২য় অংশ: পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি গঠন ও বীরেন্দ্র কিশোর রোয়াজা
মঙ্গল কুমার চাকমা
পাকিস্তান শাসনামলের শেষ দিকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ৬ দফা ও ১১ দফা আন্দোলন যখন তুঙ্গে সে সময় এবং তার আগে-পরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান শাসনামলে এবং বাংলাদেশের সূচনা লগ্নে বাম, মধ্য ও ডানপন্থী প্রায় সকল রাজনৈতিক দল, ব্যক্তিত্ব ও নেতাদের কাছে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। কোন রাজনৈতিক নেতাই তা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেনি, অনেকে সমস্যার কথা ধৈয্য সহকারে পর্যন্ত শুনতে রাজি ছিলেন না। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও তার কোন ব্যতিক্রম ঘটেনি। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধানের জন্য মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (এম এন লারমা) দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বারে দ্বারে ঘুরেছিলেন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার কথা তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু মুখে সহানুভূতি জানালেও কার্যত কোন রাজনৈতিক দলই পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসেনি এবং এ বিষয়টি নিজস্ব রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবেও গ্রহণ করেনি। বরঞ্চ এম এন লারমাকে তাদের রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে প্রকারান্তরে প্রস্তাব দিতে থাকে।
বলাবাহুল্য, বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে উগ্র জাতীয়তাবাদী ও উগ্র সাম্প্রদায়িক নীতি-আদর্শ পরিব্যাপ্ত থাকে। সাধারণভাবে এসব দলগুলো সাম্রাজ্যবাদী, আমলা পূঁজিবাদী, সামন্তবাদী ও মুৎসদ্দী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে থাকে। তাই পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার মতো জাতিগত ও ভাষাগত সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসমূহের সমস্যার প্রতি তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে প্রাধান্য দেয়া হয় না। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার প্রতি প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলো সমর্থন প্রদান করলেও এ সমস্যা সমাধানেও সেসব দলগুলোর কোন নিজস্ব রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই। দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির এমনিতর বাস্তবতায় মহান নেতা এম এন লারমা ও জুম্মদের প্রগতিশীল শক্তি নিজস্ব রাজনৈতিক দলের প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে অনুভব করতে থাকেন।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বহু ত্যাগ তিক্ষিতার, বহু মা-বোনের ইজ্জত ও বহু মানুষের তাজা রক্তের বিনিময়ে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ হিসেবে অভ্যূদয় ঘটে। স্বাধীনতার পর সারা দেশের বাঙালিদের মনে যেমন আশার আলো উদিত হয়েছিল, তেমনি পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের মনেও আশার আলো সঞ্চারিত হয়েছিল। জাতিগত শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে যে রাষ্ট্রের অভ্যূদয় ঘটেছে সেই রাষ্ট্রে তাদের উপর চলমান জাতিগত শোষণ-বঞ্চনা অবসান হবে এবং হৃত অধিকার পুনপ্রতিষ্ঠিত হবে এমনটাই আশা করেছিল আদিবাসী জুম্ম জনগণ।
