হিল ভয়েস, ১৮ জানুয়ারি ২০২৩, বিশেষ প্রতিবেদক: ইসলামী জঙ্গী সংগঠন ‘জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সদস্যদেরকে সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদানে প্রশিক্ষক বা ওস্তাদ হিসেবে কাজ করছে বমপার্টি নামে খ্যাত কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)-এর চারজন সামরিক সদস্য। কেএনএফের এই চারজন প্রশিক্ষক হলেন-
(১) লালমুনঠিয়াল বম, যিনি নিজেকে কর্ণেল সলোমান এবং কেএনএফের তথ্য ও গোয়েন্দা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন;
(২) ভাঙচুংলিয়ান বম, যিনি কেএনএফের সাধারণ সম্পাদক ও সামরিক শাখার কেএনএ-এর প্রধান হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন;
(৩) লালমুন সাং বম, যিনি ‘পাদন’ ছদ্মনাম ব্যবহার করে থাকেন এবং কেএনএ-এর একজন কম্যান্ডার হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন; এবং
(৪) দিদার ওরফে চম্পাই, তবে তার সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য জানা যায়নি।
সম্প্রতি অনুসন্ধানে উঠে আসে যে, ২০০৬ সাল থেকে ‘জামায়াতে আরাকান’ নামে এবং ২০১৮ সাল থেকে নাম পরিবর্তন করে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, থানচি ও আলিকদম এবং কক্সবাজার-সংলগ্ন মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের মংদু অঞ্চলের একাংশ নিয়ে একটি ‘স্বাধীন ইসলামী রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার গোপন মিশন নিয়ে জঙ্গী তৎপরতায় লিপ্ত ইসলামী জঙ্গীদেরকে অর্থের বিনিময়ে বমপার্টি খ্যাত কেএনএফ তাদের ক্যাম্পে আশ্রয় ও সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে।
এটা জানা যায় যে, বমপার্টির প্রধান নাথান বম এবং জামায়াত আরাকান বা জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার প্রধান শামীম মাহফুজ একই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং বন্ধু ছিলেন। তাদের দুই সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাংঘর্ষিক হলেও পুরানো বন্ধুদের সুবাদে দুই সংগঠন ২০২০ সালে একে অপরকে সহযোগিতা করতে সমঝোতা চুক্তিতে আবদ্ধ হয়।
সেই সমঝোতা চুক্তির অংশ হিসেবে নাথান বমের নেতৃত্বাধীন কেএনএফ সদস্যরা ইসলামী জঙ্গী সংগঠনের সদস্যদেরকে আশ্রয় ও সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। তার বিনিময়ে শামীম মাহফুজ নেতৃত্বাধীন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া কেএনএফকে মাসওয়াড়ী ও এককালীন অর্থ সহায়তা দিয়ে আসছে।
উল্লেখ্য যে, ‘ভাগ করো শাসন করো’ উপনেবিশক নীতির ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর মদদে ২০০৮ সালে বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার নাথান বমকে সভাপতি ও ভাঙচুনলিয়ান বমকে সাধারণ সম্পাদক করে বম জনগোষ্ঠীর কতিপয় সুবিধাবাদী ও স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি কর্তৃক কুকি-চিন ডেভেলাপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএনডিও) নামে একটি সংগঠন গঠন করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে ঐ সংগঠনটির নাম কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামে নাম পরিবর্তন করা হয় এবং কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) নামে এর সশস্ত্র গ্রুপ গঠন করা হয়।
অনুসন্ধানে এটাও বেরিয়ে এসেছে যে, কেএনএফ কর্তৃক আন্তর্জাতিক ইসলামী জঙ্গী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সদস্যদেরকে প্রশ্রয়প্রদানের ঘটনা জেনেও না জানার ভান করে গোড়া থেকেই সেনাবাহিনী প্রকারান্তরে কেএনএফ ও ইসলামী জঙ্গীদেরকে মদদ দিয়ে থাকে। এমনকি গত অক্টোবর থেকে ইসলামী জঙ্গী ও জঙ্গীদের প্রশ্রয়দানকারী কেএনএফের বিরুদ্ধে পরিচালিত যৌথবাহিনীর কম্বিং অপারেশনের সময়ও কেএনএফ ও ইসলামী জঙ্গীদেরকে রোয়াংছড়ির সিপ্পি পাহাড়ে স্থাপিত আস্তানা থেকে পালিয়ে যেতে কৌশলে সুযোগ দিয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।