হিল ভয়েস, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, রাঙ্গামাটি: বান্দরবানের লামায় রাবার কোম্পানি কর্তৃক আদিবাসী ম্রো ও ত্রিপুরাদের ভোগদখলীয় ৪০০ এক ভূমি বেদখলের প্রতিবাদে এবং রাবার কোম্পানির ভূমি লীজ বাতিল ও বেদখলকারী ভূমিদস্যুদের শাস্তির দাবিসহ ৫ দফা দাবিতে জুম্ম ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে রাঙ্গামাটিতে এক মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছে।
আজ (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০:০০ টায় রাঙ্গামাটি ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম সচেতন জুম্ম ছাত্র সমাজ।
মেনন চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনের আলোচনায় লিখিত বিবৃতি পাঠ করেন রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী প্রেনঙি ম্রো। এতে আরো সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) সভাপতি সুমন মারমা, সাংগঠনিক সম্পাদক জগদীশ চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা প্রমুখ। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী উমংসিং মারমা।
সংহতির বক্তব্যে পিসিপির সভাপতি সুমন মারমা বলেন, আজকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ভূমি বেদখলের ঘটনা একের পর এক বৃদ্ধি পেতে চলেছে। লামায় রাবার বাগান কোম্পানি কর্তৃক ম্রো ও ত্রিপুরাদের ৪০০ একর জমি জবরদখলের ঘটনা নতুন কোন ঘটনা নয়। বান্দরবানে এর আগেও ৬৪ হাজার একরের অধিক জমি জবরদখল করেছে বিভিন্ন গ্রুপ, প্রকল্প ও কোম্পানি। যারা এই ভূমি বেদখলের সাথে রয়েছে তাদের হাত অনেক লম্বা। প্রশাসনের ছত্রছায়ায় ভূমি বেদখলদাররা কীভাবে জমি লীজ পায় তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন সুমন মারমা। ভূমি কমিশন আইন গেজেট হতে ষোল বছর লেগেছে বলেও তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তিনি আরো বলেন, ভূমি কমিশন হলেও কমিশন কীভাবে কাজ করবে তার বিধিমালা এখনও প্রণয়ন করেনি সরকার। জনবল ছাড়া কমিশন চলছে আর কমিশনকে অথর্ব করে রাখা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
পিসিপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক জগদীশ চাকমা সংহতি জানিয়ে বলেন, ভূমি কমিশনের বিরুদ্ধে যারা আজকে ষড়যন্ত্র করছে তারা চুক্তি বিরোধী এবং এই এলাকার শান্তি বিনষ্টকারী। হরতাল দিয়ে একটি মহল পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করার চেষ্টা চালাচ্ছে। লামায় রাবার বাগান কোম্পানি তিনটি গ্রামের ম্রো ও ত্রিপুরাদের উচ্ছেদের লীলাখেলায় মেতে উঠেছে। সেই ভূমি দস্যুদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
সংহতি বক্তব্যে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, লামায় যে ঘটনাটি ঘটেছে তার কোন যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন। কীটনাশক ছিটানো ও জুমে অগ্নিসংযোগ করায় সেখানকার পরিবেশ বিপর্যয় ঘটেছে। রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কোম্পানি কর্তৃক ৪০০ একরের জমি বেদখলের চেষ্টা এবং উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র প্রশাসন কোনভাবে দায় এড়াতে পারে না।
মানববন্ধনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী উমংসিং মারমা বলেন, লামায় রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড পাহাড়ি ঝিরিতে কীটনাশক ছিটিয়ে জলজ প্রাণি ও মানুষের খাবার পানিকে বিষাক্ত করে তুলে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। এটা কোনভাবে কাম্য ছিল না। তিনি আরও বলেন, আমরা পাহাড়ে শান্তি চাই। লামায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী প্রেনঙি ম্রো তার লিখিত বিবৃতিতে মানববন্ধনের ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে সরকার ও প্রশাসনের উদ্দেশ্যে নিম্নোক্ত ৫ দফা দাবি উপস্থাপন করেন-
১. অবিলম্বে রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজ মালিকদের অবৈধ লীজ বাতিল করতে হবে।
২. জুম ভূমিতে অগ্নিসংযোগকারী ও ঝিরিতে কীটনাশক ছিটানোকারীদের যথাযথ শাস্তি প্রদান করতে হবে।
৩. ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদেরকে যথাযথভাবে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৪. ভূমি সমস্যা নিরসনের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন দ্রুত কার্যকর এবং বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
৫. পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
উল্লেখ্য, বান্দরবানে লামার সরই ইউনিয়নের ৩০৩ নং ডলুছড়ি মৌজায় ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী বংশপরম্পরায় তিন গ্রামবাসী লাংকম ম্রো পাড়া, জয় চন্দ্র ত্রিপুরা পাড়া ও রেংয়েন ম্রো পাড়ার মোট ৩৯ পরিবার জমি ভোগ দখল করে আসছে। গত ৯ এপ্রিল ২০২২ লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন, প্রকল্প পরিচালক মো. কামাল উদ্দিন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম গং ২০০ জনের অধিক ভাড়াটে ভূমিদস্যু নিয়ে স্থানীয় ভূমিজ সন্তান তিন গ্রামবাসীদের জমি জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা চালায় এবং ফলজ বাগান কেটে সাফ করে ২৬ এপ্রিল সেই বাগানে আগুন দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধন ও পরিবেশ নষ্ট করে এবং ৪০০ একরের জায়গা বেদখল করার চেষ্টা চালাচ্ছে।