পাকিস্তান শাসনামলে জুম্ম জনগণকে ভারতপন্থী, ভারতের দালাল বলে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। আর যেই না বাংলাদেশ সৃষ্টি হলো তখন রাতারাতি জুম্ম জনগণকে পাকিস্তানপন্থী বলে চিহ্নিত করা হতে থাকে। অথচ বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে জুম্ম জনগণেরও যথেষ্ট অবদান ছিল। তা সত্তে ও উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদী প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী জুম্ম জনগণকে জন্মভূমি থেকে উৎখাত করার হীন ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে পাকিস্তানপন্থী হিসেবে অপবাদ দিতে থাকে। বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথে শুরু হলো একদিকে অবর্ণনীয় অমানুষিক অত্যাচার ও উৎপীড়ন, আর অপরদিকে জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব বিলুপ্তির ষড়যন্ত্র। পাক সেনাদের অত্যাচার উৎপীড়নের ক্ষত শুকোতে না শুকোতেই জুম্ম জনগণের উপর নেমে আসলো ঘোর অমানিশা। ‘পাকিস্তানপন্থী’ আখ্যায়িত করে জুম্ম জনগণের উপর হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, ধরপাকড়, লুটপাট শুরু করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় বহিরাগত বাঙালি অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে জুম্মদের জায়গা-জমি বেদখল করতে থাকে। পাকিস্তান সরকার যা করতে সাহস করেনি সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত বাংলাদেশ সরকার তা করতে মোটেও দ্বিধাবোধ করেনি।
বস্তুত পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে হানাদার পাকিস্তান সরকার যা করতে সাহস করেনি, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠী তাই বাস্তবায়িত করতে থাকে। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে ১৯৭২ সালে গৃহীত বাংলাদেশের সংবিধানে প্রাক-উপনিবেশিক কাল থেকে বিদ্যমান পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বশাসন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করা হয়। জুম্ম জনগণের একের পর এক দাবি সত্তে¡ও বাংলাদেশের সংবিধানে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বতন্ত্র শাসনব্যবস্থা ও ভিন্ন জাতিসত্তার অধিকারী জুম্ম জাতিসমূহ সম্পর্কে সংবিধানে একটি শব্দটি উল্লেখ করা হয়নি। অধিকন্তু সংবিধানে ৬নং অনুচ্ছেদে ‘বাংলাদেশের নাগরিকগণ বাঙালি বলিয়া পরিচিত হইবেন’ মর্মে উল্লেখ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণসহ দেশের বসবাসরত আদিবাসী জাতিসমূহকে বাঙালি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল, যা ছিল জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে স্বাধীনতা অর্জনকারী একটি দেশের শাসকগোষ্ঠীর উগ্র জাত্যাভিমান ও উগ্র সাম্প্রদায়িকতারই বহি:প্রকাশ। এর ফলে জুম্ম জনগণের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দেয়। এতে জুম্ম জনগণ আরো শঙ্কিত হয়ে উঠে।
একদিকে আওয়ামীলীগ সরকার ও তার সহযোগিতাদের অত্যাচার উৎপীড়ন, আর অপরদিকে দৃষ্কৃতিকারীদের দৌরাত্মে জুম্ম জনগণের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠলো। জনগণ সম্পূর্ণ অসহায় অবস্থার জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়ালো। সমগ্র অঞ্চলে এক অচলাবস্থা দেখা দিল। জুম্ম জনগণ ঠিক এমনি সময়ে একটি রাজনৈতিক দলের অভাব বিশেষভাবে অনুভব করতে থাকে। এসব ঘটনাবলী জুম্ম সমাজকে আরো স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিল যে, এসব নির্যাতিত ও বঞ্চিত জাতিসমূহের সংগ্রাম ব্যতীত বেঁচে থাকার অন্য কোন বিকল্প পথ নেই। আর সুসংগঠিত আন্দোলন পরিচালনার জন্য দরকার একটি নিজস্ব রাজনৈতিক দলের। ১৯৭০ সালে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম নির্বাচন পরিচালনা কমিটি সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে জাতীয় জীবনের এমনিতর দুর্যোগপূর্ণ দিনে জুম্ম জনগণের পাশে এসে দাঁড়ায় ও দৃঢ়তার সাথে উদ্ভ‚ত পরিস্থিতি মোকাবেলা করে যেতে থাকে। সেই সাথে একটা পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক দল গঠন করার কার্যক্রমও এগিয়ে চললো।