হিল ভয়েস, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, বান্দরবান: বান্দরবানের লামায় রাবার কোম্পানি কর্তৃক আদিবাসী ম্রো ও ত্রিপুরাদের ভোগদখলীয় চারশত একর ভূমি বেদখলসহ ঝিরিতে কীটনাশক ছিটানোর প্রতিবাদে বান্দরবান পার্বত্য জেলা তরুণ সমাজের পক্ষ থেকে এক মানববন্ধন আয়োজন করা হয়েছে।
আজ ১৩ই সেপ্টেম্বর সকাল ৯.৩০ ঘটিকায় বান্দরবান প্রেস ক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন আয়োজন করে বান্দরবানের তরুণ সমাজ।
বিএমএসসি বান্দরবান জেলা শাখার সভাপতি অংচিংউ মারমার সভাপতিত্বে ও সদস্য থোয়াইঅং মারমার সঞ্চালনায় মানববন্ধনের আলোচনায় সংহতি বক্তব্য রাখেন এডভোকেট উবাথোয়াই মার্মা, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, বান্দরবান জেলার সভাপতি থোয়াইক্যজাই চাক, বাংলাদেশ তঞ্চঙ্গ্যা স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার ফোরাম, বান্দরবান জেলার সাধারণ সম্পাদক বিটন তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম , বান্দরবান জেলার সদস্য সুরেশ ত্রিপুরা এবং প্রমুখ।
সংহতি বক্তব্যে এডভোকেট উবাথোয়াই মার্মা বলেন, আজকে বান্দরবান জেলার বাসিন্দা হিসেবে কি পরিমাণ নদী-নালা, ঝিড়ি-ঝর্ণার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে পারি। আজকে লামায় সরই ইউনিয়নের ম্রো ও ত্রিপুরাসহ ঝিড়িতে থাকা বিভিন্ন প্রাণীরকুলের জীবন হুমকির মুখে। একজন মানুষ হিসেবে প্রাণ প্রকৃতির রক্ষার তাগিদে মানববন্ধনে উপস্থিত হয়েছি। এছাড়া আরও বলেন ঝিড়ি-ঝর্ণার প্রাণকৃতির এবং ভুক্তভোগি এলাকার বাসিন্দাদের জীবনের ঝুঁকির জন্য যাদের মদদে এবং প্রত্যক্ষভাবে দায়ি তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থার দাবি জানান।
সংহতি বক্তব্যে সুরেশ ত্রিপুরা বলেন, ত্রিপুরা ও ম্রো পাড়ায় যে ভূমি বেদখল হচ্ছে তা কোনভাবে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।
বিটন তঞ্চঙ্গ্যা সংহতি বক্তব্যে বলেন, লামায় সরই ইউনিয়নের রাবার কোম্পানি কর্তৃক যে প্রতিনিয়ত সহিংসতা ঘটনা নিন্দা জানাই আর একই সাথে ঝিড়িতে কীটনাশক ছিটানোর কাজে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, বান্দরবান জেলা শাখার সভাপতি থোয়াইক্যজাই চাক বলেন, লামায় ভূমি বেদখলসহ কীটনাশক ছিটানোর কারণে শুধুমাত্র ঐ এলাকায় বাসিন্দাদের জীবনের ঝুঁকি বাড়ায়নি সাথে ঝিড়ি ঝর্ণাতে থাকা কাকড়া, চিংড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রাণী মারা গেছে। এই সবকিছু পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়ন না করার কারণে হচ্ছে । আজকে পার্বত্য চুক্তি যদি বাস্তবায়ন করা হতো তাহলে আজকের এই সমস্যাটা হতো না। পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি নিষ্পত্তি কমিশন আইন প্রণয়ন করা হলেও বিধিমালা প্রণয়নের সরকারের অনীহা স্পষ্ট, যার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের এখনও পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। যার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি সমস্যা ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চুক্তির শুধুমাত্র পাহাড়ের আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের জন্য নয়, চুক্তিতে স্পষ্ট দেওয়া আছে যে স্থানীয় বাঙালিদের অধিকারের কথা কিন্তু কুচক্রীরা এই মর্মে অপপ্রচার করেন যে, পার্বত্য চুক্তির শুধুমাত্র পাহাড়ি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য এই ভুল ধারণাটাকে ভেঙ্গে ফেলা উচিত।
তিনি আরও বলেন, আজকে লামায় আদিবাসী ভাই বোনদের প্রতি যে অন্যায় অবিচার করা হচ্ছে তা প্রশাসন সুরাহার পদক্ষেপ নেয়নি। তাই রাবার কোম্পানি কর্তৃক যে শোষণ চলছে সেগুলোকে যথাযথভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করে সুষ্ঠভাবে তদন্ত মারফত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসন ও সরকারকে উদ্বাত্ত আহবান জানান।
উল্লেখ্য, বান্দরবানের লামার সরই ইউনিয়নের ৩০৩নং ডলুছড়ি মৌজায় ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীরা বংশপরম্পরায় তিন গ্রামবাসি লাংকম ম্রো পাড়া, জয়চন্দ্র ত্রিপুরা এবং রেংয়েন ম্রো কারবারি পাড়ায় মোট ঊনচল্লিশ পরিবার ভোগদখল করে আসছে। গত ৯ই এপ্রিল ২২ সালের লামা রাবার ইনডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন,প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম গং ২০০ জনের অধিক ভাড়াটে ভূমিদস্যু নিয়ে স্থানীয় ভূমিজ সন্তান তিন গ্রামবাসিদের ৪০০ একর জমির বেদখলের চেষ্টা করে।