হিল ভয়েস, ৪ নভেম্বর ২০২২, ঢাকা: নতুন ইসলামী জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়া’ ভারি অস্ত্র কিনতে পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন বমপার্টি খ্যাত কুকি–চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টকে (কেএনএফ) ১৭ লাখ টাকা দিয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
আজ শুক্রবার (৪ নভেম্বর) রাজধানী ঢাকার কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) রাত ১১টায় ইসলামী জঙ্গী সংগঠনটির অর্থ বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক ও হিজরত বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কসহ চারজনকে কুমিল্লার লাকসাম থেকে গ্রেফতার করে র্যাব।
তারা হলেন– অর্থ বিষয়ক সমন্বয়ক মুনতাছির আহম্মেদ, ইসমাইল হোসেন, আবদুল কাদের ও হেলাল আহমেদ জাকারিয়া। জাকারিয়া হলেন ইসলামী জঙ্গী সংগঠনের সামরিক শাখার তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তি।
র্যাব জানায়, সংগঠনটির অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান মোশারফ হোসেনের অন্যতম সহযোগী মুনতাছির আহম্মেদ। দুই বছর আগে তিনি সংগঠনে যুক্ত হন।
অর্থবিষয়ক সমন্বয়কের দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি গত ৮–৯ মাসে ভারী অস্ত্র ক্রয়ের জন্য পাহাড়ের সশস্ত্র কেএনএফ’কে ১৭ লাখ টাকা দেন।
সাংগঠনিক প্রয়োজনে তিনি বিভিন্ন সময় রাঙামাটি ও বান্দরবানের দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে যাতায়াত করার কথা জানান। গ্রেপ্তারকৃত ইসমাইল ও আবদুল কাদের হিজরতে (জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশত্যাগ বা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়া) যাওয়া সদস্যদের সার্বিক সমন্বয়ক।
এর আগে ১০ অক্টোবর ঢাকায় র্যাবের সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছিল, জামাতুল আনসার ফিল হিন্দিল শারক্কীয়ার সদস্যদেরকে পার্বত্য এলাকায় বমপার্টি খ্যাত কেএনএফ কর্তৃক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। শারক্কীয়া দুর্গম পাহাড়ে কেএনএফের ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ শিবির স্থাপন করেছে বলে জানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সেনাবাহিনী ও র্যাবের সমন্বয়ে অভিযানের পর ২০ অক্টোবর সাত জঙ্গি এবং বমপার্টির তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারের দাবি করে র্যাব। এ সময় যৌথবাহিনীর সদস্য বমপার্টি ও ইসলামী জঙ্গীদের আস্তানা থেকে দেশীয় তৈরী অস্ত্র উদ্ধার করে বলে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ২০১৭ সালে কার্যক্রম শুরু করে ২০১৯ সালে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়া’ নাম নির্ধারণ করে জঙ্গি সংগঠনটি। এখন পর্যন্ত এই ইসলামী জঙ্গী সংগঠনের ২৬ জনকে আইনের আওতায় নিয়ে আনা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, সেনা–মদদপুষ্ট বমপার্টি খ্যাত কেএনএফের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি এবং চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী বিরোধী সশস্ত্র তৎপরতা শুরু হওয়ার পর থেকে হিল ভয়েস গত এপ্রিল থেকে বমপার্টির উপর কয়েকটি বস্তুনিষ্ঠ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
হিল ভয়েসের প্রকাশিত উল্লেখিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে সেনাবাহিনীর বান্দরবান ব্রিগেড ও রুমা জোন কর্তৃক বমপার্টিকে আশ্রয়–প্রশ্রয় প্রদান, ইসলামী জঙ্গী সংগঠন কর্তৃক বমপার্টিকে পৃষ্টপোষকতা ও মদদ, বমপার্টি ও ইসলামী জঙ্গীদের মধ্যে গোপন চুক্তি সম্পাদন, সেই অনুসারে বমপার্টি সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাদের আস্তানায় ইসলামী জঙ্গীদেরকে আশ্রয় ও সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদান এবং তার বিনিময়ে অস্ত্র ক্রয়, থাকা–খাওয়া, চিকিৎসা ইত্যাদি বাবদ ইসলামী জঙ্গীরা বমপার্টিকে মাসোয়ারা অর্থ সহায়তা প্রদান ইত্যাদি তথ্যাবলী উঠে আসে।
হিল ভয়েসের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন অনুসারে ইসলামী জঙ্গী সংগঠন কর্তৃক বমপার্টিকে মাসে ৩০ লক্ষ টাকা অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে বলে জানা গেছে।