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ভৌগলিক, আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, ঐতিহাসিক কাল থেকে স্বতন্ত্র শাসনব্যবস্থা, সর্বোপরি জুম্ম জনগণের ভাষা, সংস্কৃতি ও জাতিগত পরিচয় আলাদা হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের ন্যায়সঙ্গত স্বার্থ সংরক্ষণ ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই নিজস্ব রাজনৈতিক দল গড়ে তোলার পক্ষে এম এন লারমা, সন্তু লারমা, অনন্ত বিহারী খীসা, অমিয় সেন চাকমা, কালিমাধব চাকমাসহ তখনকার অধিকাংশ সচেতন ছাত্র-যুবক ও বুদ্ধিজীবীরা একমত ছিলেন। তবে সেসময় জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা স্বতন্ত্র রাজনৈতিক দল গঠনের পক্ষে ছিলেন না। তিনি জাতীয় রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করার পক্ষে ছিলেন। এ সময় নতুন রাজনৈতিক দল সৃষ্টি না করে ব্রিটিশ আমলের পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সমিতিকে পুনরুজ্জীবিত করার অভিমত উঠে। এতে দলটির গ্রহণযোগ্যতা যেমনি অর্জিত হবে, তেমনি রাজনৈতিক দল হিসেবে শক্তিশালী করাও সহজতর হবে। এ সময় কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে এম এন লারমা পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সমিতির প্রাক্তন সভাপতি কামিনী মোহন দেওয়ানের সাথে আলোচনা করতে যান। যেহেতু পাকিস্তান আমলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সমিতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তাই এই নামে নতুন দল সমীচীন হবে না বলে তিনি অভিমত দেন। এমতাবস্থায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সমিতির নাম পরিবর্তন করে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি’ নামকরণে ১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জুম্ম জনগণের প্রথম রাজনৈতিক দল গঠন করা হয়।
এম এন লারমাকে আহ্বায়ক করে সেদিন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্যান্যদের মধ্যে জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা, অমিয় সেন চাকমা, কালিমাধব চাকমা, পঙ্কজ দেওয়ানের ভূমিকা ছিল শীর্ষস্থানীয়। সম্মিলিতভাবে শপথ গ্রহণ করে সেদিন তারা জনসংহতি সমিতি গঠন করেন। তবে পরে পঙ্কজ দেওয়ান সক্রিয় ছিলেন না। এই দিনটি ছিল গোটা জুম্ম জাতির রাজনৈতিক তথা জাতীয় জাগরণের এক ঐতিহাসিক অবিস্মরণাীয় দিন।
এরপর ১৯৭২ সালের ২৪ জুন রাঙ্গামাটির ইন্দ্রপুরী সিনেমা হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে বিশিষ্ট সমাজকর্মী কামিনী মোহন দেওয়ানের সভাপতিত্ব করার কথা থাকলেও তিনি উপস্থিত হতে পারেননি। তবে তিনি একটি লিখিত বক্তব্য প্রেরণ করেন। সম্মেলনে বীরেন্দ্র কিশোর রোয়াজাকে সভাপতি এবং এম এন লারমাকে সাধারণ সম্পাদক করে জনসংহতি সমিতির ৬০ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়। কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে সহ সভাপতি হিসেবে হ্লাথোয়াই প্রু কার্বারী, হীরা লাল চাকমা, সুতকর্মা কার্বারী, বীরেন্দ্র লাল রোয়াজা ও মংহ্লা প্রু চৌধুরী; যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও সনৎ কুমার চাকমা; সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে প্রীতি কুমার চাকমা; সহ সাংগঠনিক হিসেবে সুকৃতি রঞ্জন চাকমা, প্রচার সম্পাদক হিসেবে অর্ধেন্দু বিকাশ চাকমা; সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে কংজসাই; কোষাধ্যক্ষ হিসেবে জ্ঞানদত্ত খীসা; দপ্তর সম্পাদক হিসেবে অনাদি কুমার চাকমা এবং সমাজকল্যাণ সম্পাদক হিসেবে উহ্লা প্রু নির্বাচিত হন।
জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত বীরেন্দ্র কিশোর রোয়াজা যিনি বি কে রোয়াজা নামে সমধিক পরিচিত তিনি ছিলেন একজন প্রবীন রাজনীতিক ও সমাজকর্মী। পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতীয় জীবনের প্রথম যে নির্বাচনে জুম্ম জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগের গণতান্ত্রিক অধিকারের স্বাদ পায় সেই ১৯৫৪ সালের পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে তফসিলী সম্প্রদায়ের আসন থেকে বি কে রোয়াজা প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। সেই ভোটাধিকার জুম্মদের সমাজ জীবনে আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম না হলেও গণতান্ত্রিক অধিকার লাভে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করা যায়। ছাত্র জীবন থেকে বি কে রোয়াজা রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপেক্ষিত ও বঞ্চিত জনমানুষের উন্নয়ন ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তিনি সর্বদা ছিলেন সোচ্চার।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ সরকার ভারত ত্যাগ করার পূর্ব মুহূর্তে রাজনৈতিক কারণে বি কে রোয়াজা প্রথমবারের মতো গ্রেফতার হন। এরপর ১৯৪৯ সালে স্বাধীন ত্রিপুরা রাজ্য ভারতভুক্তির প্রতিবাদের কারণে এবং পার্বত্য জনসেবা সংঘ নামে একটি সংগঠন গঠন করার কারণে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক তিনি দ্বিতীয়বারের মতো কারারুদ্ধ হন। রাজনৈতিক দূরদর্শীসম্পন্ন বি কে রোয়াজা এই চেতনা পোষণ করতেন যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের মাঝে রাজনৈতিক চেতনাবোধ জাগ্রত করতে না পারলে ভিন্ন ভাষাভাষী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জুম্ম জাতিসমূহের সার্বিক উন্নয়ন সাধন এবং স্বকীয় সংস্কৃতি ও স্বাতন্ত্র্যতা নিয়ে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। বি কে রোয়াজা ছিলেন একজন শিক্ষা অনুরাগী ব্যক্তি। খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়টি জুনিয়র হাই স্কুল থাকাকালীন স্কুলটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য অবৈতনিক প্রধান শিক্ষক হিসেবে তিন বছর এবং সেক্রেটারী হিসেবে আরও তিন বছর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সচরাচর পদাধিকার বলে স্কুল পরিচালনায় প্রধান শিক্ষকই সেক্রেটারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করার নিয়ম হলেও স্কুলের উন্নয়ন, প্রশাসনিক তদারকি এবং সুষ্ঠু তহবিল পরিচালনা করার নিমিত্তে স্কুল পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয় প্রশাসনের অনুরোধে তিনি স্বেচ্ছাব্রত নিয়ে এই দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ফলশ্রুতিতে এই স্কুলটি পূর্ণাঙ্গ হাই স্কুলে পরিণত হয় এবং এতে এলাকার সর্বস্তরের জনগণের শিক্ষা প্রসারের পথ সুগম হয়। তিনি ঠাকুরছড়াস্থ হাই স্কুল প্রতিষ্ঠায়ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের সামাজিক, জাতীয় প্রথা ও লোকাচার অনুসারে সুষ্ঠু সামাজিক ও পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য পাকিস্তান আমলে তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার তিন মহকুমায় ওয়েলফেয়ার অফিসার পদ সৃষ্টিতেও তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৭৪ সালে খাগড়াছড়ি মহকুমার অনারারী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিযুক্ত হন এবং দীর্ঘ পাঁচ বছর পর্যন্ত এ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এ দায়িত্ব পালন কালে খাগড়াছড়ির জনগণ স্ব স্ব ক্ষেত্রে লোকাচার ও কুলীয় প্রথানুযায়ী আইনী সুবিধা লাভ করে উপকৃত হয়েছিল।
