হিল ভয়েস, ১৬ নভেস্বর ২০২২, বিশেষ প্রতিবেদক: রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি সফরে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর নেতৃত্বে ১১ সদস্যের কূটনৈতিক প্রতিনিধিদলকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আবারো বর্ণবাদী ও বিতর্কিত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বর্তমানে গত ১২ নভেম্বর থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত উক্ত কূটনৈতিক প্রতিনিধিদল রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি সফর করছেন।
সফররত ১১ সদস্যের কূটনৈতিক প্রতিনিধিদলের সদস্যরা হলেন- জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস, ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফেন লিলার, ফাও কান্ট্রি প্রতিনিধি রোবার্ট সিম্পসন, ইউনিসেফ কান্ট্রি প্রতিনিধি শেলদন ইয়েট, ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান চার্লস হোয়াইটলি, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, নরওয়ে রাষ্ট্রদূত স্পেন রিকাটার এসভেন্ডসেন, ইউএনআরসিও’র শান্তি ও উন্নয়ন উপদেষ্টা রেবেকা আড্ডা-ডনটোহ ও ইউএনআরসিও’র শান্তি ও উন্নয়ন এনালাইসিস ফ্লেভি বারটৌলি।
গত ১০ নভেম্বর ২০২২ তারিখে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ১০টি শর্ত সাপেক্ষে কূটনৈতিক প্রতিনিধিদলকে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি সফরে অনুমতি দেয়া হয়।
১০টি শর্তের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাঙ্গামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে কূটনৈতিক প্রতিনিধিদলের বৈঠকে রাঙ্গামাটি জেলার ক্ষমতাসীন দলের এমপি ও ডিসি এবং চাকমা সার্কেল প্রধানের সাথে বৈঠকে রাঙ্গামাটি জেলার ডিসির উপস্থিত থাকার কথা জানানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনসংহতি সমিতির বর্ষীয়ান নেতা ধীর কুমার চাকমা বলেন, আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান একজন প্রতিমন্ত্রী মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি এবং তিনি ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অন্যতম স্বাক্ষরকারী। তার উপর নজরদারি করতেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এধরনের শিষ্টাচার বহির্ভূত নির্দেশনা প্রদান করা হয়, যা সরকারের চুক্তি বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রতিফলন বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
আরেক শর্তে প্রতিনিধিদলকে স্থানীয় উপজাতীয় সম্প্রদায়/প্রতিনিধিদের আর্থিক বা অন্য কোনো ধরনের সহায়তা (গোপনে বা প্রকাশ্যে) প্রদান না করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি সম্পর্কে অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো মন্তব্য না করার পরামর্শ দেয়া হয়।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি বাচ্চু চাকমা বলেন, এর মাধ্যমে সরকারের বর্ণবাদী ও জাতি-বিদ্বেষী নীতিরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। কারণ কেবল জুম্মদের বেলায় শর্তারোপ করা হয়েছে, বাঙালিদের বেলায় কোনো বিধি-নিষেধ নেই। এটা সংবিধানে স্বীকৃত মৌলিক অধিকার এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তির সাথে সাংঘর্ষিক বলে জানান এই তরুণ নেতা।
এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত একজন মধ্য-স্তরের কর্মকর্তাকে এই সফরে সকল দাপ্তরিক বৈঠকে উপস্থিতি রাখা এবং সফররত কূটনৈতিক প্রতিনিধিদলকে কোন ধরনের রুদ্ধদ্বার বৈঠক এবং স্থানীয় সম্প্রদায় বা প্রতিনিধিদের সাথে অনির্ধারিত বৈঠক না করার শর্তারোপ করা হয়।
যদি মাঠ পর্যায় থেকে সেধরনের প্রয়োজীয়নতার রিপোর্ট আসে, তাহলে কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের সফরের অনুমতি যে কোনো সময় অতি স্বল্প নোটিশে প্রত্যাহার করা হবে বলে নোটিশে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত ২৪-২৫ অক্টোবর ২০২২ ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত মিজ উইনি ইস্ট্রুপ পিটারসেন-এর রাঙ্গামাটি ও চট্টগ্রাম সফরকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত পরামর্শ প্রদান করা হয়েছিল।
এর আগে ৭ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে নিরাপত্তা বাহিনীর সুপারিশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পার্বত্য চট্টগ্রামের উপর ১১টি বিধি-নিষেধ জারি করে, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিদেশীদের পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেয়া এবং দেশি-বিদেশি সংস্থা ও ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী জুম্মদের সাথে কথাবার্তা বলার সময় সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি রাখা বাধ্যতামূলক করার নির্দেশনা।
এভাবে আজ আওয়ামীলীগ সরকার আন্তর্জান্তিক সম্প্রদায় তথা বহির্বিশ্ব থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে।