হিল ভয়েস, ১২ অক্টোবর ২০২২, রাঙ্গামাটি: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক রাঙ্গামাটি জেলাধীন বরকল উপজেলার সুবলং-এ একটি বৌদ্ধ বিহারে এবং রাজস্থলী উপজেলার গাইন্দ্যা ইউনিয়নে তিনটি জুম্ম গ্রামবাসীর বাড়িতে ব্যাপক তল্লাসি, জিনিসপত্র ভাঙচুর ও লোকজনকে হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল ১১ অক্টোবর ২০২২ সকালের দিকে সেনাবাহিনীর পৃথক দুটি অভিযানে এই তল্লাসি, ভাঙচুর ও লোকজনকে হয়রানি করার ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকালের দিকে বরকল উপজেলাধীন সুবলং ইউনিয়নের বাঘাছোলা জ্ঞানোদয় বৌদ্ধ বিহারে বিভিন্ন এলাকার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী জনগণের অংশগ্রহণে কঠিন চীবর দানোৎসব চলছিল। এমন সময় রাঙ্গামাটি সেনা জোনের কম্যান্ডার লেঃ কর্নেল আতিকুর রহমান ও সুবলং সেনা সাব-জোনের কম্যান্ডার ক্যাপ্টেন আওয়াল এর নেতৃত্বে প্রায় ১২০ জনের একটি সেনাদল উক্ত বৌদ্ধ বিহারে আসে এবং বিহারটিকে চতুর্দিক থেকে ঘেরাও করে বিহারের ভিতর ও বাইরে তল্লাসি চালায়।
ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে সেনাবাহিনীর এমন মারমুখী আচরণে উপস্থিত পূর্ণার্থী জনগণ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে সেনাদলটি অনুষ্ঠানস্থল থেকে সুজল চাকমা (২৬), পীং-মৃত দীনবন্ধু চাকমা, গ্রাম-নন্যাছড়া, সুবলং ও জীবন চাকমা (২৪), পীং-শান্তি কুমার চাকমা, গ্রাম-ঐ নামে দুই ব্যক্তিকে আলাদা স্থানে ধরে নিয়ে গিয়ে সাময়িকভাবে আটকাবস্থায় রাখে এবং নানা প্রশ্ন করে মানসিকভাবে নিপীড়ন চালায়।
তবে পরে উক্ত গ্রামবাসীদের ছেড়ে দিয়ে সেনাদলটি সেখান থেকে চলে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উক্ত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, সেনাবাহিনী ইচ্ছে করে এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জুম্মদের হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের জন্য এ ধরনের অযৌক্তিক কর্মকান্ড চালিয়ে থাকে। এটা সেনাবাহিনীর ধর্মীয় পরিহানি ও ধর্মীয় কর্মকান্ডে বাধা সৃষ্টি ছাড়া আর কিছু নয়।
অপরদিকে, একই দিন সকাল আনুমানিক ৯:০০ টার দিকে রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গাল হালিয়া সেনা ক্যাম্পের একদল সেনা সদস্য গাইন্দ্যা ইউনিয়নের তিন জুম্ম গ্রামবাসীর বাড়িতে তল্লাসি চালিয়ে বাড়ির জিনিসপত্র তছনছ ও ভাঙচুর করে, কাপড়-চোপড় পুড়িয়ে দেয় এবং টাকাও ছিনিয়ে দেয়।
ভুক্তভোগী গ্রামবাসীরা হলেন- (১) অক্রাপুং মারমা (৪২), স্বামী-সুইনুমং মারমা, পেশা-কৃষি, গ্রাম-ক্রংসাংগং পাড়া, ৯নং ওয়ার্ড, গাইন্দ্যা ইউনিয়ন, (২) সুইসাচিং মারমা (৪২), পীং-মৃত থোয়াইসাপ্রু মারমা, পেশা-দিন মজুর, গ্রাম-ঐ ও (৩) হ্লাসুইউ মারমা (৬৪), পীং-মৃত সাগ্যউ মারমা, গ্রাম-ঐ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সেনা সদস্যরা প্রথমে অক্রাপুং মারমা’র বাড়িতে জোরপূর্বক প্রবেশ করে বাড়ির হাড়ি-পাতিল, থালা-বাসন ও আলমিরা ভেঙে দেয়, কাপড়-চোপড় পুড়িয়ে দেয়। এছাড়া সেনা সদস্যরা বাড়িতে পাওয়া ২০,০০০ টাকাও ছিনিয়ে নেয়। এরপর সেনা সদস্যরা সুইসাচিং মারমা ও হ্লাসুইউ মারমা’র বাড়িতে দরজা ভেঙে প্রবেশ করে বাড়ির জিনিসপত্র ও কাপড়চোপড় তছনছ করে দেয়।