হিল ভয়েস, ৪ জানুয়ারি ২০২৩, ঢাকা: বান্দরবানের লামা উপজেলায় ম্রো গ্রামবাসীদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় বিচার দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। এসব সংগঠন বান্দরবানের লামা উপজেলায় ম্রো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে চলমান সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে।
এইচআরএফবি’র বিবৃতি:
গতকাল মঙ্গলবার (জানুয়ারি ০৩) এক বিবৃতিতে মানবাধিকার ও উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা ২০ সংগঠনের এ জোট হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি) পাহাড়িদের ওপর হামলার ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত করে শাস্তি দেওয়ার দাবি করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয় যে, লামা উপজেলার সরইয়ে গত রোববার রাতে রেংয়েন ম্রো পাড়ায় হামলা চালিয়ে লুটপাট, সাতটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করার অভিযোগ পাওয়া যায়। শীতের রাতে হামলার সময় পাড়ার নারী-পুরুষ ও শিশুরা পালিয়ে রক্ষা পেলেও তাদের ঘরবাড়ি থেকে কাপড়-চোপড় ও মালামাল হামলাকারীরা নিয়ে গেছেন। পাড়াবাসীর অভিযোগ, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড কোম্পানি তাঁদের উচ্ছেদ করে জমি দখলের জন্য ট্রাকভর্তি লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে এসে হামলা ও লুটপাট চালিয়েছে।
এইচআরএফবির বিবৃতিতে বলা হয়, এসব অভিযোগের বিপরীতে কার্যকর প্রশাসনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ধারাবাহিকভাবে এসব ঘটনা ঘটে চলেছে এবং ম্রো সম্প্রদায়ের মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা প্রতিহত করতে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে দ্রুততার সঙ্গে নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। ম্রো সম্প্রদায়ের নিরাপত্তাসহ তাদের মানবাধিকার সুরক্ষায় দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রতিবাদ:
মঙ্গলবার (জানুয়ারি ০৩) এক বিবৃতিতে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) বলেছে, কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা না নিলে এ ধরনের ঘটনা চলতেই থাকবে। তারা ম্রো সম্প্রদায়ের পুনর্বাসনের দাবি জানান।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় যে, বিদ্যমান দায়মুক্তির সংস্কৃতি এই অপরাধীদের আদিবাসীদের উপর বারবার আক্রমণ চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করে।
উদীচীর প্রতিবাদ:
গতকাল মঙ্গলবার (জানুয়ারি ০৩) এক বিবৃতিতে বান্দরবানের লামা উপজেলায় ম্রো জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন এ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
বিবৃতিতে তারা বলেন, রাতের আঁধারে ট্রাকভর্তি লোকজন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ম্রোদের ওপর যে হামলা চালিয়েছে তা বর্বরোচিত এবং নৃশংস।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত রোববার রাতে উপজেলার সরই ইউনিয়নের রেংয়েন ম্রো পাড়ায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। এর সঙ্গে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কোম্পানির লোকজন জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন পাড়াবাসী। ওই এলাকায় ম্রো জাতিগোষ্ঠীর জুম জমিতে রাবার বাগান করা নিয়ে গত বছরের শুরু থেকেই দ্বন্দ্ব চলছে।
উদীচী নেতৃবৃন্দ বলেন, রাতের হামলায় ম্রোদের রেংয়েন ম্রো পাড়ার তিনটি ঘর আগুনে সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। আরও তিনটি ঘর সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা হয়েছে। পাড়ার অন্য দুটি ঘরে ভাঙচুর ও ঘরের জিনিসপত্র তছনছ করে ফেলা হয়। ঘরের ভেতরে চাল, রান্না করা ভাত ও শীতের কাপড় এলোমেলো অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি।
এ সময় তারা বলেন, এর আগেও গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় আদিবাসী ও সংখ্যায় কম জনগোষ্ঠীর ঘরবাড়ি এবং জমি দখলের জন্য এ ধরনের হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সেগুলোর কোনোটির ক্ষেত্রেই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না হওয়ায় আবারও এমন ঘটনা ঘটানোর সাহস পেয়েছে দুর্বৃত্তরা। তাই লামায় ম্রো জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান উদীচী নেতৃবৃন্দ।