হিল ভয়েস, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, রাঙ্গামাটি: পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) বলেছেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণে খেলাধুলার ক্ষেত্রে বিকাশের সুযোগ থেকে জুম্ম জনগণ বঞ্চিত হয়ে আছে।
আজ (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫:০০ টার দিকে রাঙ্গামাটির রাঙ্গাপানিতে মাসব্যাপী চলা ড. রামেন্দু শেখর দেওয়ান স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট এর সমাপনী অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণী পর্বে সন্তু লারমা এ কথা বলেন।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। এছাড়া অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল শাখার সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য সাধুরাম ত্রিপুরা মিল্টন, সদস্য চাইথোয়াই মারমা, সদস্য সৌখিন চাকমা, বিশিষ্ট শিল্পী রঞ্জিত দেওয়ান, কাউন্সিলর রবি মোহন চাকমা, বিজয় কুমার চাকমা কার্বারী, শ্যামল মিত্র কার্বারী, সনজিত দেওয়ান, সোনাধন চাকমা, ওয়াশিষ চাকমা, স্বপন কুমার চাকমা, বীরেন্দ্র চাকমা, পলাশ কুসুম চাকমা এবং মোনঘর শিশু সদনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হোবি চাকমাসহ আরো অনেকে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান পরিস্থিতি যদিও খেলাধুলার আয়োজন ও খেলাধুলার ক্ষেত্রে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য অনুকূল নয়। তবুও এই খেলার মধ্যে দিয়ে পার্বত্য অঞ্চলের জনগণ প্রমাণ করেছে যে, খেলাধুলার ক্ষেত্রে তারা কতটুকু আন্তরিক। এই খেলাধুলার মধ্যে দিয়ে নিজেদের জীবনকে বিকশিত করার একটা বাস্তবতা তারা প্রকাশ করেছে।
তিনি বলেন, আমিও ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আমাদের আজকের পার্বত্যাঞ্চলে যে বিশেষ শাসনব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে খেলাধুলার অঙ্গনে বিকাশের সুযোগ থাকার কথা, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে পার্বত্যাঞ্চলের জনগণ সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে আছে। খেলাধুলা শুধু স্বাস্থ্যের জন্য নয়, আমাদের মধ্যকার ঐক্য-সংহতি, আমাদের মধ্যকার জীবনের বিকাশে ভূমিকা রাখে।
তিনি আরো বলেন, আজকে খেলাধুলার ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিটি জেলায় যে পার্বত্য জেলা পরিষদ রয়েছে, সেই জেলা পরিষদের একটি বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আমাদের জেলা পরিষদ এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থা নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় আছে। ক্রীড়া নৈপুণ্য থেকে পার্বত্যাঞ্চলের জনগণকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। ক্রীড়া এটা যুব সমাজেরই একটা অধিকার। এই মৌলিক অধিকার থেকে পার্বত্যাঞ্চলের তরুণ সমাজকে আমরা বঞ্চিত রাখতে পারি না। তাই আজকে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, আসুন আমরা এই পার্বত্যাঞ্চলের বুকে ক্রীড়াঙ্গন বিকাশে একটা বাস্তবতা সৃষ্টি করি। তাই পার্বত্যঞ্চলের যারা নীতিনির্ধারক, পার্বত্যাঞ্চলের উন্নয়নের দায়িত্বে সংশ্লিষ্ট সকলেই মিলে এই ক্ষেত্রটা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, আজকের খেলায় উভয় দলকে আমি অভিনন্দন জানাই। তারা এই সংকীর্ণ খেলার মাঠে যে ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছেন তা পার্বত্য অঞ্চলের ক্রীড়াঙ্গনে তারুণ্যের যে শক্তি সেটা প্রতিফলিত হয়েছে। সেই সাথে বিশেষ বাস্তবতার মধ্য দিয়ে যারা এই টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। এই প্রতিযোগিতা সফলভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে যারা সহযোগিতা দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
ড. রামেন্দু শেখর দেওয়ান এর জীবন সংগ্রাম স্মরণ করে সন্তু লারমা বলেন, তিনি পার্বত্য অঞ্চলের জনমানুষের জন্য তথা সারা বিশ্বের মানবতা রক্ষার জন্য লড়াই সংগ্রাম করে গেছেন, নিজের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন, আমৃত্যু পার্বত্য অঞ্চলের জনমানুষের জন্য তিনি তার ত্যাগ স্বীকার করে গেছেন। তিনি একজন বিপ্লবী, একজন দেশপ্রেমিক এবং তিনি একজন জাতীয়তাবাদী। তিনি তার সমগ্র জীবন লড়াই সংগ্রাম করে গেছেন। আজকে ড. রামেন্দু শেখর দেওয়ানের স্মৃতি উদযাপনের মধ্য দিয়ে আমি তাঁর প্রতি আবার কৃতজ্ঞতা জানাই। শ্রদ্ধা জানাই। পার্বত্য অঞ্চলের জনগণের তথা পার্বত্য অঞ্চলের যে বাস্তবতা, সেই বাস্তবতা থেকে বেড়িয়ে এসে এই অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে তিনি যে অবদান রেখে গেছেন, তা আমি স্মরণ করছি।
ফাইনাল খেলায় ২-০ গোলে খিপ্প্যাপাড়া একাদশকে হারিয়ে পরমাণু এফসি চ্যাম্পিয়ন হয়। ম্যান অব দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হন পরমাণু এফসি’র বুবু মারমা। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন ঋত্বিক ত্রিপুরা। সেরা গোলরক্ষক নির্বাচিত হন উখাই মারমা এবং সেরা গোলদাতা নির্বাচিত হন রাঙ্গাপানি জুনিয়র্সের খেলোয়াড় রিকুমনি চাকমা।