হিল ভয়েস, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলার নান্যাচর উপজেলার ১নং সাবেক্ষ্যং ইউনিয়নের মধ্যআদাম থেকে তিনজন নিরীহ গ্রামবাসীকে সেনা-মদদপুষ্ট সংস্কারপন্থী সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্তৃক অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে যে, গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাত আনুমানিক ৯:০০ টায় ১নং সাবেক্ষ্যং ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মধ্য আদাম নামক স্থান হতে সংস্কারপন্থী (জেএসএস) সশন্ত্র সন্রাসী কর্তৃক তিনজন জুম্ম গ্রামবাসীকে অপহরন হয়েছে।
অপহৃত তিন ব্যক্তিরা হলেন (১) বিদ্যা সাগর চাকমা (৪১), পীং হেমন্ত চাকমা, (২) আশিষ চাকমা (৩২), পীং কালী রতন চাকমা ও (৩) বিনোদ বিহারী চাকমা (৪২), পীং প্রফুল্ল চাকমা।
কি কারণে তাদেরকে অপহরণ করা হবে হয়েছে প্রতিবেশীরা কেউ নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সন্ত্রাসীরা তাদেরকে এখনো ছেড়ে দেয়নি। অপহৃত পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়-স্বজনরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে বলে জানা গেছে।
জীবতলীতে সেনাবাহিনী ও সন্ত্রাসীদের রহস্যজনক তৎপরতা:
সম্প্রতি রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার জীবতলী ইউনিয়নে স্থানীয় সেনাবাহিনী ও তাদের মদদপুষ্ট ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসীদের মধ্যে রহস্যজনক আনাগোনা লক্ষ্য করা গেছে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। এনিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে উদ্বেগেরও সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, গত ১ সেপ্টেম্বর ২০২২ হতে জীবতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পাড়ায় অবস্থানকারী ইউপিএিফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসীরা বরুণ কার্বারির নেতৃত্বে তাদের জনবল বৃদ্ধি করে ৪০/৪৫ জন সদস্য নিয়ে অবস্থান করছে।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, গত ২ সেপ্টেম্বর ২০২২ সকাল আনুমানিক ৯:০০ টার দিকে জীবতলী সেনা ক্যাম্পের একটি সেনাদল চেয়ারম্যান পাড়ায় সন্ত্রাসীদের আস্তানায় আসে। এরপর সকাল আনুমানিক ১০:০০ টার দিকে সেনাদলটি এসকর্ট দিয়ে সন্ত্রাসী দলের সকল সদস্যদের জীবতলী সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যায়।
এরপর জীবতলী সেনা ক্যাম্পে সেনাবাহিনী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসীদের মধ্যে প্রায় দিনব্যাপী এক গোপন বৈঠক হয় বলে জানা যায়। তবে বৈঠকে কি কি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তা জানা যায়নি। এরপর বিকাল ৫:০০ টার দিকে সেনাদলটি আবার এসকর্ট দিয়ে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসীদের তাদের আস্তানায় পৌঁছে দেয় বলে জানা যায়।
সূত্রটি আরও জানায়, ঐদিন থেকে প্রায় নিয়মিত সেনা সদস্যরা রাত ৯:০০ টার দিকে স্পীডবোট নিয়ে চেয়ারম্যান পাড়ায় সন্ত্রাসীদের আস্তানায় যায় এবং এরপর ২৫/৩০ জন সন্ত্রাসী সদস্যের একটি দলকে অজ্ঞাত স্থানে যায়। তবে সেনাসদস্যরা সন্ত্রাসী দলটি কোথায় এবং কেন নিয়ে যায় তা জানা যায়নি।
উল্লেখ্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা, চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনরত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতৃত্ব ধ্বংস করা, সর্বোপরি চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের পরিবর্তে বর্তমান সরকার কর্তৃক সামরিক উপায়ে দমন-পীড়নের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের স্বৈরাচারী নীতি গ্রহণের ফলে উদ্ভূত পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে সেনাবাহিনী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই, ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ও প্রশাসন সংস্কারপন্থী জেএসএসসহ প্রসিত নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ, ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক), মগপার্টি খ্যাত এমএনপি, বম পার্টি খ্যাত কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট, শামীম মাহফুজের নেতৃত্বাধীন জামায়াতে আরাকান, আরএসও, আরসা প্রভৃতি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদ দিয়ে চলেছে।