হিল ভয়েস, ১৭ ডিসেম্বর ২০২২, রাঙ্গামাটি: গত ১৫ ডিসেম্বর ২০২২ রাঙ্গামাটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ক্যাম্পাসে “আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে ছাত্র সমাজ অধিকতর আন্দোলনে সামিল হোন” স্লোগান নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), রাঙ্গামাটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখার ২৬ তম কাউন্সিল ও বার্ষিক শাখা সম্মেলন এবং ছাত্র সমাবেশের মাধ্যমে সমাজবিজ্ঞান, বিজ্ঞান, কলা, বিবিএ ও এইচএসসি অনুষদ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
পিসিপির রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ শাখার সভাপতি সুমন চাকমার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অমরজ্যোতি চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, রাঙ্গামাটি জেলা শাখার ছাত্র ও যুব বিষয়ক সম্পাদক জুয়েল চাকমা। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি, রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা, পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি থোয়াইক্যজাই চাক, পিসিপির রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি মিলন কুসুম তঞ্চঙ্গ্যা এবং হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি ম্রানুসিং মারমা।
আলোচনা সভার শুরুতে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এযাবৎ কালে যারা আত্মবলিদান দিয়েছেন তাদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপির রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ শাখার সদস্য করুন জ্যোতি চাকমা এবং বিদায়ী বক্তব্য রাখেন মিথেন চাকমা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জুয়েল চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস সেই পাকিস্তান আমল থেকে। তখন থেকে ছাত্র সমাজ অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরের আগেও ছাত্র সমাজ ঐক্যবদ্ধ থেকে শাসকগোষ্ঠীর সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করেছে। তিনি আরো বলেন, চুক্তির ২৫টি বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে আবারও ঐক্যবদ্ধ থেকে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। প্রতিরোধ করতে হবে চুক্তি বিরোধী সকল অপশক্তিকে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুমিত্র চাকমা বলেন, একটি জাতিকে এগিয়ে নিতে শিক্ষা হলো প্রধান হাতিয়ার। তাই পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের প্রত্যেক কর্মীকে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সকল অন্ধকারকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে হবে।
থোয়াক্যজাই চাক বলেন, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ করতে গেলে কতগুলো গুণাবলী অর্জন করতে হয়। ত্যাগ, সহমর্মিতা, প্রজ্ঞা, দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ইত্যাদি গুণে গুণান্বিত হয়ে নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে কাজ করতে হয়। ভবিষ্যতে পার্বত্য চট্টগ্রামের যেকোনো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য এবং ত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত হয়ে জাতির ক্রান্তিলগ্নে প্রত্যেক পিসিপি কর্মীকে আরো সংগ্রামী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
মিলন কুসুম তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ এক কঠিন সময় পার করে যাচ্ছে। এ কঠিন সময় একমাত্র ছাত্র সমাজই জয় করতে পারে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা হতে পারে। চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য অধিকতর আন্দোলনের সামিল হওয়ার বিকল্প নেই।
ম্রানুসিং মারমা বলেন, অতীতে পিসিপি শাসকগোষ্ঠীর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গেছে। তেজোদ্দীপ্ত নেতৃত্বে সেই ধারাবাহিকতা এখনো বিদ্যমান। অধিকারের জন্য, বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রামের কোনো বিকল্প নেই।
সম্মেলন শেষে সুমন চাকমাকে সভাপতি, সুনীতি বিকাশ চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক এবং সজল চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ শাখার ২৩ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠিত হয়। এছাড়াও করুন জ্যোতি চাকমাকে আহ্বায়ক এবং বিশ্বজিৎ চাকমাকে সদস্য সচিব করে বিজ্ঞান অনুষদ কমিটি, সচিব চাকমাকে আহ্বায়ক ও জ্ঞান চাকমাকে সদস্য সচিব করে সমাজবিজ্ঞান অনুষদ কমিটি, সুভাস চাকমাকে আহ্বায়ক ও শান্তিপ্রিয় চাকমাকে সদস্য সচিব করে কলা অনুষদ, সজল চাকমাকে আহ্বায়ক ও কপ্পিং চাকমাকে সদস্য সচিব করে এবং রিশন চাকমাকে আহ্বায়ক ও বিপুল তঞ্চঙ্গ্যাকে সদস্য সচিব করে এইচএসসি অনুষদ কমিটি গঠন করা হয়। নবনির্বাচিত বিভিন্ন অনুষদ কমিটিসহ মূল কমিটিকে শপথবাক্য পাঠ করান পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা।