হিল ভয়েস, ২ অক্টোবর ২০২২, ঢাকা: লামার সরই ইউনিয়নের তিন পাহাড়ি গ্রামের ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীকে কোনভাবেই কোন হয়রানি করা না হয় এবং অগ্নিকান্ডের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসককে আদেশ দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
বাংলাদেশের আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর মানবাধিকার সংগঠন ‘কাপেং ফাউন্ডেশন’-এর অভিযোগের ভিত্তিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সার্বক্ষণিক সদস্য ও কমিশনের বেঞ্চ-২-এর সভাপতি ড. কামাল উদ্দিন আহমেদের স্বাক্ষরে গত ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে এই আদেশনামা জারি করা হয়। কিন্তু এই আদেশ জারির পরও স্থানীয় ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর উপর একের পর এক হয়রানি অব্যাহত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী তিন গ্রামের অধিবাসীরা।
আদেশনামায় বলা হয় যে, গত ২৬ এপ্রিল ২০২২ তারিখে সংঘটিত বান্দরবানের লামা উপজেলা লংকম কারবারি পাড়া, রেংয়েন কারবারি পাড়া ও জয়চন্দ্র ত্রিপুরা কারবারি পাড়ার প্রায় ৩৫০ একর জুমচাষের প্রাকৃতিক বন পুড়িয়ে দেয়া, পানির ঝর্ণা বিনষ্ট করা এবং পরবর্তীতে এর ফলে সৃষ্ট খাদ্য ও সুপেয় পানির অভাবে তিনটি গ্রামের মানুষের অত্যাধিক কষ্টে জীবন যাপনের বিষয়ে কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। খাদ্য সংকটের কারণে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কিছু মানুষ লতাগুল্ম খেয়ে রয়েছেন বলেও জানা যায়।
উক্ত প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয় যে, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড দীর্ঘদিন থেকে উক্ত এলাকার ম্রো এবং ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদের চেষ্টা করছে। এছাড়া স্থানীয়দের নামে বিভিন্ন সময় মামলা দিয়ে দেশ ছাড়া করা হচ্ছে মর্মেও উল্লেখ রয়েছে।
জুম চাষের জমি পোড়ানো এবং এর কারণে স্থানীয়দের খাদ্য ও সুপেয় পানির অভাব সৃষ্টি তথা একটি জনগোষ্ঠতে জীবন ও জীবিকার সংকট সৃষ্টি করা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন এবং এ বিষয়ে অতি দ্রুততার সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী মর্মে কমিশন মনে করে।
স্থানীয় ত্রাণ বিতরণ হচ্ছে মর্মে অবহিত হলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলেই প্রতীয়মান হয়। ক্ষতিগ্রস্ত সকল পরিবারকে পর্যাপ্ত খাদ্য ও পানি এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে গৃহ নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের জন্য দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে আদেশ দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে কোনভাবেই কোন হয়রানি করা না হয় এবং অগ্নিকান্ডের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সচিবকে আদেশ দেয়া হয়েছে।
একই সাথে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভবিষ্যতে যাতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোন সমস্যা না হয় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভুক্তভোগীরা যাতে কোন হয়রানি শিকার না হয় সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বান্দরবান পার্বত্য জেলার পুলিশ সুপারকে আদেশ দেয়া হয়েছে।
অধিকন্তু উক্ত ঘটনার বিষয়ে সার্বিক তদন্তপূর্বক প্রকৃত অবস্থা প্রতিবেদন আকারে কমিশনের নিকট দাখিলের জন্য বান্দরবান জেলা প্রশাসককে এবং বিষয়টি সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদেশের অনুলিপি বিভাগীয় কমিশনার চট্টগ্রামকে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আদেশনামায় আরো বলা হয় যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়-২ অধিশাখা থেকে ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, কমিশনের আদেশের প্রেক্ষিতে স্থানীয় জনগোষ্টিকে যাতে কোনভাবেই হয়রানি করা না হয় এবং অগ্নিকান্ডের ঘটনায় জাড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং বান্দরবান জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করা হয়েছে।
তিন গ্রামের ম্রো ও ত্রিপুরা অধিবাসীরা অভিযোগ করেন যে, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং বান্দরবান জেলা প্রশাসককে ১১ সেপ্টেম্বর নির্দেশ দেয়া হলেও তার পরবর্তীতে ২৪ সেপ্টেম্বর পাহাড়িদের কলাগাছ কেটে দেওয়া হয়েছে, ২৫ সেপ্টেম্বর পুলিশের সহায়তায় পাহাড়িদের স্কুল নির্মাণে বাধা দেয়া হয়েছে, এবং সর্বশেষ ২৬ সেপ্টেম্বর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ রাবার বোর্ড কর্তৃক পাহাড়িদের স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।