হিল ভয়েস, ৬ জানুয়ারি ২০২৩, রাঙ্গামাটি: আজ ৬ জানুয়ারি ২০২৩, রাঙ্গামাটির ডিসি অফিস ফটকে বান্দরবানে ‘লামা রাবার ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড’ কর্তৃক লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে রেংইয়েন ম্রো কার্বারি পাড়ায় বারংবার অগ্নিসংযোগ ও হামলার প্রতিবাদে এবং হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোনারিতা চাকমার সভাপতিত্বে এবং হিরা চাকমার সঞ্চালনায় মানববন্ধনে সংহতি বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি, রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিপন ত্রিপুরা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শান্তি দেবী তঞ্চঙ্গ্যা, সাধারণ শিক্ষার্থী এলি চাকমা। মানববন্ধনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন, রাঙ্গামাটি জেলা শাখার তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কাঞ্চনা চাকমা।
সংহতি বক্তব্যে রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী এলি চাকমা পাহাড়ের ভূমিপুত্রদের নিজ বাসভূমি থেকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্রে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।
হিল উইমেন্স ফেডারেশন, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শান্তি দেবী তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, বান্দরবানে লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে ম্রোদের গ্রামে রাবার কোম্পানি ধারাবাহিকভাবে একের পর এক হামলা চালাচ্ছে। ম্রোদের নিজ বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ, ঝিরিতে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা চেষ্টা, সর্বশেষ রাতের আঁধারে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হল। বারবার প্রতিবাদ জানানোর পরেও প্রশাসন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। প্রশাসনের কাছ থেকে যদি এটির সমাধান না আসে তাহলে এই প্রতিবাদ সমাবেশ অব্যাহত থাকবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা সংহতি জানিয়ে বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে উন্নয়ন দরকার। কিন্তু, পাহাড়ে উন্নয়নের কথা বলে রাতের আঁধারে লুটপাট করা হয়, জায়গা জমি কেড়ে নেওয়া হয়। এখন উন্নয়নের কথা শুনলে আমরা উচ্ছেদ হওয়ার ভয়ে, আতঙ্কে থাকি। লামা রাবার ইন্ডাষ্ট্রিজ কোম্পানির হীন কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার এবং ক্ষতিগ্রস্ত ম্রো পরিবারগুলোকে যথাযথ পুনর্বাসনের জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান তিনি।
সংহতি বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিপন ত্রিপুরা বলেন, যারা রক্ষক তারাই ম্রোদের অধিকার হরণ করছে। যারা আইনের শাসন করতে শেখায়, যারা নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলে, তারাই ম্রোদের ভূমি দখল করতে রাবার কোম্পানিকে আশ্রয় দিয়েছে। ঘটনার ৪ দিন হওয়ার পরেও কোনো মামলা হয়নি। দোষীরা দিনে দুপুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। উল্টো প্রশাসনের পক্ষ থেকে ম্রোদের নানা ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। যার ফলে ভুক্তভোগী ম্রোরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বান্দরবান জেলা প্রশাসন রাবার কোম্পানিকে যেভাবে ভূমি লীজ দিয়েছে সেটি পার্বত্য জেলা পরিষদের আইন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সাথে সাংঘর্ষিক। লীজ নিয়েও লীজের শর্ত ভঙ্গ করায় ১৬০০ একর ভূমির উপর তাদের মালিকানা থাকতে পারে না। তিনি লামা রাবার কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ করার দাবি জানান।
তিনি বলেন, পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক ভূমি কমিশন কাজ করতে পারলে ভূমি সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ায় ভূমি কমিশন তার কার্যক্রম করতে পারছে না। কমিশনের জন্য আঞ্চলিক পরিষদ কর্তৃক প্রেরিত বিধিমালা সরকার অনুমোদন না দেওয়ায় ভূমি কমিশন কাজ করতে পারছে না। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল সকল সমস্যা শান্তিপূর্ণ ও রাজনৈতিকভাবে সমাধানের লক্ষ্যে অতি দ্রুত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করার দাবি জানান।
উল্লেখ্য, গত ২ জানুয়ারি ২০২৩, রাত ১:০০ ঘটিকায় লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের দায়িত্বরত দেলোয়ার, নুরু ও মহসিনের নেতৃত্বে রাবার বাগানের শ্রমিক ও ৪ ট্রাক বহিরাগত ভাড়াটে লোকসহ প্রায় ১৫০ জনের অধিক বহিরাগত লোক মিলিত হয়ে সরই ইউনিয়নের রেংয়েন ম্রো কার্বারি পাড়ার ম্রো গ্রামবাসীদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। একে রেংয়েন ম্রো কার্বারি পাড়ার ম্রো গ্রামবাসীর ৭টি বাড়ি সম্পূর্ণভাবে ভস্মীভূত হয় এবং ২টি বাড়ি ভেঙে দেয়া হয়।
আরো উল্লেখ্য যে, ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত সরই ইউনিয়নের লাংকম ম্রো কার্বারি পাড়া, জয়চন্দ্র ত্রিপুরা কার্বারি পাড়া ও রেংয়েন ম্রো কার্বারি পাড়ার আদিবাসীদের উপর লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ভাড়াটে লোকদের কর্তৃক ১১ বার হামলা এবং ২টি ষড়যন্ত্রমূলক সাজানো মামলা দায়ের করা হয়।