হিল ভয়েস, ৫ অক্টোবর ২০২২, বিশেষ প্রতিবেদক: গতকাল (৪ অক্টোবর) থেকে রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার রেংখ্যং (রাইংখ্যং) উপত্যকা এবং বান্দরবান জেলার রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় ব্যাপক সেনা অভিযান শুরু করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। প্রতিটি সেনা দলের সাথে সেনা-মদদপুষ্ট বম পার্টি সশস্ত্র সন্ত্রাসী সদস্যও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ফলে ঐ এলাকায় সেনাবাহিনী কর্তৃক মানবাধিকার লংঘনের আশঙ্কায় সাধারণ আদিবাসী জুম্ম জনগণের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল থেকে ৩২ পদাতিক রেজিমেন্টের (বীর) রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি সেনা জোনের একটি দল এবং ২৮ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বান্দরবান জেলার রুমা সেনা জোনের আরেকটি সেনা দল পৃথকভাবে বিলাইছড়ির রেংখ্যং উপত্যকা এবং রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলার কয়েকটি এলাকায় সেনা অভিযান শুরু করে।
৩২ বীর-এর কম্যান্ডিং অফিসার লেঃ কর্নেল আহসান হাবীব রাজীব (পিপিএম, পিএসসি) এর নেতৃত্বে ১০০ জনের একটি সেনা দল বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নের তাঙখুইতাং, বৈরাক্যাছড়া, রাইমংছড়া, শিলছড়ি ও নোয়াদাম ইত্যাদি এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে এই দলটি ৩০/৪০ জন শ্রমিক নিয়ে তাঙখুইতাং সেনা ক্যাম্প থেকে শুরু করে রেংখ্যং নদীর তীরে অবস্থিত রাইমংছড়ার দিকে অগ্রসর হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
অপরদিকে রুমা সেনা জোন থেকে প্রায় ২০০ জনের একটি সেনা দল অভিযানে বের হয়েছে বলে জানা গেছে। সেনাবাহিনীর এই দলটি বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নের বড়থলি, ধুপপানিছড়া এবং রুমা উপজেলার আর্থাপাড়া, মুলফিপাড়া, সুনসংপাড়া ও রোয়াংছড়ি উপজেলার রোনিনপাড়া এলাকায় অভিযান চালাতে পারে বলে জানা গেছে।
এছাড়া বড়থলিপাড়া সেনা ক্যাম্প থেকে ৩০/৪০ জনের একটি সেনা দল রাখ্যাংগি উপত্যাকার গঙ্গাছড়ার দিকে অগ্রসর হয়েছে বলে জানা গেছে।
আরো জানা গেছে, লেঃ কর্নেল মাহমুদুল হাসান (পিএসসি) এর নেতৃত্বে বান্দরবান সেনা জোনের ৫ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৮০-১০০ জনের একটি সেনা দল তারাছা নালা হয়ে রেংখ্যং উপত্যকার বৈরাক্যাছড়া গ্রামের দিকে অগ্রসর হয়েছে।
অপরদিকে রুমা সেনা জোনের কম্যান্ডার লেঃ কর্নেল হাসান শাহরিয়ার ইকবাল এর নেতৃত্বে ৭০ জনের একটি সেনা দল একাধিক দলে বিভক্ত হয়ে রেংখ্যং উপত্যকার গঙ্গাছড়া গ্রামের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে যে, সেনা অভিযানকারী প্রতিটি সেনা দলের সাথে সেনা-মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী বম পার্টি খ্যাত কুকি-চিন বাহিনীর প্রায় ৫-৭ জন সশস্ত্র সদস্যকেও পথপ্রদর্শক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও গঙ্গাছড়া ও রাইমংছড়া’র মধ্যবর্তী এলাকায় সশস্ত্র বম পার্টির সদস্যদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বান্দরবানের এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বস্তুত এটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বম পার্টির বিভিন্ন এলাকায় যৌথ সামরিক অভিযান।
তিনি বলেন, আমাদের সন্দেহ সেনাবাহিনীর দলের সাথে ইসলামী জঙ্গী গোষ্ঠীর সদস্যরাও রয়েছে। রেংখ্যং, রুমা ও রোয়াংছড়ির প্রত্যন্ত এলাকা থেকে সাধারণ জুম্ম জনগণকে ভয়ভীতি দেখিয়ে, দমন-পীড়ন চালিয়ে উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সেনাবাহিনী এই অভিযান পরিচালনা করছে।
তিনি বলেন, উক্ত এলাকাগুলো এখন সাধারণ জুম্ম জনগণের জন্য ভয়ানক ও আতঙ্কজনক হয়ে উঠেছে।