্পাদক মিহির রঞ্জন হাওলাদারের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, এই ধরনের পুলিশী নির্যাতনের ঘটনা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর থেকে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আস্থা বিনষ্ট করবে। কেন্দ্রীয় কমিটি অবিলম্বে পুলিশ ও স্থানীয় দখলদারদের বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষ বিচার ও প্রতিকার দাবি করেছে।
উল্লেখ্য যে, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ শনিবার রাত আনুমানিক ১:০০ টার দিকে মোড়েলগঞ্জের জিউধরা ইউনিয়নের ডুমুরিয়া গ্রামে জ্যোতিন অধিকারীর বাড়িতে তালা ভেঙ্গে পুলিশী তান্ডব চালানো হয়। এসময় এলোমেলো করা হয়েছে দেবতার বিগ্রহ এবং ভাঙ্গা হয়েছে পূজা ও কীর্ত্তনের সামগ্রী। সনজিত অধিকারী, প্রসেনজিৎ অধিকারী ও তাদের পিতা জ্যোতিন অধিকারী এই বাড়িতে কয়েক বছর যাবত বসবাস করছেন।
ওই রাতে গ্রাম পুলিশ রনজিত মন্ডলকে সাথে নিয়ে লক্ষ্মীখালী পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তা সুফল সরকার বাড়িটির সামনে গিয়ে চিৎকার করে বাড়ির মালিকদের ডাকতে থাকে। সে সময়ে বাড়ির ভেতরে কেউ না থাকায় সাড়া না পেয়ে পুলিশ তালা ভেঙ্গে ঘরের ভেতর প্রবেশ করে।
সেসময় গ্রাম পুলিশ রনজিতের মাধ্যমে তাদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে সনজিতের ভাই প্রসেনজিৎ অধিকারীকে মুঠোফোনে জানায়, “তোমাদের বিরুদ্ধে ওসি সাহেবের কাছে অভিযোগ আছে। আমি তোমাদের বাড়ি থেকে কিছু আলামত ক্যাম্পে নিয়ে যাচ্ছি, তোমরা আগামীকাল সকাল ১০টায় লক্ষ্মীখালী পুলিশ ক্যাম্পে যোগাযোগ করবে।”
সনজিতের ভাই প্রসেনজিৎ বিভিন্নভাবে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা ওখানে পৌঁছে যেতেও চায়। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তা সুফল তাদের কোনো কথাই না শুনে বাড়ি থেকে কাঠ, বাঁশ সহ বিভিন্ন সামগ্রী নছিমন গাড়ি এনে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের। কিছুক্ষণের মধ্যে তারা তাদের বাড়ি পৌঁছে সেখানে ছত্তার খলিফা ও মজিবরসহ কয়েকজন অপরিচিত লোককে দেখতে পায়।
সনজিতদের উপস্থিতি প্রত্যক্ষ করে তারা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। সনজিত, প্রসেনজিৎসহ ওদের বাড়ির লোকেরা দেখতে পান যে, ইতিমধ্যে তাদের ঘরের বেশ ক্ষতি হয়েছে, বিশেষ করে মন্দিরের দেবতার বিগ্রহগুলো এলোমেলো করে ভাঙ্গা হয়েছে। ঢোল, ডংকা ছিড়ে ফেলা হয়েছে এবং নিত্যপূজার সামগ্রী তছনছ করা হয়েছে।
সনজিত অধিকারী কয়েক বছর আগে ২০১৮ সালে সেখানে জমি কিনে নতুন বাড়ি তৈরি করে। একই খতিয়ানভুক্ত জমি ক্রয় করেন একই এলাকার ছত্তার খলিফা। সনজিতের ক্রয়কৃত এই জমিতে বাড়ি নির্মাণ কাজ শেষের দিকে চলে এলে ছত্তার খলিফা দাবি করেন যে, এই জমি তার। কিন্তু সনজিত অধিকারীর দলিল, দলিলের চৌহদ্দি, নামজারি সবকিছু সঠিক থাকায় স্থানীয় সালিসীতে তিনি জিতে যান।
তা সত্ত্বেও তিনি ছত্তার খলিফার হয়রানি থেকে রক্ষা পান না। অবশেষে সনজিত আদালতের দ্বারস্থ হন। এতে উক্ত জমিতে জারি হয় ১৪৪ ধারা। আদালতের বিচার শেষে রায় আসে সনজিতদের পক্ষে। কিন্তু রায় পেলেও পুলিশ কর্মকর্তা সুফল সেসবের তোয়াক্কা না করে তাদের ঘর ভাঙচুর করেন।