হিল ভয়েস, ২৬ ডিসেম্বর ২০২২, ঢাকা: আজ সোমবার (২৬ ডিসেম্বর ২০২২) বিকেলে সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দ অনতিবিলম্বে গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকারি দলের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি সংখ্যালঘু-আদিবাসী স্বার্থবান্ধব অঙ্গীকারসমূহ বাস্তবায়নের জোর দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, এর ব্যত্যয় হলে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী রাজনৈতিক প্রতারণার শিকার হয়েছে বলে মনে করার সংগত কারণ থাকবে যা আগামী দ্বাদশ সংসদীয় নির্বাচনে নেতিবাচক প্রতিফলন ঘটাতে পারে। এর দায় সংখ্যালঘুরা কোনভাবেই বহন করবে না।
অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এবং ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ঐক্যমোর্চার সমন্বয়ক এ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন কর্মকারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ সভায় অন্যান্যের মধ্যে মতবিনিময় করেন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ সাবেক মন্ত্রী দীলিপ বড়ুয়া, সাবেক সাংসদ ঊষাতন তালুকদার ও সুনীল শুভ রায়, নির্মল রোজারিও, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. নিতীশ দেবনাথ, বিশিষ্ট সাংবাদিক মনোজ কান্তি রায়, লে. কর্ণেল (অব.) নিরঞ্জন ভট্টাচার্য, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক মনোরঞ্জন ঘোষাল, বিশিষ্ট চাটার্ড এ্যাকাউন্টটেন্ট সুনির্মল চৌধুরী, সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চাভুক্ত সংগঠনের পক্ষে অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার, সাগর সাধু ঠাকুর, ড. প্রভাষ চন্দ্র রায়, শংকর সরকার, রাজকুমার দাস, ড. গজেন্দ্র নাথ মাহাতো, সুব্রত হাজরা, হিমাদ্রী শেখর, বিশিষ্ট ছাত্রনেতা অতুলন দাশ ও গৌতম শীল, বিশিষ্ট নারী নেত্রী সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য প্রমুখ।
সংহতি সমাবেশে উপস্থিত থাকতে না পারলেও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান এক বার্তায় সরকারি দলের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের আন্দোলনের একজন অংশীদার হিসেবে নিজেকে উল্লেখ করে বলেন, সরকার প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করায় আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা নিজ ভূমিতে বাংলাদেশে পরবাসী হয়ে আছি। আমরা পার্বত্য চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়নে কথা বললে বিচ্ছিন্নতাবাদী বা রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছি।
শিল্পী কুমার বিশ্বজিত সংহতি সমাবেশের সাথে সম্পূর্ণ একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, চলমান আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছি। ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু-আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অব্যাহত নির্যাতন-নিপীড়ন-বৈষম্য বঞ্চনা অবসানে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ছাড়া বিকল্প কোন পথ খোলা নেই।
কলকাতা থেকে বিশিষ্ট নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার জানিয়েছেন, ঐক্য পরিষদের নেতৃত্বে চলমান সংখ্যালঘু-আদিবাসী ঐক্যমোর্চার আন্দোলনের সাথে আমিও একমত।
বিশিষ্ট কবি নির্মলেন্দু গুণ ও রাজনীতিবিদ অধ্যাপক সুকান্ত দাশ ঐক্যমোর্চার চলমান আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
সভায় এ মর্মে সরকারি দলকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলা হয়, বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দলের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন। এ ইশতেহারে ‘ক্ষুদ্র জাতিস্বত্বা, নৃ-গোষ্ঠী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও অনুন্নত সম্প্রদায় সম্বলিত ৩.২৯ নম্বর অনুচ্ছেদের লক্ষ্য ও পরিকল্পনায় অর্পিত সম্পত্তি সংশোধনী আইন দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকৃত স্বত্তাধিকারীদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সংখ্যালঘু বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জমি, জলাধার ও বন এলাকায় অধিকার সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণসহ ভূমি কমিশনের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্যমূলক সকল প্রকার আইন ও অন্যান্য অন্যায় ব্যবস্থার অবসান, ক্ষুদ্র জাতিস্বত্বা ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের অধিকারের স্বীকৃতি এবং তাদের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও জীবনধারার স্বাতন্ত্র্য সংরক্ষণ ও তাদের সুষম উন্নয়নের জন্যে অগ্রাধিকারভিত্তিক কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস্তবায়ন ইত্যাদি উল্লেখ রয়েছে।
সংখ্যালঘু-আদিবাসী সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং বিশিষ্ট সংখ্যালঘু বিদগ্ধজন এ মর্মে অভিমত ব্যক্ত করেন যে, প্রধানমন্ত্রী যেহেতু এ অঙ্গীকার করেছেন সেহেতু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেই তাঁকে এর বাস্তবায়নে ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যাতে সংখ্যালঘু আদিবাসী জনগোষ্ঠী কোনভাবেই ভাবতে না পারে যে তারা রাজনৈতিকভাবে প্রতারিত হয়েছে। এ ভাবনা যদি অব্যাহত থাকে তবে তা গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় সংকট তৈরী করতে পারে। সংখ্যালঘু নেতৃবৃন্দ অতীতের মত নির্বাচনী খেলায় তাদেরকে যাতে ব্যবহার করা না হয় সে ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
সংহতি সভায় সরকারি দলের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের দাবিতে আগামী ৬ ও ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃত্বাধীন ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চা আহুত রোড মার্চের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ও একাত্মতা প্রকাশ করে সর্বস্তরের জনগণকে এ রোড মার্চে সামিল হবার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, এর পরেও ধারাবাহিকভাবে যেসব কর্মসূচি আসবে তা বাস্তবায়নে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠী ঐক্যবদ্ধ থাকবে।