হিল ভয়েস, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, রাঙ্গামাটি: সাবেক সংসদ সদস্য ও মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার (এম এন লারমা) ৮৩তম জন্মদিবস উপলক্ষে রাঙ্গামাটি শহরের দেবাশীষনগরস্থ ‘এম এন লারমা স্মৃতি গণপাঠাগার’এর উদ্যোগে এক আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪:০০ টায় উক্ত গণপাঠাগারে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পাঠাগারের সভাপতি সাগর ত্রিপুরা এবং সঞ্চালনা করেন সুমন চাকমা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল শাখার সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা এবং প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এম এন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন জনসংহতি সমিতির দেবাশীষনগর গ্রাম কমিটির সভাপতি মিলন চন্দ্র চাকমা। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সচেতন নাগরিক কমিটির রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাবেক সভাপতি অমলেন্দু হাওলাদার, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক কর্মী ও আর্য্যদেব লয়্যাল ক্লাবের উপদেষ্টা ইন্দ্রদত্ত তালুকদার, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, রাঙ্গামাটি জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কুশল চৌধুরী, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ছাত্র ও যুব ঐক্য পরিষদ, রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি দেবাশীষ পালিত, সমাজ সেবক করুণা চাকমা প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, এম এন লারমা শুধু পশ্চাৎপদ পার্বত্য চট্টগ্রামের কথা ভাবেননি, তিনি বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের নিরীহ, শোষিত, বঞ্চিত, মেহনতি মানুষের কথা ভেবেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এম এন লারমা যে অবদান রেখে গেছেন সেটা বলে শেষ করা যাবে না। তাই সবাইকে এম এন লারমার আদর্শকে অনুসরণ করতে হবে।
আলোচনা সভা শেষে শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
উল্লেখ্য, গতকাল ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ ছিল এম এন লারমার ৮৩তম জন্মদিবস। তার জন্ম ১৯৩৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট মৌজার স্বনামখ্যাত মহাপুরম বা মাওরুম গ্রামে।
তিনি ১৯৫৬ সাল থেকে ১৯৬৩ সালের শুরু পর্যন্ত পাহাড়ি ছাত্রদের সম্মেলনে ও সংগঠনে এবং বিভিন্ন আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬১ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও আন্দোলনের উদ্যোগ নেন। ১৯৬৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নিবর্তনমূলক আইনে পুলিশ কর্তৃক চট্টগ্রামের পাথরঘাটাস্থ পাহাড়ি ছাত্রাবাস হতে গ্রেপ্তার হন। দুই বছরের অধিক সময় কারাগারে থাকার পর ১৯৬৫ সালের ৮ মার্চ চট্টগ্রাম কারাগার থেকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি লাভ করেন।
পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তাঁরই নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের নিকট ৪ দফা সম্বলিত আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবিনামা পেশ করা হয়। ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে জুম্মদেরকে ‘বাঙালি’ হিসেবে আখ্যায়িত করার প্রতিবাদে তিনি গণপরিষদ অধিবেশন বর্জন করেন। ১৯৭২ সালে তাঁরই নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি গঠিত হয় এবং তিনি এর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং একই বছর জনসংহতি সমিতির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি বাকশালে যোগদান করেন।
১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট থেকে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। এরপর তাঁর ও তাঁর ভাই সন্তু লারমার নেতৃত্বে জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র শাখা ‘শান্তিবাহিনী’ দিয়ে শুরু হয় সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তিনি ১৯৭৭ সালে জনসংহতি সমিতির প্রথম জাতীয় সম্মেলনে এবং ১৯৮২ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলনে পরপর সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন।
১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর ভোর রাতে বিভেদপন্থী গিরি-প্রকাশ-দেবেন-পলাশ চক্রের বিশ্বাসঘাতকতামূলক অতর্কিত এক আক্রমণে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাধীন পানছড়ি উপজেলার খেদারছড়া থুমে আট সহযোদ্ধাসহ নির্মমভাবে নিহত হন তিনি।