হিল ভয়েস, ৩ জানুয়ারি ২০২২, ঢাকা: আজ ৩ জানুয়ারি ২০২৩, সোমবার, বিকাল ৪:০০ টায় বান্দরবানে ‘লামা রাবার ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড’ কর্তৃক লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে রেংইয়েন ম্রো কার্বারি পাড়ায় বারংবার অগ্নিসংযোগ ও হামলার প্রতিবাদে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), ঢাকা মহানগর শাখা এবং বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ যৌথভাবে ঢাকায় এক প্রতিবাদী সমাবেশের আয়োজন করেছে।
সমাবেশে পিসিপি’র ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি রেং ইয়ং ম্রো’র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জগদীশ চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পিসিপি এবং আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি, ঢাকা পলিটেকনিক শাখার সভাপতি রুবেল চাকমা।
স্বাগত বক্তব্যে রুবেল চাকমা বলেন, আজ আমরা নিজেদের দায়িত্ববোধ থেকেই এখানে হাজির হয়েছি। বারবার মিছিল সমাবেশ করছি আমরা। কিন্তু প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তবুও আমরা অন্যায় এবং অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেই যাব। পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি সমস্যা সমাধানের জন্য চুক্তি মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন কার্যকর করাসহ পাহাড়ের প্রকৃত সমস্যা সমাধানে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ ও পূূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি।
পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি তরুণ চাকমা বলেন, লামার ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ষড়যন্ত্রের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার ফলে এসব ঘটনা বারবার ঘটছে বলে আমি মনেকরি।
বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চ্যুংয়্যুং ম্রো সংহতি বক্তব্যে বলেন, তারা বারংবার হামলা চালাচ্ছে। প্রশাসন সবসময় আশ্বাস দেয় কিন্তু সেই আশ্বাস কখনো বাস্তবায়ন হয়নি। এর জন্য রাষ্ট্রকে জবাব দিতেই হবে।
সভাপতির বক্তব্যে রেং ইয়ং ম্রো বলেন, রাতের আধারে অগ্নিসংযোগ, হামলা এবং লুটপাট একটি গণহত্যার প্রচেষ্টা। এই গণহত্যার বিচার চাই। যদি বিচার না পাই, যদি রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যাওয়া মানুষগুলো প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তোলে সেই দায় কিন্তু রাষ্ট্রকে নিতে হবে। কেননা, এই লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি লিমিটেডের দস্যুতার কারণে আমরা ইতোমধ্যে এখানে বারবার সমবেত হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আমলা, সাবেক সেনাসদস্যরা নামেমাত্র কোম্পানি খুলে তাদের উচ্ছেদের পায়তারা করছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কী করছে? স্থানীয় প্রশাসন ম্রো ত্রিপুরাদের সাহায্য করার বদলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কোম্পানীর লোকদের সহযোগিতা করছে। স্থানীয় থানার এসআই শামীম স্থানীয়দের অন্যত্র চলে যাওয়ার হুমকিও দিয়েছে। প্রগতিশীল মানুষদের উদ্যোগে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে গেলে সেখানেও প্রশাসন বাধা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২ জানুয়ারি ২০২২, রাত ১:০০ ঘটিকায় লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের দায়িত্বরত দেলোয়ার, নুরু ও মহসিনের নেতৃত্বে রাবার বাগানের শ্রমিক ও ৪ ট্রাক বহিরাগত ভাড়াটে লোকসহ প্রায় ১৫০ জনের অধিক বহিরাগত লোক মিলিত হয়ে সরই ইউনিয়নের রেংয়েন কার্বারি পাড়ার ম্রো গ্রামবাসীদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। এতে রেংয়েন কার্বারি পাড়ার ম্রো গ্রামবাসীর ৭টি বাড়ি সম্পূর্ণভাবে ভস্মিভূত হয়েছে এবং ২টি বাড়ি ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত সরই ইউনিয়নের লাংকম ম্রো কার্বারি পাড়া, জয়চন্দ্র ত্রিপুরা কার্বারি পাড়া এবং রেংয়েন ম্রো কার্বারি পাড়ার আদিবাসীদের উপর লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের ভাড়াটে লোকদের কর্তৃক ১১ বার হামলা এবং ২টি ষড়যন্ত্রমূলক সাজানো মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানা গেছে।