হিল ভয়েস, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, রাঙ্গামাটি: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক রাঙ্গামাটি জেলাধীন বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নে সীমান্ত সংযোগ সড়ক সংলগ্ন এলাকার ৯ জুম্ম গ্রামবাসীকে নিজেদের বাড়িঘর তুলে নিয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার নির্দেশ এবং না গেলে বাড়িঘর ভেঙে দেয়া ও জ্বালিয়ে দেয়া হবে বলে হুমকি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সেনাবাহিনীর ফারুয়া ইউনিয়নস্থ গাছবান সেনা ক্যাম্পের ২৬ বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর এর ক্যাপ্টেন মারুফ ও সুবেদার মোঃ আহম্মেদ ফারুয়া ইউনিয়নের গাছবান পাড়া এলাকার কার্বারি (গ্রাম প্রধান)সহ ৯ জুম্ম পরিবারকে নিয়ে এক সভা ডাকে। এসময় ক্যাপ্টেন মারুফ ও সুবেদার মোঃ আহম্মেদ ১৫ দিনের মধ্যে নিজেদের বাড়িঘর ও জিনিসপত্র নিয়ে স্ব স্ব আবাসস্থল থেকে অন্যত্র চলে যাওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন।
গত ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বিলাইছড়ি-বরকল এলাকার সীমান্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্প পরিদর্শনে গেলে তিনিই উক্ত ৯ জুম্ম পরিবারকে তাদের আবাসস্থল থেকে উঠিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়ে যান বলে জানান ক্যাপ্টেন মারুফ।
গ্রামবাসীদের সাথে সভায় ক্যাপ্টেন মারুফ ও সুবেদার মোঃ আহম্মেদ হুমকি দিয়ে এও বলেছেন যে, ১৫ দিনের মধ্যে উক্ত গ্রামবাসীদের নিজেদের জায়গা থেকে সরে যেতে হবে। সেখান থেকে চলে না গেলে জোর করে বাড়িঘর ভেঙে দেয়া হবে এবং জ¦ালিয়ে দেয়া হবে। তারা আরও বলেন যে, সেখান থেকে চলে না গেলে চাষাবাদের জন্য যে জুমগুলি কাটা হয়েছে সেগুলো ব্যবহার করতে দেয়া হবে না।
ভুক্তভোগী পরিবারসমূহ হল- (১) থুদা চাকমা (কার্বারি), পীং-মুরুঙ্যা চাকমা, (২) সেবক চাকমা, পীং-লাল মোহন চাকমা, (৩) অমর বিকাশ চাকমা, পীং-পরক ধন চাকমা, (৪) বুদ্ধলীলা চাকমা, পীং-মদন চাকমা, (৫) পরক ধন চাকমা, পীং-দিন মোহন চাকমা, (৬) শুক্রলাল চাকমা, পীং-বুদ্ধলীলা চাকমা, (৭) সুনীল প্রিয় চাকমা, পীং-থুদা চাকমা, (৮) বাত্যা চাকমা, পীং-বুদ্ধলীলা চাকমা ও (৯) অজ্ঞাত।
জানা গেছে, ক্যাপ্টেন মারুফ ও সুবেদার মোঃ আহম্মেদ এর সাথে আলোচনার সময় গ্রামের কার্বারি থুদা চাকমা বলেন যে, আমরা সম্পূর্ণ জুমচাষের উপর নির্ভরশীল। এই এলাকা ছাড়া যেহেতু জুমচাষের জায়গাও নেই। তাই এই এলাকা ছেড়ে কোথাও যাওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফারুয়া এলাকার এক মুরুব্বি জানান, সেনাবাহিনী মূলত ওই এলাকায় তাদের পর্যটন ব্যবসা কেন্দ্র স্থাপন করার উদ্দেশ্যেই উক্ত গ্রামবাসীদের জায়গাটি দখলে নেয়ার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী শুধু সীমান্ত সড়ক নির্মাণ করছে না। তারা সীমান্ত সড়কের নামে জুম্মদের ধনসম্পদ ধ্বংসসহ স্বভূমি থেকে উচ্ছেদ করছে এবং পর্যটন ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে আকর্ষণীয় জায়গাগুলো নিজেদের দখলে নিচ্ছে। কোনো কোনো জায়গায় সংরক্ষিত এলাকা বা সেনাবাহিনীর জায়গা বলে সাইনবোর্ডও স্থাপন করছে।
এদিকে সেনাবাহিনী কর্তৃক গত ৬ ফেব্রুয়ারি এর সভায় ১৫ দিনের মধ্যে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়ায় নিরীহ গ্রামবাসীদের মধ্যে গভীর আতঙ্ক ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য যে, কেবল গত বছর (২০২২ সাল) সীমান্ত সড়ক ও সংযোগ সড়ক নির্মাণের ফলে তিন পার্বত্য জেলায় ৫০০ পরিবার ক্ষতির শিকার হয়েছে৷