বি কে রোয়াজা বর্তমান খাগড়াছড়ি জেলার ত্রিপুরা অধ্যুষিত এলাকা ঠাকুরছড়া গ্রামে ১৯১৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৮৫ সালের ২ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। পিতা শরৎচন্দ্র রোয়াজা ছিলেন একজন মৌজা হেডম্যান ও সুকবি। তখনকার সময়ে শরৎচন্দ্র রোয়াজার পরিবারটি ছিল সচ্ছল ও প্রভাবশালী। সেই পরিবারের একমাত্র সন্তান ছিলেন বি কে রোয়াজা। খাগড়াছড়ি জন্মগ্রহণ করলেও তাঁর লেখাপড়া শুরু হয় রাঙ্গামাটিতে। ১৯৩২ সালে রাঙ্গামাটি সরকারি হাই স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন, ১৯৩৪ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯৩৬ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাশ করেন। কর্মজীবনের শুরুতেই তিনি রাঙ্গামাটি হাই স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তাঁর এই শিক্ষকতায় পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের প্রথম রাজনৈতিক দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে গুরু দায়িত্ব গ্রহণ করতে অবদান রেখেছিল। কেননা জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলন গোড়া পত্তনে শিক্ষক সমাজই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। ভিন্ন ভাষাভাষী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জুম্ম জাতিসমূহের একজন অগ্রণী সৈনিক হিসেবে বি কে রোয়াজা জনসংহতি সমিতির সাংগঠনিক ভিত্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নানাভাবে ভূমিকা পালন করেছিলেন।
নবগঠিত জনসংহতি সমিতির সাংগঠনিক ভিত্তি ছিল তৎকালীন পাহাড়ি ছাত্র সমিতির নেতৃত্ব তথা জুম্ম ছাত্র সমাজ। জনসংহতি সমিতির সদস্যদের পাশাপাশি সংগঠনের সাংগঠনিক কাঠামা প্রসারে জুম্ম ছাত্র সমাজের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে প্রণিধানযোগ্য। এভাবেই সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তোলা হয় জুম্ম জনগণের আশা-আকাঙ্খার প্রতীক পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির। জনসংহতি সমিতি জন্মের সাথে সাথে ঘোষণা করে যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম হচ্ছে এগারটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতির আবাসভূমি। জনসংহতি সমিতি গঠনের অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জুম্ম জাতিসমূহের নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ, নিপীড়ন, বঞ্চনা ও শোষণ বন্ধ করা;
ভিন্ন ভাষাভাষী জুম্ম জাতিসমূহের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি বিকাশ সাধন করা এবং
পার্বত্য চট্টগ্রামের পৃথক অস্তিত্ব সংরক্ষণের জন্য আত্মানিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
মানবতাকে আদর্শ হিসেবে ধারণ করে জাতিগত ও সম্প্রদায়গত নির্যাতন-নিপীড়ন এবং মানুষ কর্তৃক মানুষের শোষণ ও বঞ্চনার অবসান তথা বৈষম্যহীন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির আত্মপ্রকাশ ঘটে। জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমঅধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচার- এই মূলনীতির ভিত্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভিন্ন ভাষাভাষি জুম্ম জাতিসমূহ জনসংহতি সমিতির পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে। সূচিত হয় জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আদায়ের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে শুরু হয় জুম্ম জনগণের দাবী আদায়ের সংগ্রাম।
