শ্রী দুর্জয়
মহান নেতা এম এন লারমার আহ্বানে-
ঊনিশ শ’ বাহাত্তরের পনের ফেব্রুয়ারি,
‘পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি’
পার্বত্য মায়ের বুকে জনম তার,
ভাসালো লড়াই-সংগ্রামের জীবনতরী।
বুকে আগলে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা,
ম্রো, লুসাই, পাংখো, বম, খিয়াং, খুমি ও চাক-
আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার মহান ডাক।
ল’য়ে মুক্তির শপথ, দৃপ্ত অঙ্গীকার,
বীর সংগ্রামী জুম্ম জনতার।
জুম্ম জাতীয়তাবাদের অমোঘ মন্ত্রে দীক্ষিত-
মুক্তি পাগল জনতা, গাহে মুক্তির জয়গান,
দিকে দিকে আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত-রণিত।
নিপীড়িত-বঞ্চিত ও অবহেলিত জুম্ম জনতা
লাঞ্ছনা-গঞ্জনায় আধমরা বিপর্যস্ত মানবতা।
মায়ের বুকে ছল ছল গতি অবিচল- কর্ণফুলি,
কাচালং, মাইনি, চেঙ্গি, শঙ্খ- মাতামুহুরি।
এছাড়া অগুণতি পাহাড়ি ঝর্ণা, জলধারা
উঁচু উঁচু পাহাড়-পর্বত আর কত গিরিধারা।
ষড়যন্ত্রের কালো হাতে, হায়েনার কষাঘাতে,
রক্তে রঞ্জিত এ পার্বত্য জনপদ!
অবিরত লড়াই-সংগ্রাম, তবু হয়নি মুক্ত, নিরাপদ।
ভুলোংতলী, ফুরোমোন, ফালিটাঙ্যা, চিম্বুক-কেউক্রাডং,
আরো জানা-অজানা আছে কতই পাহাড়-পর্বত,
যেমন নয়া এক আবিষ্কার উঁচু পাহাড় তাজিনডং।
সারি সারি অগণিত বৃক্ষরাজি,
সবুজ বন-উপবন, গাছ-বাঁশ, লতাগুল্ম
আহা! প্রকৃতির এমনই এক অপূর্ব সুষ্টি!
তাইতো পৃথিবীর সৃষ্টির অপূর্ব এক নাম!
ভিন্ন ভিন্ন ভাষাভাষি জাতিগোষ্ঠীর
বর্ণিল আবাসভূমি এ পার্বত্য চট্টগ্রাম।
পাষাণ লোভাতুর শাসকের শকুনি দৃষ্টি!
নখের আঁচড়ে ক্ষত-বিক্ষত এ মহান সৃষ্টি।
ভাবি সতত এদেশের মাটি, এদেশের প্রাণ-মোদেরই জান,
সৃষ্টির অপরূপ সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি- পার্বত্য চট্টগ্রাম।
সইবো না দখলদারের কোনো অপমান,
চাই চাই বহিরাগতের প্রস্থান, চাই-
আদি বাঙালি ও আদিবাসীর সহাবস্থান।
জনসংহতি সমিতির একান্নতম জন্ম জয়ন্তী!
ডাক দেয়, লড়াই-সংগ্রামে জুম্মজনতার ঐক্য-সংহতি,
আর নয় সংঘাত, লাভ নেহি আপন-আপনারে হানিয়া,
ঐক্যের বাঁধন বুনি, সকল বিভেদ ভুলিয়া।
‘জনসংহতি সমিতি’ আর্তমানবতার মুক্তি ত্রাতা-
একান্নতম বর্ষে, লড়াইয়ের হরষে তার মহা অগ্রযাত্রা।
দৃপ্ত শপথে লড়াইয়ের মহারথে এগিয়ে চলার বারতা,
মুক্তির তরে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে চলো- হে জুম্মজনতা।