হিল ভয়েস, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২, রাঙ্গামাটি: সরকার পার্বত্য চুক্তি লংঘন ও জুম্মদের ভূমির অধিকারকে পদদলিত করে পার্বত্য এলাকায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ক্যাম্প স্থাপন শুরু করেছে।
সম্প্রতি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন লংগদু উপজেলার বগাচতর ইউনিয়নের চিবেরেগা এলাকায় এক বৌদ্ধ বিহার সংলগ্ন জুম্ম গ্রামবাসীদের ভূমি বেদখল করে তাতে একটি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ক্যাম্প স্থাপনের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে স্থানীয় জুম্মদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
এই উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে এপিবিএন ও পুলিশের পক্ষ থেকে একটি দল ঐ এলাকায় গিয়ে সার্ভেয়ার দিয়ে বৌদ্ধ বিহার ও এর আশেপাশের জুম্ম গ্রামবাসীদের জায়গার ভূমি পরিমাপ করেছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় জনগণের আপত্তি সত্ত্বেও এপিবিএন কর্তৃপক্ষ এই পরিমাপ চালায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ দুপুর ১২:০০ টার দিকে এপিবিএন, উত্তরা, ঢাকা এর অতিরিক্ত ডিআইজি এ কে এম মোশারফ হোসেন মিয়াজি, খাগড়াছড়ি এপিবিএন এর বিশেষায়িত ট্রেনিং সেন্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি মীর মোদাচ্ছের হোসেন ও রাঙ্গামাটি জেলার অতিরিক্ত সুপার মোঃ মফিজুর রহমান এর নেতৃত্বে এপিবিএন ও পুলিশের একটি দল সেখানে পরিদর্শন করে। এসময় লংগদু থানার এস আই মোঃ মাজহারুল হকও উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, এসময় এপিবিএন ও পুলিশ কর্মকর্তাগণ ‘চিবেরেগা বৌদ্ধ বিহার’ এলাকা ও তৎসংলগ্ন মাঠটি পরিমাপ করেন। বিহার এলাকার পরিমাপকৃত ভূমির পরিমাণ ২ একর ৭০ ডেসিমেল এবং খেলার মাঠের পরিমাপকৃত ভূমির পরিমাণ ২ একর ৬০ ডেসিমেল হয় বলে জানা যায়।
জানা গেছে, বৌদ্ধ বিহার সংলগ্ন খেলার মাঠ ও তিনজন জুম্ম গ্রামবাসীর ভোগদখলীয় ভূমিতে উক্ত এপিবিএন ক্যাম্প স্থাপন করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগী তিন জুম্ম গ্রামবাসী হচ্ছেন- (১) বিজয় শান্তি চাকমা, পিতা-পুনং চান কার্বারি, (২) রঞ্জন কুমার চাকমা, পিতা-ধেঙা চাকমা এবং (৩) নিরত রঞ্জন চাকমা, পিতা-ভরত কুমার চাকমা। উক্ত জায়গায় এই তিন গ্রামবাসীর বসতবাড়ি রয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, উক্ত জায়গায় এপিবিএন ক্যাম্প স্থাপন করা হলে স্থানীয় বৌদ্ধ বিহারে জনগণের আনাগোনাসহ ধর্মীয় কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে এবং বিহারের পবিত্রতা নষ্ট হবে। এছাড়া বিহারসংলগ্ন ও স্থানীয় জুম্মদের ভূমিতে তৈরি করা মাঠটি এলাকার পাহাড়ি-বাঙালির একমাত্র খেলার মাঠ।
উল্লেখ্য, ১৩ এপ্রিল ২০২২ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার্স থেকে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির ৫ম বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের’ দোহাই দিয়ে “সেনাবাহিনীর প্রত্যাহারকৃত ২৪০টি ক্যাম্পে পর্যায়ক্রমে পুলিশ মোতায়েন করা হবে” মর্মে এক নির্দেশনা জারি করা হয়। “প্রাথমিকভাবে ৩০টি ক্যাম্পে পুলিশ মোতায়েন করা হবে” বলে ঐ নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়।
চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সকল অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার এবং ক্যাম্প ও সেনানিবাস কর্তৃক পরিত্যক্ত জায়গা-জমি প্রকৃত মালিকের নিকট অথবা পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট হস্তান্তর করার বিধান থাকলেও সরকার চুক্তিকে লংঘন করে সম্প্রতি ৩০টি এবিপিএন ক্যাম্প স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে।
পার্বত্য চুক্তিকে পদদলিত করে প্রত্যাহৃত সেনাক্যাম্পের জায়গায় একতরফাভাবে এপিবিএন ক্যাম্প স্থাপনের উদ্দেশ্যে ২৫ মে ২০২২ রাঙ্গামাটিতে উচ্চ পর্যায়ের আইন-শৃঙ্খলা সভা এবং ২৬ মে ২০২২ এপিবিএনের আঞ্চলিক কার্যালয় উদ্বোধন করা হয়।