হিল ভয়েস, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) বিলাইছড়ি থানা শাখার ১৯তম সম্মেলন ও কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে। সম্মেলন ও কাউন্সিলের আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে ছাত্র ও যুব সমাজকে বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, শনিবার অনুষ্ঠিত উক্ত সম্মেলন ও কাউন্সিলের আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পিসিপির বিলাইছড়ি থানা শাখার বিদায়ী কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক নিকেল চাকমা এবং সঞ্চালনা করেন বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজেশ চাকমা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বিলাইছড়ি থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বীরোত্তম তঞ্চঙ্গ্যা এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বিলাইছড়ি থানা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক টিপু চাকমা, পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি থোয়াইক্যজাই চাক, পিসিপির রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক টিকেল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সোনারিতা চাকমা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিদায়ী কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক সঞ্চয় চাকমা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনসংহতি সমিতির বিলাইছড়ি থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বীরোত্তম তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের উপর ‘ভাগ কর শাসন কর’ নীতি প্রয়োগ করে চলেছে। আজকে জুম্ম সমাজে নানা দল-উপদল সৃষ্টি করে দেওয়া হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র থেকে বর্তমান তরুণ ছাত্র সমাজকে দূরে থাকতে হবে। সঠিক রাজনৈতিক আদর্শের সংগঠনে যুক্ত হতে হবে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ, উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাসহ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা কিছু মানুষ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সুফল ভোগ করার পরও চুক্তি বিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রমে লিপ্ত হচ্ছেন। পরিশেষে, তিনি ছাত্র-যুব সমাজকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহবান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জনসংহতি সমিতির বিলাইছড়ি থানা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক টিপু চাকমা বলেন, সরকার জনসংহতি সমিতি তথা চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে সম্পৃক্ত কর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়ে, মিথ্যা মামলা দিয়ে নানাভাবে হয়রানি অব্যাহত রেখেছে। তিনি সব ভয়ভীতি উপেক্ষা করে বর্তমান ছাত্র-যুব সমাজকে তাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করার জন্য আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি থোয়াইক্য জাই চাক বলেন, উন্নয়নের নামে পার্বত্য চট্টগ্রামে বুলডোজার দিয়ে পাহাড়িদের ঘর ভেঙে দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। সরকার প্রতিনিয়ত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে একের পর এক চুক্তি বিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ কর্তৃক সকল উন্নয়ন কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করার কথা থাকলেও আঞ্চলিক পরিষদের সাথে কোনো প্রকার আলোচনা না করে কিংবা উপেক্ষা করে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করার মাধ্যমে ইসলামীকরণের এক হীন ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।
পিসিপির রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক টিকেল চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ ইংরেজ শাসনামল থেকে যুগ যুগ ধরে শোষিত-বঞ্চিত, নিপীড়িত ও নির্যাতিত। তিনি অতীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামের মহান লড়াই সংগ্রামের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ছাত্র-যুব সমাজকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হতে হবে।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সোনারিতা চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম নারীরা প্রতিনিয়ত শ্লীলতাহানি, ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন বরাবরই নির্বিকার বা দায়সারা ভূমিকায় ছিল এবং আছে। তিনি নারীসমাজকে দৃপ্ত শপথ নিয়ে শোষণ, নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রামে যুক্ত হওয়ার আহবান জানান।
আলোচনা সভা শেষে রাজেশ চাকমাকে সভাপতি, নিকেল চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও অমর শান্তি চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট পিসিপির বিলাইছড়ি থানা শাখার নতুন কমিটি গঠন করা হয়।
নবনির্বাচিত কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক খোকন চাকমা।