হিল ভয়েস, ২৯ ডিসেম্বর ২০২২, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলাধীন জুরাছড়ি উপজেলার প্রত্যন্ত মৈদুং ও জুরাছড়ি ইউনিয়নে সেনা অভিযান চলছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সেনা অভিযানে সেনাবাহিনীর সদস্যদের কর্তৃক স্থানীয় জুম্মদের হয়রানি, বাড়িতে তল্লাশিসহ, বিনামূল্যে ইচ্ছেমত জুম্মদের গৃহপালিত গরু, ছাগল, মোরগ-মুরগী ও চাল ভোজন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অপরদিকে সেনা নির্যাতনের ভয়ে গ্রামবাসী অনেকেই তীব্র শীতের মধ্যে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বলে জানা গেছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার দূর্গম্যতার কারণে আরো অনেক খবর পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় অনেক গ্রামবাসী।
জুরাছড়ি উপজেলাধীন বনযোগীছড়া ইউনিয়নে অবস্থিত বনযোগীছড়া সেনা জোনের জোন কম্যান্ডার জুলকিফলী আরমান বিখ্যাতসহ তার আওতাধীন বিভিন্ন সেনা ক্যাম্পের কম্যান্ডারদের নেতৃত্বে এই সেনা অভিযান চলছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ ডিসেম্বর ২০২২ জুরাছড়ি সদর উপজেলার যক্ষাবাজার থেকে ফেরার সময় মৈদুং ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের আমতলা গ্রাম নিবাসী শম্ভু চাকমা (৬৫) নামে এক বয়স্ক ব্যক্তিকে আটক করে সেনাবাহিনী সারারাত তাদের হেফাজতে রেখে পরদিন (২৮ ডিসেম্বর) সকাল ১১:০০ টায় ছেড়ে দেয়।
এরপর গতকাল ২৮ ডিসেম্বর ২০২২ সেনা সদস্যরা অন্তত তিনটি বাড়িতে তল্লাসি চালায় বলে জানা যায়। বাড়িগুলি হল- (১) অমরধন চাকমা (৩০), পীং-পমেশ চাকমা, গ্রাম-মোন আদাম, ৯নং ওয়ার্ড, মৈদুং ইউনিয়ন; (২) বিমোতময় চাকমা (২৫), পীং-সূত্রসেন চাকমা, গ্রাম-মোন আদাম, ৯নং ওয়ার্ড, মৈদুং ইউনিয়ন ও (৩) কালাচোখ্যা চাকমা, পীং-অজ্ঞাত, গ্রাম-বাদলহাট ছড়া, ৬নং ওয়ার্ড, ৩নং মৈদুং ইউনিয়ন।
অপরদিকে একই দিন জোন কম্যান্ডার জুলকিফলী আরমান বিখ্যাত’র উপস্থিতিতেই সেনা সদস্যরা মৈদুং ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বেলতলা এলাকায় বিনামূল্যে ও বিনা অনুমতিতে জনৈক গ্রামবাসীর ৭০/৮০ হাজার টাকা মূল্যের একটি গরু জবাই করে খেয়ে দিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
শুধু তাই নয়, বর্তমানে সেনা সদস্যরা মৈদুং ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের বেলতলা ও আমতলা এলাকায় জুম্মদের বাড়িতে ছাগল, মুরগী, যা সামনে পাচ্ছে তা ইচ্ছেমত বিনা পয়সায় খেয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আরো জানা গেছে, বিগত কয়েকদিন ধরে সেনাবাহিনীর একটি দল মৈদুং ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বেলতলা গ্রামে (১) সত্যবান চাকমা (৫০), পীং-বানু চাকমা, (২) ইন্দ্রবান চাকমা (৫৫), পীং-নাঙ্গা চাকমা, (৩) বিচ্ছে নাগা চাকমা, পীং-গুলচোখ্যা চাকমা ও (৪) পন্দক চাকমা, পীং-গুলমুনি চাকমা নামে চার জনের বাড়িতে অবস্থান করছে। অপরদিকে বাড়ির লোকজন অন্যের বাড়িতে চলে গেছে। এদিকে সেনা সদস্যরা ওই গ্রামবাসীদের বাড়িতে থাকা ধান মেশিনে মাড়াই করে ইচ্ছেমত খেয়ে চলে চলেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, গত ২১ ডিসেম্বর ২০২২ হতে বনযোগীছড়া সেনা জোনের জোন কম্যান্ডার জুলকিফলী আরমান বিখ্যাত এর নেতৃত্বে জুরাছড়ি এলাকায় সন্ত্রাসী খোঁজার নামে সেনাবাহিনীর এই অভিযান শুরু হয়। এতে জোন কম্যান্ডার জুলকিফলী আরমান বিখ্যাতসহ শালবাগান সেনা ক্যাম্পের কম্যান্ডার ক্যাপ্টেন আসিফ, শিলছড়ি সেনা ক্যাম্পের কম্যান্ডার ক্যাপ্টেন আবদুল্লাহ, ফকিরাছড়ি সেনা ক্যাম্পের টুআইসি ও লুলংছড়ি সেনা ক্যাম্পের কম্যান্ডার এর নেতৃত্বে ২০০-২৫০ জন সেনা সদস্য রয়েছেন বলে জানা গেছে। এইসব সেনা সদস্যরা বর্তমানে চারটি দলে বিভক্ত হয়ে মৈদুং ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বেলতলা ও আমতলা এলাকায় দুটি দলে এবং জুরাছড়ি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের জনতা পাড়া ও আজাধোনা এলাকায় দুটি দলে অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।
এদিকে সেনাবাহিনীর এই অভিযানে এবং সেনা সদস্যদের হয়রানি, বাড়ি তল্লাসি, বাড়ির গবাদি পশু ও ধান খেয়ে দেওয়ার খবরে এলাকায় আতঙ্ক ও ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে তীব্র শীতের মধ্যেও অনেক জুম্ম গ্রামবাসী বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আশেপাশের অনেক গ্রাম পুরুষ ও যুবকশূন্য হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।