হিল ভয়েস, ২৬ অক্টোবর ২০২২, বান্দরবান: বান্দরবান জেলাধীন লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কর্তৃক ভাড়াতে লোকজন দিয়ে আবারো আদিবাসী ম্রো গ্রামবাসীদের আমগাছ ও গ্রাম বনের জঙ্গল কেটে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আজ (২৬ অক্টোবর) পর্যন্ত রেংয়েন ম্রো কার্বারি পাড়ার গ্রামবাসীদের অন্তত ৫০টি আম গাছ এবং আনুমানিক ২০ একর পরিমাণ গ্রামের বন কেটে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
গ্রামবাসীরা জানান, গত ২৩ অক্টোবর ২০২২ থেকে রাবার কোম্পানির ভাড়াটে লোকজন ম্রো গ্রামবাসীদের জঙ্গল কাটা শুরু করে। আজও সকাল ১০:০০ টার দিকে রাবার কোম্পানির প্রায় ৬০ জন ভাড়াটে লোকজন গ্রামবাসীদের বন কাটা শুরু করে এবং সর্বমোট ২০টি আম গাছ কেটে দেয়।
উল্লেখ্য, গত ২৭ সেপ্টেম্বর পুলিশ উক্ত জায়গায় রাবার কোম্পানি ও গ্রামবাসীদের বিরোধের জের ধরে উভয় পক্ষকে প্রবেশে ১৪৪/৪৫ ধারা মোতাবেক নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু তা সত্ত্বেও গত ২ অক্টোবর রাবার কোম্পানির লোকজন উক্ত স্থানে জঙ্গল কাটে। এর পূর্বে গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাবার কোম্পানির লোকজন রেংয়েন ম্রো কার্বারি পাড়ার বাসিন্দা রেংইয়ুং ম্রো’র প্রায় ৩০০ কলা গাছ কেটে দেয়। গত ৬ সেপ্টেম্বর রাবার কোম্পানির শ্রমিকরা রেংয়েন ম্রো কার্বারি পাড়াবাসীদের পানির উৎস কলাইয়া ঝিরিতে বিষ ঢেলে দিয়ে পাড়াবাসীদের হত্যার চেষ্টা চালায়। গত ১০ আগস্ট রাবার কোম্পানির ভাড়াটে লোকজন রেংয়েন ম্রো কার্বারি পাড়ার নবনির্মিত অশোক বৌদ্ধ বিহারে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও ভাঙচুর চালায়।
আরো উল্লেখ্য যে, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর কর্তৃপক্ষ ভাড়াটে ভূমিদস্যুদের দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে লামার সরই ইউনিয়নের লাংকম ম্রো কার্বারি পাড়া, জয়চন্দ্র ত্রিপুরা কার্বারি পাড়া এবং রেংয়েন ম্রো কার্বারি পাড়ার আদিবাসীদের অবশিষ্ট ৪০০ একর জুমের বাগান এবং ভূমি বেদখল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে দীর্ঘ দিনের অভিযোগ রয়েছে। এই অবস্থায় ম্রো ও ত্রিপুরা জাতিগোষ্ঠী অধ্যুষিত এই তিন আদিবাসী গ্রামের ৩৯টি পরিবারের ২০০ নারী-পুরুষ এখন উচ্ছেদ আতঙ্কে রয়েছেন।
গ্রাসবাসীরা জানান, তাদের গ্রামের প্রায় ৪০০ একর ভূমিতে তারা বংশপরম্পরায় জুমচাষ ও বাগান-বাগিচা করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। কিন্তু ২০১৯ সালে হঠাৎ লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজ নামের একটি কোম্পানি রাবার প্লটের নামে জুম্মদের ঐসব ভূমি দখলে নেয়ার অপচেষ্টা শুরু করে।
ইতোপূর্বে সরই ইউনিয়নের ডলুছড়ি মৌজার নতুন পাড়া, ঢেঁকিছড়া পাড়া ও নোয়া পাড়ায় লামা রাবার ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড ইজারার নামে ১,৬০০ একর জায়গা দখল করে। এর ফলে এলাকার তিনটি গ্রামের শত শত পরিবার ম্রো গ্রামবাসী উচ্ছেদের হুমকির মধ্যে রয়েছে।