হিল ভয়েস, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩: মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় ঝিমাই খাসিয়াপুঞ্জির প্রাকৃতিক গাছ কাটার পাঁয়তারা বন্ধসহ ১২ দফা দাবি জানানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) নাগরিক সমাবেশে বক্তারা এসব দাবি জানান।
‘আদিবাসী পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের’ ব্যানারে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, কুবরাজ আন্তপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠনসহ মোট ১২টি সংগঠন সহযোগিতা করে। সমাবেশে উপজেলার বিভিন্ন খাসিয়া ও গারোপুঞ্জির পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেন।
দুপুর ১২টার দিকে কুলাউড়া পৌর শহরের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে সমাবেশ শুরু হয়। কুবরাজ আন্তপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠনের সভাপতি প্রত্যুষ আসাক্রার সভাপতিত্বে এবং বাপার প্রতিনিধি জোসেফ গোমেজ ও ঝিমাই খাসিয়াপুঞ্জির মন্ত্রী (পুঞ্জিপ্রধান) রানা সুরং-এর স্বাগত বক্তব্যে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ধারণাপত্র পাঠ করেন কুবরাজের সাধারণ সম্পাদক ফ্লোরা বাবলি তালাং। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি হেলেনা তালাং।
সমাবেশে বক্তব্য দেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাপার সিলেট শাখার সভাপতি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রেজিস্ট্রার জামিল আহমদ চৌধুরী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ এমদাদুল হক, সিপিবির মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি খন্দকার লুৎফুর রহমান, আওয়ামী লীগের কুলাউড়া উপজেলা কমিটির সহসভাপতি অরবিন্দু ঘোষ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক গৌরা দেন, মৌলভীবাজার জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম, বাপার কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল করিম চৌধুরী, বৃহত্তর সিলেট ত্রিপুরা উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি জনক দেববর্মা, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সিলেটের বিভাগীয় সমন্বয়কারী শাহ শাহেদা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ প্রমুখ।
পুঞ্জির মন্ত্রী রানা সুরং বলেন, তাঁদের পুঞ্জিতে ৭২টি খাসিয়া পরিবার থাকে। ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে তাঁরা সেখানে বসবাস করছেন। এর পাশ ঘেঁষেই কেদারপুর টি কোম্পানির মালিকানাধীন ঝিমাই চা-বাগান পড়েছে। ২০১২ সালে সরকার খাসিয়াদের ঐতিহ্যগত ভূমি অধিকার, তাঁদের প্রথাগত জীবনধারা ও অস্তিত্বের বিষয়টি পাশ কাটিয়ে ঝিমাই চা-বাগানের পক্ষে ৬৬১ দশমিক ৫৫ একর ভূমির ইজারা নবায়ন করে ফেলে। ওই ভূমির মধ্যে ঝিমাইপুঞ্জিও পড়ে যায়। এখন চা-বাগান কর্তৃপক্ষ চা-চাষ সম্প্রসারণের নামে ওই ভূমির দুই সহস্রাধিক গাছ কাটার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। গাছ কাটলে পরিবেশের ক্ষতি হবে। খাসিয়ারা জীবন-জীবিকা হারাবেন। মূলত খাসিয়াদের উচ্ছেদের উদ্দেশে এ অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
বক্তারা বলেন, এমনিতেই বনের পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। বাঁশমহাল ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রাকৃতিক গাছপালা আগের মতো নেই। সামাজিক বনায়নের নামে প্রভাবশালীরা বন দখলে নিচ্ছেন। অথচ খাসিয়ারা বন-প্রকৃতিকে ভালোবাসেন। বন-প্রকৃতিকে ঘিরেই তাঁদের জীবন-জীবিকা। তাঁদের মমতায় বনের গাছগাছালি রক্ষা পাচ্ছে। সেখানে চা-বাগান সম্প্রসারণের নামে খাসিয়াপুঞ্জির প্রাকৃতিক গাছ কেটে ফেলার পাঁয়তারা চলছে। এ অপচেষ্টা রুখতে হবে।
সমাবেশে ঝিমাই খাসিয়াপুঞ্জির গাছ কাটার পাঁয়তারা বন্ধ, পুঞ্জির যাতায়াতের রাস্তায় চা-বাগান কর্তৃপক্ষের সব বাধা অপসারণ, কেদারপুর টি কোম্পানির ইজারা বাতিল করে আদিবাসীদের ভোগদখলীয় ভূমির স্থায়ী বন্দোবস্ত প্রদান, ডুলুকছড়া, বেলকুমা, নুনছড়াসহ বিভিন্ন পুঞ্জির আদিবাসীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, খাসিয়া পান চাষকে ‘বিশেষ কৃষি ঐতিহ্য’ ঘোষণা, সামাজিক বনায়নের আড়ালে প্রভাবশালী ভূমিখেকোদের আশ্রয়-প্রশ্রয় বন্ধ, আদিবাসীদের ভোগদখলীয় ভূমিতে সামাজিক বনায়ন প্রকল্প গ্রহণ না করা, আদিবাসীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিশুদ্ধ পানি, উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা নিশ্চিত করা, পৃথক ভূমি কমিশন গঠন, খাসিদের জীবন-জীবিকার নিরাপত্তা প্রদান, আদিবাসীদের অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক সব সনদসহ আইএলও কনভেনশন ১০৭ বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়।
সমাবেশের আগে বঙ্গবন্ধু উদ্যান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক ঘুরে পুনরায় সেখানে গিয়ে সম্পন্ন হয়।