হিল ভয়েস, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ঢাকা: সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব সরকারি দলের বিগত নির্বাচনী ইশতেহারে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতিসমূহ অনতিবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবিতে চলমান আন্দোলনের এক পর্যায়ে আজ ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, রোববার, সন্ধ্যে ৭টায় আওয়ামী লীগের ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত বৈঠকে ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. রানা দাশগুপ্ত দেশব্যাপী বিরাজমান সংখ্যালঘু পরিস্থিতির সার্বিক চিত্র তুলে ধরে বলেন, এরা আজ সার্বিকভাবে হতাশাগ্রস্ত ও বিপর্যস্ত। নির্বাচনের তারিখ এগিয়ে আসার সাথে সাথে এদের উপর অব্যাহত নানামুখী হামলা আরও জোরদার হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা ব্যক্ত করেন।
এ্যাড. দাশগুপ্ত সরকারি দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিসমূহ বাস্তবায়নের উপর জোর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, তা না হলে সংখ্যালঘুরা অধিকতর হতাশ হয়ে পড়তে পারে। যা আগামী নির্বাচনে ভোটদানে তাদের নিরুৎসাহিত করবে।
তিনি বলেন, আমাদের জানামতে, দেবোত্তর সম্পত্তি আইনের খসড়া বিল ইতোমধ্যেই প্রস্তুত হয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। আর বৈষম্য বিলোপ আইনের খসড়া বিল সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। বৈঠকের এক পর্যায়ে ঐক্য পরিষদ কর্তৃক খসড়া বিল আকারে প্রস্তুতকৃত সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন সম্পর্কিত বিলের খসড়া ওবায়দুল কাদেরের হাতে অর্পন করা হয়।
এ্যাড. দাশগুপ্ত বলেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি, পার্বত্য ভূমি কমিশন অনেকটা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এর ফলে পার্বত্য অঞ্চলেও হতাশা বেড়েছে এবং নানামুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে অনতিবিলম্বে তা কার্যকরীকরণ ছাড়া বিকল্প কোনো পথ আজ আর খোলা নেই। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন দীর্ঘকাল আগে হলেও ট্রাইব্যুনাল ও আপিল ট্রাইব্যুনালে আবেদন নিষ্পত্তির হার এখনও আশানুরূপ নয়। আপিল ট্রাইব্যুনালে মামলা নিষ্পত্তি হলেও জেলা প্রশাসকরা তা দাবিদারদের আইনের সীমার মধ্যে প্রত্যর্পণ করছেন না, যাতে তারা যথেষ্ট হয়রানির মুখোমুখি হচ্ছে। অনতিবিলম্বে এর সমাধান প্রয়োজন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিকে ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মনোনীত করায় আওয়ামী লীগকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলা হয়, তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় গোটা জাতি ধন্য হয়েছে। এ্যাড. দাশগুপ্ত ২০০১-২০০৬ সালের সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের ঘটনাবলীর স্বরূপ উন্মোচনের জন্য গঠিত সাহাবুদ্দিন কমিশনের রিপোর্টের সুপারিশাবলীর আলোকে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণের রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রমাণের জন্য ওবায়দুল কাদেরের প্রতি আহ্বান জানান।
বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রানা দাশগুপ্তের বক্তব্যের সাথে সম্পূর্ণ ঐকমত্য পোষণ করে বলেছেন, নির্বাচনী ইশতেহারের অঙ্গিকার বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমাদের। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে যথাসময়ে অবহিত করা হবে। তিনি এ মর্মে আশা প্রকাশ করেন যে, এসব দাবি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন।
তিনি বলেন, বিগত চার বছরের মধ্যে দুটো সঙ্কট আমাদের অতিক্রম করতে হয়েছে। তার একটি কোভিড সঙ্কট, অন্যটি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, যা সরকারকে এখনও মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এ কারণে অন্য বিষয়গুলোর প্রতি আমাদের দৃষ্টি দেওয়া সম্ভব হয়নি।
জনাব কাদের স্বীকার করে বলেছেন, সংখ্যালঘু জনজীবনের বিরাজিত সঙ্কটের সাথে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ছাড়াও তার দলের কয়েকজন সাংসদ, নেতা ও দলের ভিতরকার পরগাছারা সম্পৃক্ত। এদের চিহ্নিত করা হচ্ছে যাতে আগামী নির্বাচনে তারা কোনোভাবেই দলীয় মনোনয়ন না পায়।
বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্মল চ্য্যাটার্জী। অপরদিকে ঐক্য পরিষদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক, নির্মল রোজারিও, কাজল দেবনাথ, জে এল ভৌমিক, বাসুদেব ধর, মিলন কান্তি দত্ত, ভদন্ত সুনন্দপ্রিয় ভিক্ষু, রঞ্জন কর্মকার, মনীন্দ্র কুমার নাথ, জয়ন্ত কুমার দেব, এ্যাড. তাপস পাল ও সন্তোষ শর্মা।