জনসংহতি সমিতির গঠনতন্ত্রের প্রস্তাবনায় বলা হয় যে, “পার্বত্য চট্টগ্রামের ভিন্ন ভাষাভাষি জুম্ম জনগণ যুগ যুগ ধরে নির্মমভাবে নিপীড়িত ও শোষিত হয়ে আসছে। স্বাধীন রাজার আমলে, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের রাজত্বকালে, পাকিস্তানের শাসনামলে এবং অধুনা বাংলাদেশের সময়ে – কোন কালেই জুম্ম জাতি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়ন, বঞ্চনা ও শোষণের নগ্ন হাত থেকে রেহাই পায়নি। স্বাধীন রাজার আমলে সামন্তবাদের নির্মম নির্যাতন ও নিপীড়ন, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের রাজত্বকালে ঔপনিবেশিক নিপীড়ন ও শোষণ, পাকিস্তান শাসনামলে মৌলবাদ ও সম্প্রসারণবাদের শোষণ ও ষড়যন্ত্র এবং বাংলাদেশের সময়ে উগ্র জাতীয়তাবাদ, মৌলবাদ ও সম্প্রসারণবাদের প্রতারণা, নিপীড়ন ও শোষণে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ সর্বস্বহারা, ক্ষত-বিক্ষত ও বিলুপ্তপ্রায়। অন্যদিকে ব্রিটিশ শাসনামল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী বাংলা ভাষাভাষি জনগণও ঔপনিবেশিক, অগণতান্ত্রিক ও মৌলবাদী শাসন, শোষণ ও বঞ্চনার শিকারে পরিণত হয়ে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে চরমভাবে বিপর্যস্ত ও বিপন্ন। তাই সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও আমলা পুঁজিবাদের নিপীড়ন, বঞ্চনা ও শোষণ এবং উগ্র জাতীয়তাবাদ, মৌলবাদ ও সম্প্রসারণবাদ অবসান করার লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের গণতান্ত্রিক, দেশপ্রেমিক ও প্রগতিশীল শক্তি একাত্মতা ঘোষণা করে বৈষম্যহীন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছে।”
সাংবাদিক বিপ্লব রহমানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে (১৯৯৪ সালে ৪ মে ধুধুকছড়ায়) জনসংহতি সমিতি গঠন সম্পর্কে সন্তু লারমা বলেছিলেন যে, “পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি হলো ১০ ভিন্ন ভাষাভাষী জুম্ম জনগণ, অর্থাৎ চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, ম্রো, বম, খিয়াং, পাংখো, লুসাই, খুমি এবং চাক এর একমাত্র রাজনৈতিক সংগঠন। জুম্ম জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব ও বিকাশ, ভূমির অধিকার প্রতিষ্ঠা, গণতান্ত্রিক শাসন ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, তথা জুম্ম জনগণের সকল প্রকার পশ্চাৎপদতা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে এবং সর্বোপরি দেশের কোন রাজনৈতিক দল কোনো প্রকারের ন্যূনতম কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে না আসায় এবং প্রায় সকল ক্ষেত্রে অবজ্ঞা ও চরম অবহেলা দেখানোর ফলে জুম্ম জনগণের একটি নিজস্ব রাজনৈতিক সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে অনুভব করা হয়। এই পটভূমিতে ভিন্ন ভাষাভাষী জুম্ম জনগণের ব্যাপক সমর্থনে এম এন লারমার নেতৃত্বে ১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জনসংহতি সমিতি গঠিত হয়। এটি একই সঙ্গে নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে। …যখন জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব ও ভূমির অধিকার প্রতিষ্ঠার সব ধরনের আবেদন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়, তখন নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সংগ্রাম করার সকল পথ রুদ্ধ হয়ে যেতে থাকে ও অধিকারকামী জুম্ম জনগণকে সশস্ত্র সংগ্রামের দিকে ঠেলে দেয়া হতে থাকে। …যার ফলে জেএসএস সশস্ত্র আন্দোলনের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়। জনসংহতি সমিতি কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে বিশ্বাসী নয়। এটি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের অধীনে জুম্ম জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব, ভূমিস্বত্ব, গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকার সাংবিধানিকভাবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়।”
বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের পর পরই এম এন লারমার নেতৃত্বে জুম্ম জনগণের প্রতিনিধিবৃন্দ পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য নিজস্ব আইন পরিষদ সম্বলিত স্বায়ত্তশাসন আদায়ের জন্য জাতীয় পর্যায়ে দ্বারে দ্বারে ধর্না দিয়েছিলেন। বিশেষ করে ন্যাশনাল আওয়ামী পাটি (ন্যাপ), বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টি, আওয়ামীলীগ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দের সাথে দফায় দফায় বিভিন্ন সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানের জন্য অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এম এন লারমাকে তাদের রাজনৈতিক দলে যোগদানের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ন্যাপের মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। তিনি একমাত্র ব্যক্তি যিনি এম এন লারমাকে বলেছিলেন, কঠোর-কঠিন দুর্বার আন্দোলন সংগঠিত করে নিজের অধিকার নিজেদের উদ্যোগে শাসকগোষ্ঠী থেকে ছিনিয়ে নিতে। কতিপয় রাজনৈতিক দল থেকেও এ বিষয়ে সমর্থনের আশ্বাসও পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কার্যত তা ছিল কেবল মুখের বুলি ও কাগজের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বাস্তব ক্ষেত্রে বিশেষ রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করে কোন দলই এগিয়ে আসেনি। ফলত এম এন লারমা জুম্ম জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভিত্তিক আন্দোলন ও একটি শক্তিশালী ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক দল গঠনে প্রয়াসী হন।
জনসংহতি সমিতি প্রতিষ্ঠার পর রাঙ্গামাটি মাঝেরবস্তিতে স্থাপিত পার্বত্য চট্টগ্রাম নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অফিসটি জনসংহতি সমিতির অফিস হিসেবে পরিচালিত হতে থাকে। সেসময় জনসংহতি সমিতির অন্যতম সদস্য অনাদি রঞ্জন চাকমা দপ্তর সম্পাদক হিসেবে পার্টির দাপ্তরিক কার্যাবলী সম্পাদন করতেন। জনসংহতি সমিতির প্রায় সকল নীতি-নির্ধারণী দলিলপত্রাদি এম এন লারমা নিজেই প্রণয়ন করতেন। তাঁর বাস্তবসম্মত নীতি-কৌশলের জেরে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক দিক থেকে এক শক্তিশালী রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল অসাধারণ। তাঁর প্রতিটি ব্যাপারে ছিল নিখুঁত বিচার বিশ্লেষণ। তাঁর অসাধারণ দক্ষতায় অতি অল্প সময়ের মধ্যেই জনসংহতি সমিতি সুসংগঠিত হয়ে উঠে। এম এন লারমার সুচিন্তিত বৈপ্লবিক কর্মসূচি অনুসারে জনসংহতি সমিতি অগ্রসর হতে থাকে।
বস্তুত জনসংহতি সমিতিই জুম্ম জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। জনসংহতি সমিতি জুম্ম জনগণের জাতীয় চেতনার উন্মেষ সাধন করেছে। সুতরাং জাতীয় অস্তিত্ব ও জন্মভূমির অস্তিত্ব সংরক্ষণ ও বিকাশের সংগ্রামে জনসংহতি সমিতি তার ঐতিহাসিক দায়িত্ব ও ভূমিকা পালন করে চলেছেই। সংগ্রামের রূপ হচ্ছে জাতীয় অস্তিত্ব ও জন্মভূমির অস্তিত্ব সংরক্ষণ ও বিকাশ সাধন। জুম্ম জনগণের দেশপ্রেমিক অংশ এই সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান করে চলেছে। আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার সংগ্রামে কঠিনতম দিনগুলোতেও জনসংহতি সমিতির নেতৃত্ব বিভ্রান্ত ও বিচলিত না হয়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সমর্থ হয়েছে। কোন প্রকারের ষড়যন্ত্র জনসংহতি সমিতি স্তব্ধ করে দিতে সদা প্রস্তুত। জনসংহতি সমিতি জুম্ম জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক। এই সমিতি পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আদায়ের সংগ্রামে পুরোধায় রয়েছে তার ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের জন্য। পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়িত ও শোষিত জুম্ম জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব ও জন্মভূমির অস্তিত্ব সংরক্ষিত না হওয়া পর্যন্ত জনসংহতি সমিতি তার সুনিদিষ্ট কর্মসূচি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ক্রমাগত এগিয়ে যাবেই।
(চলবে……………………)