হিল ভয়েস, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২২: আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে বাংলাদেশের হিন্দু–বৌদ্ধ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষার দাবিতে ভারতের রাজধানী দিল্লীর যন্তর মন্তরে আগামী ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ এক বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করতে যাচ্ছে প্রবাসী বঙ্গীয় সমাজ (পিবিএস), দিল্লি-এনসিআর, অল ইন্ডিয়া রিফিউজি ফ্রন্ট (এআইআরএফ), কলকাতা এবং অন্যান্য বাঙালি ও উদ্বাস্তু সংগঠন।
নিম্নে পিবিএস-এর এ কে পাল এবং মোহিত রায় স্বাক্ষরিত সংবাদ বিবরণী দেওয়া হল:
সংবাদ বিবরণী:
অবস্থান প্রতিবাদ, যন্তর মন্তর, নয়াদিল্লি, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাতে হিন্দু বৌদ্ধ সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, তার দাবিতে প্রবাসী বঙ্গীয় সমাজ, দিল্লি-এনসিআর, অল ইন্ডিয়া রিফিউজি ফ্রন্ট, কলকাতা এবং অন্যান্য বাঙালি ও উদ্বাস্তু সংগঠনগুলির উদ্যোগ অবস্থান প্রতিবাদ।
আগামী ৫ সেপ্টেম্বর ভারতে আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয়াদিল্লিতে অবস্থান করবেন। এই সুযোগে আমরা শেখ হাসিনার কাছে আমাদের দাবিগুলো তুলে ধরছি এবং বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু ও বৌদ্ধদের ওপর অব্যাহত অত্যাচার বন্ধে তার ব্যক্তিগত আশ্বাস দাবি করছি।
গত বছর ২০২১ সালের দুর্গা পূজা উৎসবের সময় সারা বাংলাদেশে হিন্দু মন্দির ও সম্প্রদায়ের উপর হামলার প্রায় ২০০টি ঘটনা ঘটেছে। এখন পূজার মৌসুম আসছে এবং এরই মধ্যে দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া গত ছয় মাসে বাংলাদেশে ৭৯ জন হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছে। শুধুমাত্র গত ছয় মাসে হিন্দুদের ওপর ৫০১টি সংঘবদ্ধ হামলা, ৫৬টি মন্দিরে হামলা এবং ৫০টি প্রতিমা চুরির ঘটনা ঘটেছে।
এ ছাড়া বাংলাদেশে ১৩ জন হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যকে ধর্ষণ, ১০ জনকে গণধর্ষণ, ৩ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা, ১৯ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা, ৯৫ জনকে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে, ২১ জনকে ধর্মান্তরের চেষ্টা এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের ঘটনা ঘটেছে ৬৩টি। হিন্দু শিক্ষকদের গলায় জুতার মালা দিয়ে মারধর ও হয়রানি করা হচ্ছে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, সাভারসহ বিভিন্ন স্থানে একের পর এক এধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে।
বাংলাদেশ সরকার শুধু নীরব দর্শক হয়েই রয়ে গেছে। এমনকি বিগত ৫০ বছরে মুসলমানদের দ্বারা সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় পুলিশ কর্তৃক দায়েরকৃত মামলায় কোন দোষী সাব্যস্ত হয়নি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় বৌদ্ধ চাকমা সম্প্রদায়কেও অব্যাহতভাবে হয়রানি, হামলা ও ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আদমশুমারি রিপোর্ট অনুযায়ি হিন্দু জনসংখ্যা মাত্র ৭ শতাংশে নেমে এসেছে ।
আমরা এটাও মনে করি যে, ভারত সরকার বাংলাদেশের হিন্দুদের রক্ষা করার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। যদিও একটি সাধারণ টিভি শোতে একটি মন্তব্য করার কারণে ভারতকে হুমকি দেওয়ার জন্য অনেকগুলি মুসলিম দেশকে সংগঠিত করতে পারে, কিন্তু আমাদের সরকার হিন্দুদের জন্য সেই সাহস দেখায় না।
গত বছর দুর্গাপূজা উৎসবে বিধ্বংসী হামলার সময় ভারত সরকারের প্রতিক্রিয়া ছিল খুবই ক্ষীণ, এমনকি বাংলাদেশ সরকারকে তাদের অস্তিত্বহীন সুরক্ষামূলক পদক্ষেপের জন্য প্রশংসা করে। আমরা আশা করি ভারত সরকার সেই অবস্থান সংশোধন করবে এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার জন্য তার কর্তব্য মনে করিয়ে দেবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে ভারত সরকারের উচিত বাংলাদেশের হিন্দুদের কাছে একটি সহায়ক বার্তা পাঠানো।
আমরা শেখ হাসিনাকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে, হাজার হাজার ভারতীয় সৈন্যের রক্ত এবং ২৫ লাখ বাঙালি হিন্দুর প্রাণে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং, আমরা শ্রদ্ধার সাথে অনুরোধ করছি যে–
১) হিন্দু বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপর সমস্ত অত্যাচার বন্ধ করুন।
২) সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সাথে জড়িত সকল অপরাধীকে গ্রেপ্তার এবং দোষী সাব্যস্ত করুন।
৩) মিথ্যা ব্লাসফেমি মামলার নামে হিন্দুদের হয়রানি বন্ধ করুন।
৪) সমস্ত হিন্দু শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং সমস্ত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করুন।
৫) ইসলামিক ওয়াজ ও মাহফিলে হিন্দু বিরোধী প্রচারণা বন্ধ করুন।
৬) ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করা।
যোগাযোগ: মিঃ এ কে পাল, পিবিএস, দিল্লি – 9811625884 এবং ডাঃ মোহিত রায়, এআইআরএফ, কলকাতা – 9831085215