হিল ভয়েস, ৩০ ডিসেম্বর ২০২২, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার লংগদু উপজেলায় ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ ও পুর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে ছাত্র ও যুব সমাজ বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হোন’ শ্লোগান নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) লংগদু থানা শাখার ২৩তম বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে। কাউন্সিলে পিসিপি’র নতুন থানা কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
আজ ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ লংগদু উপজেলার বগাচতর এলাকায় সম্মেলন ও কাউন্সিলের আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পিসিপির লংগদু থানার শাখার বিদায়ী কমিটির সভাপতি দয়াল কান্তি চাকমা এবং সঞ্চালনা করেন একই কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুদীর্ঘ চাকমা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির লংগদু থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক মনি শংকর চাকমা এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি থোয়াই ক্যাজাই চাক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা, রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক টিকেল চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির লংগদু থানা শাখার ভূমি বিষয়ক সম্পাদক বিনয় প্রসাদ কার্বারী, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির লংগদু থানা শাখার সভাপতি তপন জ্যোতি চাকমা ও অধিকার কর্মী নান্টু চাকমা।
এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিদায়ী কমিটির লংগদু থানা শাখার সদস্য রিন্তু মনি চাকমা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মনি শংকর চাকমা বলেন, ১৯৮৯ সালের লংগদু গণহত্যার প্রতিবাদের মধ্যদিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের জন্ম। যার প্রেক্ষিতে লংগদু’র সম্মানকে অক্ষুণ্ণ রাখতে হলে লংগদু’র ছাত্র ও যুব সমাজকে আরো বেগবান হতে হবে, আরো সংগ্রামী হতে হবে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা দেশের সার্বিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। এই সংকটের মুহূর্তে ছাত্র ও যুব সমাজকে সঠিক আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পিসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি থোয়াই ক্যাজাই চাক সরকারের বর্তমান চুক্তি বিরোধী কার্যক্রমের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই সরকার চুক্তি বিরোধী বিভিন্ন দল-উপদল সৃষ্টি করে দিয়ে জুম্ম দিয়ে জুম্ম হত্যার মত হীন ষড়যন্ত্র শুরু করে এবং এখনও চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, শাসকগোষ্ঠী সর্বশেষ তাদের নিজেদেরই তাঁবেদারি সংগঠনে জঙ্গির সম্পৃক্ততা দেখিয়ে জুম্ম জনগণকে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করে সেনা শাসনকে বৈধতা দেওয়ার এক গভীর ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে, যা কখনো কারোর জন্য শুভফল বয়ে আনবে না।
রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক টিকেল চাকমা বলেন, শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়নের নামে জুম্মদের নিজেদের ভিটে মাটি থেকে উচ্ছেদ করে তাদের জায়গার উপর পর্যটন সৃষ্টি করে ধ্বংসের পাঁয়তারা চালাছে। বৃহত্তর জুম্ম অধ্যূষিত অঞ্চল বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকে প্রাথমিক, নিম্ন-মাধ্যমিক কিংবা মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন, কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ না করে সরকার সেখানে মসজিদ নির্মাণ করেছে। তিনি এটিকে অমুসলিম অধ্যূষিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম অধ্যূষিত অঞ্চলে পরিণত করার একটি গভীর ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেএসএস লংগদু থানা শাখার ভূমি বিষয়ক সম্পাদক বিনয় প্রসাদ কার্বারী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন করতে ছাত্র ও যুব সমাজের জনশক্তি ও বাহু শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। ছাত্র ও যুবকেরা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় দর্শন। পৃথিবীতে জাতি হিসেবে বেঁচে থাকতে হলে ব্যক্তিকে বিসর্জন দিতে হবে, পলায়ন মানসিকতা পরিহার করে নিজেদের সম্পদ রক্ষা করার আহবান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধিকার কর্মী নান্টু চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। ফলে সামাজিক কাঠামো ঠিক রাখতে না পারলে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙ্গে পড়বে তাতে কোন সন্দেহ নেই। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশের পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে অর্থনৈতিক উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে এবং শাসকগোষ্ঠীর আগ্রাসন থেকে বাঁচতে হলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিকল্প নেই।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে যুব সমিতির লংগদু থানা শাখার সভাপতি তপন জ্যোতি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্মদের উপর শাসকগোষ্ঠীর চলমান শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে জুম্ম ছাত্র ও তরুণদের দৃপ্ত শপথ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
আলোচনা শেষে রিকেন চাকমাকে সভাপতি, রিন্তু মনি চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক এবং সাধন বিকাশ চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট পিসিপি’র নতুন লংগদু থানা শাখা কমিটি গঠন করা হয়।
নবনির্বাচিত কমিটিকে শপথ পাঠ করান পিসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা।